মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়তিই রাখছে বাংলাদেশ ব্যাংক

ব্যাংক থেকে একদিনে তোলা যাবে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

বাংলাদেশ ব্যাংক আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে কঠোর মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, মুদ্রানীতির প্রধান হাতিয়ার নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখতে পারে কর্তৃপক্ষ। কারণ এটির বাড়ানোর তেমন সুযোগ নেই।

তারা জানিয়েছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ২০২২ সালের মে মাস থেকে এ পর্যন্ত নীতি সুদহার বা পলিসি রেট বা রেপো রেট ৯ বার বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে নীতি সুদহার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়া ও করোনা মহামারির দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন উত্তরণের পথ খুঁজছিল তখন থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা যুক্তি দেখান, যদি এই হার আরও বাড়ানো হয়, তাহলে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কারণ ইতোমধ্যে ঋণের সুদহার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। তাই আরও বাড়লে বিনিয়োগ কমবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটি ১৪ জুলাই মুদ্রানীতি বিবৃতি (এমপিএস) চূড়ান্ত করেছে। পরে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

একটি সূত্র জানিয়েছে, সভায় বোর্ড অর্থনীতির চলমান চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করেছে। বিশেষ করে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১১-১২ অর্থবছরের পর সর্বোচ্চ। এছাড়া ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি সরকারের নির্ধারিত ৭ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।

এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় বছর ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) ৯ শতাংশ অতিক্রম করল।

এর অর্থ হলো, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলম্বে বেশ কিছু উদ্যোগ নিলেও তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজে আসেনি।

সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। অবশ্য অর্থবছর শুরুর মাসে অর্থাৎ জুলাইয়ে তা কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, জুনে ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, কঠোর মুদ্রানীতি সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করবে।

মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে নতুন মুদ্রানীতিতে নীতি হার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয় বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর সুপারিশ করেছে আইএমএফ।

তবে বৈঠক সূত্র জানায়, মুদ্রানীতি কমিটি সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রবণতা পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে- ঋণের সুদের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা বিনিয়োগ ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

বৈঠকে বোর্ড সদস্যরা আলোচনা করেন, নীতি সুদহার বাড়ানোই মূল্যস্ফীতি কমানোর একমাত্র হাতিয়ার নয়। আর্থিক নীতি ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতিও গুরুত্বপূর্ণ।

সম্প্রতি পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, নীতি সুদহার ১০ শতাংশ করতে হবে।

আসন্ন মুদ্রানীতিতেও সরকারের নির্ধারিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে মনোনিবেশ করার পরিকল্পনা আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাব বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

তবে সরকারের লক্ষ্যমাত্রারভিত্তিতে চলতি অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অস্থিরতা কিছুটা কমায় নতুন অর্থবছরেও বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি বহাল থাকবে।

বিনিময় হারকে বাজারভিত্তিক করতে আইএমএফের পরামর্শে এ বছরের মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার গতানুগতিক রীতি থেকে সরে এসে মুদ্রানীতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Thousands of crores of taka of citizens wasted on unnecessary projects: commerce adviser

The adviser, however, added that liabilities of foreign-funded projects should still be repaid

42m ago