মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে ব্যাংক থেকে কম ঋণ নেওয়ার পরামর্শ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে ব্যাংক থেকে কম ঋণ নেওয়ার পরামর্শ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
ছবি: সংগৃহীত

মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে সরকারের। এই প্রেক্ষাপটে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আরও বেশি করে ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি মেয়াদে আগের বছরের তুলনায় সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৭১৭ কোটি টাকায়। যার বড় একটি অংশ এসেছে ব্যাংকিং খাত থেকে।

অন্যদিকে, সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় একই সময়ে ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে সামান্য। 

সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ বিষয়ক মাসিক প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, 'অর্থনীতিতে চলমান মুদ্রাস্ফীতির চাপ বিবেচনায় রেখে সরকারকে আগামী দিনে ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে আরও বেশি ঋণ নেওয়ার ওপর জোর দিতে হবে।'

২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য সরকার ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে আসবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।

দেশের ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাত থেকে ৪০ হাজার ১ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি। 

চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মাসে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২১-২২ সালের একই সময়ে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ২৮০ কোটি টাকা।

জুলাই-জানুয়ারি মাসে দেশের ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাত থেকে মোট ঋণ নেওয়া হয়েছিল ৩ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯.৩ শতাংশ। ২০২২ অর্থবছরে একই সময়ে অর্থাৎ ছিল ১৪ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। 

জুলাই-জানুয়ারি মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৮ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। তবে সরকার একই সময়ের মধ্যে আসলের ৫১ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা ফেরত দেয়। এর ফলে নিট ঋণের পরিমাণ বাড়েনি বরং কমেছে ৩ হাজার ৬৯ কোটি টাকা।

বিশ্ববাজারে পণ্যের বর্ধিত মূল্য এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে প্রায় ১ বছর ধরে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই সুপারিশ করা হয়েছে।

ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮. ৭৮ শতাংশে পৌঁছায়, যা ৫ মাসের পতনের ধারাবাহিকতা ভেঙে দেয়। আগস্টে এটি ১০ ​​বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯.৫২ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুপারিশের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন, সরকারের অধিক ঋণ গ্রহণের ফলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, 'বেশিরভাগ ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাতের ঋণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে আসে। যেখানে সুদ পরিশোধ বাবদ সরবকারের ব্যায় বাড়ে।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য থেকে দেখা গেছে, ২০২৩ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মাসে সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধ বাবদ সরকার ২৭ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।

২০২৩ অর্থবছরে সরকার ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করে দেশি-বিদেশি উভয় ঋণের জন্য। সংশোধিত বাজেটে সেটা বাড়িয়ে ৯০ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

আগামী অর্থবছরে এ খাতে আরও ১ লাখ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে।

মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার তীব্র অবমূল্যায়ন এবং ট্রেজারি বিলগুলোর উচ্চ ব্যয়ের কারণে অর্থবছরের প্রথমার্ধে সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় প্রায় ২২ শতাংশ বেড়ে ৪০ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা হয়েছে।

জাহিদ হোসেনের মতে, ক্রমবর্ধমান ব্যাংক ঋণ এবং ব্যয়বহুল ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাতের ঋণের বাজেট ঘাটতি কমাতে সরকারের ২টি বিকল্প রয়েছে, তা হলো- হয় রাজস্ব বাড়াতে হবে, না হলে ব্যয় কমাতে হবে। 

 

Comments

The Daily Star  | English

Those involved in Ijtema ground deaths won't be spared: home adviser

He also said that those who are involved with the killings must be brought to book.

55m ago