ইসলামী ব্যাংকের ৭২৪৬ কোটি টাকা ঋণের তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংক

ইসলামী ব্যাংকের ৭২৪৬ কোটি টাকা ঋণের তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংক
ইসলামী ব্যাংকের ৭২৪৬ কোটি টাকা ঋণের তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংক

এ বছর ৯ প্রতিষ্ঠানকে ইসলামী ব্যাংকের ৭ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের মাধ্যমে বড় আকারে ব্যাংকিং আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু বাংলাদেশ ব্যাংক।

গতকাল সোমবার ব্যাংকিং পরিদর্শন বিভাগের ৩ কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, 'কমিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে তদন্ত শুরু করেছে এবং পরবর্তীতে তারা এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত শাখাগুলোতে যাবেন।'

তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত কমিটির কাজের জন্য কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়নি, তবে তাদেরকে যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা গতকাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মাওলাকে ডেকে পাঠান। তাকে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

দ্য ডেইলই স্টার মন্তব্যের জন্য মোহাম্মদ মনিরুল মাওলার সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।

এ মাসের প্রথম ১৭ দিনেই ইসলামী ব্যাংক থেকে ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের সূত্রগুলো জানায়, এই ৯ প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই রাজশাহী ভিত্তিক নাবিল গ্রুপের অঙ্গসংগঠন।

ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এই প্রতিষ্ঠানগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের ঋণের আবেদনে ভুয়া ঠিকানা উল্লেখ করেছে।

মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে, ইসলামী ব্যাংকের গুলশান ২ শাখা নাবিল গ্রেইন ক্রপসকে জুলাই মাসে ১ হাজার ১১ কোটি টাকা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি মার্চ মাসে ওই শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলার সময় বনানীর একটি ভুয়া ঠিকানা দেয়।

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রামভিত্তিক একটি শিল্পগ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় আসার পর ব্যাংকটিকে ঘিরে বড় অনিয়মের অভিযোগ উঠল। আমানত ও ঋণের দিক দিয়ে এটি দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি ব্যাংক।

ওই শিল্পগ্রুপটি তাদের কিছু 'প্রতিষ্ঠানের' প্রতিনিধিকে ব্যাংকটির পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়। তবে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব ছিল শুধুই কাগজে-কলমে।

১ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে মার্টস বিজনেস লিমিটেড ইসলামী ব্যাংকের কাছ থেকে ৯৮১ কোটি টাকা ঋণ পায়। এই প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ঠিকানাটি ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে।

একইভাবে, নাবা অ্যাগ্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এ বছরের এপ্রিল থেকে জুলাইর মধ্যে ১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটিও রাজশাহীর একটি ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে।

সেপ্টেম্বরে ভুয়া ঠিকানা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল প্রোডাক্ট প্যালেস ঋণ চাওয়ার ৩ দিনের মাথায় ৫৪৫ কোটি টাকা পেয়ে যায়।

শরিয়া ভিত্তিক ব্যাংকিং নীতি অবলম্বনকারী প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংকের পরিভাষায় ঋণকে বিনিয়োগ হিসেবে অভিহিত করা হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের বিপরীতে সে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্য ও সেবার রশিদ সংগ্রহ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এই ব্যাংকটির।

তবে এসব ঋণের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনো রশিদ সংগ্রহ করেনি। সূত্র মতে, ব্যাংকটি শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের নির্দেশে ঋণগুলো দেওয়া হয়।

মন্তব্যের জন্য নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Economic expectations: Did govt fall short?

When an interim government was sworn into office following the ouster of the Awami League regime just 100 days ago, there was an air of expectation that the Prof Muhammad Yunus-led administration would take steps to salvage a scam-ridden financial sector and rescue an ailing economy.

7h ago