৪ ব্যাংকে আটকে আছে রপ্তানি তহবিলের ৩ হাজার কোটি টাকা

তারল্য সংকট, ব্যাংক, আমানত, ব্যাংক ঋণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, নীতি সুদহার,
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, রপ্তানি আদেশের কাঁচামাল আমদানির ১০ হাজার কোটি টাকার বড় একটি অংশ আটকে আছে সংকটে পড়া চার ব্যাংকে।

ফলে বিদেশের বাজার থেকে কাঁচামাল কেনার জন্য স্থানীয় রপ্তানিকারকদের ঋণ দিতে এক্সপোর্ট ফ্যাসিলিটেশন প্রি-ফাইন্যান্স ফান্ড (ইএফপিএফ) থেকে পর্যাপ্ত তারল্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে ব্যাংকগুলোর জন্য।

এই ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। আগে এই ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

কিন্তু, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে এস আলমের ঘনিষ্ঠদের বোর্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়।

তারপরও তারল্য সংকটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে তিন হাজার ৩৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। তাই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের কাছে বকেয়া দুই হাজার কোটি টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৬০০ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৪০০ কোটি এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের বকেয়া ৩৫ কোটি টাকা।

বিদেশি মুদ্রা সংকটের কারণে কাঁচামাল আমদানির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তার জন্য গত বছরের জানুয়ারিতে ১০ হাজার কোটি টাকার ইএফপিএফ চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ইএফপিএফ চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোকে সাত হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা ফেরত পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এনসিসি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও ইস্টার্ন ব্যাংকের মতো বেশ কয়েকটি ব্যাংক প্রি-ফাইন্যান্স তহবিল ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সাধারণত ঋণ পরিশোধের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাব থেকে অর্থ কেটে নেয়।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলতি হিসাব রাখতে হয়।

তিনি বলেন, কিন্তু তারল্য সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা এই চার ব্যাংকের চলতি হিসাব ঋণাত্মক ছিল। ফলে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ কেটে রাখতে পারছে না।

ওই কর্মকর্তা বলেন, 'এই ব্যাংকগুলোকে নতুন করে অর্থ দেওয়া হচ্ছে না, কারণ তাদের কাছে ইতোমধ্যে বড় অংশ আটকে রয়েছে।'

ইসলামী ব্যাংক ছাড়া অন্য তিন ব্যাংক এখন তাদের আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতেও হিমশিম খাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশাবাদী, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এই অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। কারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকটির চলতি হিসাব ধীরে ধীরে বাড়ছে।

দ্য ডেইলি স্টার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু গতকাল দুপুর পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

সংকটে পড়া ব্যাংকগুলো বর্তমানে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে তারল্য সহায়তা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইস্যু করা বন্ডের মাধ্যমে সীমিত আকারে আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধ করছে।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তারা তারল্য সহায়তা নিয়ে গ্রাহকের অর্থ পরিশোধ করছে।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, তারা তারল্য সহায়তা ব্যবহার করে জরুরি প্রয়োজনে গ্রাহকের অর্থ পরিশোধ করছেন।

এ বিষয়ে জানতে ইউনিয়ন ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক রপ্তানিকারকদের জন্য ইএফপিএফ চালু করে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ মেনে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে।

এখন পর্যন্ত ইডিএফ প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে এবং ২০২২ সালের ডিসেম্বরের সাত বিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে আনা হয়েছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন, বিকেএমইএ ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) বি অ্যান্ড সি ক্যাটাগরির শিল্পপ্রতিষ্ঠান ইএফপিএফ থেকে অর্থ নিতে পারে।

এ তহবিল থেকে একজন রপ্তানিকারক সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিতে পারবেন। এই অর্থ কাঁচামাল আমদানিতে ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া ব্যাংকগুলোকে ছয় মাসের মধ্যে অর্থ ফেরত দিতে হবে। কিন্তু তারা তাদের গ্রাহকের জন্য অর্থ পরিশোধের সময়সীমা বাড়াতে বা কমাতে পারবে।

এছাড়া কাঁচামাল আমদানির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যান্য তহবিল থেকে ইতোমধ্যে ঋণ নিচ্ছেন এমন গ্রাহকরা ইএফপিএফ থেকে ঋণ নিতে পারবেন না।

(এই প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করেছেন রবিউল কমল)

Comments

The Daily Star  | English

ACC to investigate irregularities in 11th National Election

A five-member team has been formed to investigate these allegations

38m ago