২ বছরে দেশে সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগ জানুয়ারি-মার্চে

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অনিয়মিত জ্বালানি সরবরাহের কারণে দেশে বিদেশি বিনিয়োগে ধীরগতির পর গত জানুয়ারি থেকে মার্চে তা বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে জানা যায়—চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়ে হয়েছে এক দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৭১১ মিলিয়ন ডলার পুনর্বিনিয়োগ করা হয়েছে। বাকি ৮৬৫ মিলিয়ন ডলার দেশে রয়ে গেছে।

বিদেশি বিনিয়োগের এই প্রবাহ এক বছর আগে একই সময়ের ৪০৩ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১১৪ শতাংশ বেশি।

এটি ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে সর্বোচ্চ ত্রৈমাসিক নিট বিদেশি বিনিয়োগ। ২০২৪ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে পাওয়া ৪৯০ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৭৬ শতাংশ বেশি।

সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ সাধারণত ইক্যুইটি মূলধন, পুনর্বিনিয়োগ থেকে আয় ও আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়ে হিসাব করা হয়। ইক্যুইটি মূলধন বিদেশি উদ্যোগে শেয়ার বা মালিকানা শেয়ার কেনাকে বোঝায়।

পুনর্বিনিয়োগ করা আয় হলো লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করার পরিবর্তে ব্যবসায় ধরে রাখা মুনাফা। আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ঋণ হচ্ছে একই বহুজাতিক গ্রুপের মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও তাদের স্থানীয় সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অর্থায়নের ব্যবস্থা।

২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ইক্যুইটি ক্যাপিটাল বছরে ৬২ শতাংশ বেড়েছে। আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ঋণ ১৪৭ শতাংশ বেড়ে ৬২৭ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন—আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ঋণ বেড়ে যাওয়ার ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক-ঋণের উচ্চ সুদহার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

এই ধরনের ঋণ প্রধানত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তারল্য ভারসাম্য বজায় রাখতে, পরিচালন খরচ মেটাতে বা ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে ব্যবসার প্রসারে খরচ করা হয়।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিষ্ঠানটি সাম্প্রতিক বিনিয়োগ প্রবাহ সুরক্ষিত করতে সীমিত ভূমিকা পালন করেছে। কেননা, এর আগে বিনিয়োগের বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছিল।'

তবে বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখতে সহায়তার জন্য বিডা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্রুত অনুমোদনকে কৃতিত্ব দেন তিনি।

সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিলেও অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে এই প্রবৃদ্ধির বেশিরভাগই নতুন মূলধনের পরিবর্তে আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ঋণ থেকে এসেছে।

বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী এম মাসরুর রিয়াজ ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের পর শিল্পখাতে যে অস্থিরতা ও রাজনৈতিক অঙ্গনে যে অস্থিতিশীলতা হয়েছিল তা ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে কিছুটা কমে আসে। এটি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে এনেছে এবং বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করেছে।'

'বিদেশি বিনিয়োগের এই প্রবাহ সত্যিকারের নতুন বিনিয়োগের প্রতিনিধিত্ব করে বা প্রধানত আর্থিক সমন্বয়ের প্রতিনিধিত্ব করে কিনা তা যাচাই করা জরুরি' বলে মনে করেন তিনি।

গত জানুয়ারি থেকে মার্চে পুনর্বিনিয়োগকৃত আয়, যা বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার মূল সূচক, তা বছরে ২৪ শতাংশ কমেছে। এক বছর আগে তা ছিল ২৫৭ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার। পরে তা কমে হয় ১৯৪ দশমিক ৭১ মিলিয়ন ডলার।

একই সময়ে, ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ৬৫১ মিলিয়ন ডলার বিদেশে যায়। পরের বছর একই সময়ে তা বেড়ে হয় ৭১১ মিলিয়ন ডলার।

ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি জাভেদ আখতার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মনে হচ্ছে, ব্যাংক সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় আরও বেশি প্রতিষ্ঠান আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ঋণের দিকে ঝুঁকছে।'

তার মতে, এই তহবিল যদি শুধু পরিচালন খরচ বা তারল্য ঘাটতি কাটাতে ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা বৃহত্তর অর্থনীতিতে সামান্যই অবদান রাখবে।

'তবে সেই টাকা যদি দেশে বিনিয়োগে খরচ হয় তবে তা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পারে।'

তার ভাষ্য—জিডিপির অংশ হিসেবে বিনিয়োগ এখনো কম। নতুন ইক্যুইটি মোট প্রবাহের মাত্র ৩০ শতাংশ। পুনর্বিনিয়োগকৃত আয় কমে যাওয়াও বুঝতে হবে বিনিয়োগকারীরা সতর্ক আছেন।

তিনি বলেন, 'আমাদের বিদেশি বিনিয়োগের এই সবদিক বিবেচনায় নিতে হবে।'

অপর বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী চেয়ারম্যান সেলিম রায়হান একমত পোষণ করে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে নূন্যতম বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ উৎসাহব্যঞ্জক হলেও এর বেশিরভাগই এসেছে আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ঋণ হিসেবে। এটি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের জোরালো ইঙ্গিত দেয় না।'

তিনি আরও বলেন, 'আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ঋণের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ ইতিবাচক, তবে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত তাদের মূল প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ব্যবসার প্রসারে আরও অর্থ বা সংকট পরিচালনার জন্য এ ধরনের ঋণ নিয়ে আসে।'

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারে কিনা তা মূল্যায়নের জন্য বিনিয়োগকারীরা ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধের দিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ রেখেছিলেন। সেই সময়ের মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ মূলত স্থবির হয়ে পড়েছিল।'

'তবে অন্তর্বর্তী সরকার যে ভালো কাজ করেছে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পেরেছে, তা তারা দেখেছেন। এই গতিশীলতা বজায় রাখতে হলে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে সংস্কার উদ্যোগ ত্বরান্বিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

6h ago