বিশ্ববাজারে জনসন বেবি পাউডার বিক্রি বন্ধের ঘোষণা

নিউ ইয়র্কের একটি ওষুধের দোকানে জনসন বেবি পাউডার। ২০১৫ সালের ফাইল ছবি: রয়টার্স
নিউ ইয়র্কের একটি ওষুধের দোকানে জনসন বেবি পাউডার। ২০১৫ সালের ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক সংস্থা জনসন অ্যান্ড জনসনের (জেঅ্যান্ডজে) অন্যতম জনপ্রিয় পণ্য ট্যালকম বেবি পাউডার বিশ্ববাজারে বিক্রি বন্ধ হতে যাচ্ছে।

আজ শুক্রবার সিঙ্গাপুরের সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল জনসন অ্যান্ড জনসন এই ঘোষণা দিয়েছে।

পণ্য নিরাপত্তা নিয়ে ভোক্তাদের হাজারো মামলায় পড়ে ২ বছর আগেই যুক্তরাষ্ট্রে জনসন বেবি পাউডারের বিক্রি বন্ধ হয়। ২০২৩ সালের মধ্যে অন্যান্য দেশেও এর বিক্রি বন্ধের ঘোষণা এলো।

প্রতিষ্ঠানটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, 'বিশ্বব্যাপী পোর্টফোলিও নিরীক্ষার অংশ হিসেবে আমরা একটি বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব ট্যালকমভিত্তিক পাউডারের উৎপাদনকে কর্নস্টার্চ-ভিত্তিক বেবি পাউডারে রূপান্তরিত করা হবে।'

ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক জায়গায় কর্নস্টার্চ-ভিত্তিক বেবি পাউডার বিক্রি হচ্ছে বলেও জানানো হয়।

জেঅ্যান্ডজে'র বিরুদ্ধে প্রায় ৩৮ হাজার মামলা চলছে। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, ট্যাল্ক পণ্যগুলোয় কারসিনোজেনের অ্যাসবেসটসের কারণে অনেকে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন।

২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জনসনের বেবি পাউডারের বিক্রি বন্ধ হয়। ফাইল ছবি: রয়টার্স
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জনসনের বেবি পাউডারের বিক্রি বন্ধ হয়। ফাইল ছবি: রয়টার্স

জেঅ্যান্ডজের দাবি, কয়েক দশকের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনে দেখা গেছে তাদের ট্যাল্ক পণ্য নিরাপদ। এতে অ্যাসবেসটস নেই।

বিক্রি বন্ধের ঘোষণার পাশাপাশি গতকাল প্রতিষ্ঠানটি এ কথা আবারো বলেছে।

গত অক্টোবরে জেঅ্যান্ডজে তাদের এলটিএল ম্যানেজমেন্টকে পৃথক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করে। ট্যাল্ক সংক্রান্ত অভিযোগের জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে দায়ী ও তাৎক্ষণিকভাবে একে 'দেউলিয়া' ঘোষণা করে। ফলে, মার্কিন আইন অনুসারে মামলাগুলো মুলতবি হয়ে যায়।

অভিযোগকারীদের দাবি, মামলার বিরুদ্ধে জেঅ্যান্ডজেকেই সরাসরি লড়তে হবে। জেঅ্যান্ডজে ও দেউলিয়া প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবীরা বলেছেন অভিযোগকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়াই সর্বোত্তম পন্থা।

দেউলিয়া ঘোষণার আগে প্রতিষ্ঠানটিকে বিভিন্ন মামলার রায় ও নিষ্পত্তির খরচ বাবদ সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার খরচের ধাক্কা সামলাতে হতো। দেউলিয়া আদালতের নথি অনুসারে, এক মামলায় ২২ নারীকে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

২০১৮ সালে রয়টার্সের অনুসন্ধানে জানা যায়, ট্যাল্ক পণ্যে কারসিনোজেনের উপস্থিতি সম্পর্কে জেঅ্যান্ডজে কয়েক দশক আগে থেকেই জানতো।

১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নথি, বিচারিক স্বীকারোক্তি ও অন্যান্য প্রমাণে দেখা গেছে, জেঅ্যান্ডজের পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত ট্যাল্ক ও বিক্রির জন্য প্রস্তুত পাউডারে মাঝেমধ্যে স্বল্প পরিমাণ অ্যাসবেসটস পাওয়ার বিষয়টি মেনে নিয়েছে।

জেঅ্যান্ডজে বারবার জানিয়েছে, তাদের ট্যাল্ক পণ্য নিরাপদ ও এগুলোর ব্যবহারে ক্যানসার হয় না।

১৮৯৪ সাল থেকে জনসনের বেবি পাউডার বিক্রি হচ্ছে। এটি জেঅ্যান্ডজে'র পরিবারবান্ধব ভাবমূর্তির প্রতীক।

জেঅ্যান্ডজের ১৯৯৯ সালের এক বিপণন প্রতিবেদনে শিশুপণ্য বিভাগকে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে উল্লেখ করে বেবি পাউডারকে ১ নম্বর সম্পদ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে যখন এ পণ্য বিক্রি বন্ধ হয়, তখন তা মার্কিন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবসায় এর অবস্থান ছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশেরও নিচে।

Comments

The Daily Star  | English

Jatiyo Party's office set on fire in Khulna

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna's Dakbangla area last evening

1h ago