ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্যে বাংলাদেশের লাভ কতটা
বাংলাদেশ ও ভারত গত সপ্তাহে রুপিতে বাণিজ্য শুরু করেছে। এটি প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবিকাশমান বাণিজ্যে মাইলফলক হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ভারতে যে পরিমাণ রপ্তানি করে বড় জোর সে পরিমাণ পণ্য রুপির বিনিময়ে আমদানির সুযোগ পাবে। যেটি প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার সমমানের হতে পারে।
সুতরাং এই উদ্যোগ তাৎক্ষণিকভাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে খুব চাঙ্গা করতে পারবে, তেমনটা নয়। এদিকে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ের তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় গত ১ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
চুক্তি অনুসারে, রপ্তানির বিপরীতে দেশের ব্যাংকগুলো ভারতের আইসিআইসিআই ব্যাংক ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (এসবিআই) সঙ্গে খোলা নোস্ট্রো অ্যাকাউন্টে রুপি পাবেন। যারা আমদানি করবেন, এই রুপি থেকে তাদের আমদানি খরচ পরিশোধ করা হবে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষকরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন যে, এটি ২ প্রতিবেশীর বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। ডলারের ওপর নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি ব্যবসার খরচও কমাবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যবহারের জন্য নতুন মুদ্রা পেয়েছে। এটি ভবিষ্যতে সুফল বয়ে আনবে।'
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে রুপি যুক্ত হওয়ার আগে বাংলাদেশ ডলার, ব্রিটিশ পাউন্ড ও ইউরো ব্যবহার করতো। এ ক্ষেত্রে ডলার আধিপত্য বিস্তার করে আছে।
তার মতে, রুপির সংযোজন তাত্ক্ষণিকভাবে বড় সুবিধা দেবে না। বিশেষ করে রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোর ক্ষেত্রে।
'কেননা, বাংলাদেশ রপ্তানি আয়ের বিপরীতে ডলারের পরিবর্তে রুপি পাবে। আবার সেই রুপিই দেওয়া হবে আমদানি বাবদ অর্ পরিশোধের জন্য।,' যোগ করেন তিনি।
যারা ভারত থেকে আমদানি ও সে দেশে রপ্তানি করবেন, তাদের জন্য এই উদ্যোগ লাভজনক হবে। পাশাপাশি তাদের জন্য বাণিজ্য ব্যয়ও কম হবে বলে জানান অর্থনীতিবিদ মনসুর।
তিনি মনে করেন, এই উদ্যোগের ফলে ব্যবসায়ীরা ভারতে আরও বেশি ক্রেতা আকৃষ্ট করতে পারবেন। এটি দক্ষিণ এশিয়ার এই বৃহত্তম দেশে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়াবে।
রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশে থেকে আমদানির ক্ষেত্রে এলসি খোলার সুযোগ কমে গেছে। অর্থনীতিবিদ মনসুরের মতে, রুপিতে এলসি খোলা গেলে এ সমস্যার কিছুটা সমাধান হতে পারে।
রুপিতে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ভারতকে তার মুদ্রাকে রিজার্ভ মুদ্রায় পরিণত করতে সহায়তা করবে বলেও মনে করেন তিনি।
ডলার, ইউরো, রেনমিনবি, ইয়েন ও ব্রিটিশ পাউন্ড রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানিত ফেলো ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষক অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রুপিতে লেনদেন দেশের রিজার্ভে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। কারণ এই পদ্ধতিতে ডলার আসবেও না, যাবেও না।
বরং প্রাথমিকভাবে রুপিতে বাণিজ্য সীমিত আকারে হতে পারে। পরে বাড়বে। কারণ ভারতে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশ থেকে ডলারে পণ্য কেনা অব্যাহত রেখে যেতে পারে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'রুপি বা টাকার দাম ওঠানামা করতে পারে বলে এই পদ্ধতিতে বিনিময় হার সংক্রান্ত ঝুঁকি এখনো থাকছে।'
তিনি প্রতিবেশী দেশ থেকে রুপিতে আরও ক্রেডিট লাইন ও আরও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পরামর্শ দিয়েছেন। 'তাহলে আমাদের অর্থনীতি লাভবান হবে,' যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে রুপির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ যদি ভারতে রপ্তানি বাড়াতে পারে, তাহলে এই ব্যবস্থার সুফল আরও প্রসারিত হবে। বাংলাদেশকে প্রতিবেশী দেশে রপ্তানি বাড়ানোর নতুন পথ খুঁজে বের করতে হবে।'
'ভারত যদি রুপিতে নতুন লাইন অব ক্রেডিট দেয় এবং জ্বালানি আমদানিতে তা ব্যবহার করা যায় তাহলে রিজার্ভের ওপর চাপ কিছুটা কমতে পারে।'
প্রাক্তন গভর্নর ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে ইউপিএএস (ইউসেন্স পেয়েবল অ্যাট সাইট) এলসি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, 'এটি খরচ কমাবে এবং এই উদ্যোগকে জনপ্রিয় করবে।
(সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে এই How much will Bangladesh benefit? লিংকে ক্লিক করুন)
Comments