রুপিতে বাণিজ্যে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম

রুপিতে বাণিজ্য
প্রতীকী ছবি। রয়টার্স ফাইল ফটো

ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশ ও ভারত গত ১১ জুলাই দুই দেশের বাণিজ্যে রুপি ব্যবহার শুরু করে। কিন্তু, লেনদেনের পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, ভারতীয় মুদ্রায় ব্যবসা করায় আগ্রহ কম।

সোনালী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই), স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ (এসসিবি) ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ রুপিতে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমোদন পায়।

এই ব্যবস্থার আওতায় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রুপিতে নিষ্পত্তি করা যাবে।

কিন্তু, গত ১১ জুলাই থেকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে শুধু ইস্টার্ন ব্যাংক ও এসসিবি ৩৫ লাখ ১০ হাজার রুপির আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য নিষ্পত্তি করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে জানা যায়, গত অক্টোবরে নাভানা ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোড লিমিটেডের জন্য এক লাখ ৪৭ হাজার রুপির এলসি খুলেছে এসবিআইয়ের ঢাকা অফিস।

এক মাস আগে, ইস্টার্ন ব্যাংক রুপিতে প্রথম বাণিজ্য নিষ্পত্তি করে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড প্রায় দুই কোটি ৪০ লাখ রুপির আমদানি-রপ্তানি নিষ্পত্তির সুবিধা পায়। এর মধ্যে আমদানি হয়েছে এক কোটি ৩১ লাখ রুপির।

তারপর থেকে ব্যাংকটি রুপিতে আর কোনো লেনদেন করেনি।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে রুপি ব্যবহারে আগ্রহের অভাব, ডলারের প্রচুর চাহিদা, রুপির স্বল্পতা ও প্রতিযোগিতার অভাব রুপিতে লেনদেন হচ্ছে না।

যদিও ইস্টার্ন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ শাহীন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রুপিতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সবেমাত্র শুরু হয়েছে। এর সম্ভাবনা অনেক।'

তিনি জানান, কয়েকজন রপ্তানিকারক আমাদের ব্যাংকের মাধ্যমে রুপিতে লেনদেন নিষ্পত্তির বিষয়ে আলোচনা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকটির অপর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডলারের তীব্র প্রতিযোগিতা ও চাহিদার কারণে রপ্তানিকারকরা রুপিতে বাণিজ্য করতে চ্যালেঞ্জে পড়ছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'আমদানিকারকরা রুপিতে পণ্য কিনতে চান। কিন্তু, রুপির অভাব।'

ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের পণ্য রপ্তানির ফলে এসসিবি ১০ লাখ ৭০ হাজার রুপি পায়।

এসসিবির প্রধান নির্বাহী নাসের এজাজ বিজয় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডলারের চাহিদা অনেক বেশি। প্রতিটি রপ্তানিকারক ডলার ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানি করতে চান।'

'দেশের ব্যবসায়ীরা যখন রুপিতে আয় করবেন তখন তারা রুপিতে আমদানি করতে পারবেন,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে ভারত থেকে ঋণ হিসেবে রুপি নেওয়ার চেষ্টা করছে।'

বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা নোস্ট্রো অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে রুপি নিয়ে তা ভারত থেকে আমদানিতে ব্যবহার করছেন।

রপ্তানি আয়ের সমপরিমাণ আমদানি বিলগুলো এই প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি করা যেতে পারে। মুদ্রার বিনিময় হার হবে বাজারভিক্তিক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে জানান—ট্রাস্ট ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকসহ আরও ছয় ব্যাংক রুপিতে ট্রেড করার জন্য আবেদন করছে যা এখন যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে ডলারের ওপর নির্ভরতা কমানো সম্ভব নয়। কারণ বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ এর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। যদিও অন্যান্য মুদ্রার ব্যবহার বাড়ছে, তবে তা পরিমাণে কম।

সম্প্রতি যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৈদেশিক বাণিজ্যে ডলারকে সবচেয়ে স্থিতিশীল মুদ্রা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।'

তিনি জানান, ডলারের বিপরীতে অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার মান স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে খুব দ্রুত ওঠানামা করতে পারে। তাই ডলার সবচেয়ে আস্থাভাজন মুদ্রা।

তা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয়, সব ক্ষেত্রেই।

ভারতীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, দেশটির তেল মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে বলেছে যে, রুপিতে অপরিশোধিত তেল আমদানির গ্রাহক খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারণ সরবরাহকারীরা অর্থ ফিরে পাওয়া ও লেনদেনের খরচ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

রুপির আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ২০২২ সালের ১১ জুলাই আমদানিকারকদের রুপি দেওয়ার ও রপ্তানিকারকদের রুপিতে আয়ের অনুমতি দিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

US tariff talks: First day ends without major decision

A high-level meeting between Bangladesh and the Office of the United States Trade Representative (USTR) ended in Washington, DC, yesterday without a major decision, despite the looming expiry of a 90-day negotiation window on July 9.

10h ago