ঈদের আগে মোটরসাইকেলের বিক্রি কমেছে

খুলনার একটি মোটরসাইকেলের শোরুম। ছবি: হাবিবুর রহমান

দেশে চলমান মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ফলে, ঈদুল আজহার আগে মোটরসাইকেলের বিক্রি কমেছে। বিশেষ করে কিছুটা কম দামি মডেলের বিক্রি হতাশাজনক ছিল বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তবে তারা এটাও জানিয়েছেন, দামি মডেলগুলোর চাহিদা এখনো বেশি আছে।

তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ের মধ্যে মোটরসাইকেলের মোট বিক্রি প্রায় ২৮ শতাংশ কমেছে। কিন্তু, দামি মডেলগুলোর বিক্রি প্রায় ১৮.৫ শতাংশ বেড়েছে।

দামি মডেলের খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে ইয়ামাহা ও সুজুকির বিক্রি গত ১১ মাসে যথাক্রমে ১৫ শতাংশ ও ১২ শতাংশ বেড়েছে।

এছাড়া, অন্যান্য ব্র্যান্ডের বিক্রি ১৫ থেকে ৪২ শতাংশ কমেছে। বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে মধ্যে ৪ লাখ ২০ হাজার ৯২২টি মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫০টি মোটরসাইকেল।

টিভিএস অটো বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিপ্লব কুমার রায় বলেন, 'চলতি বছরের জুলাই-মে সময়ের মধ্যে আমাদের বিক্রি কমেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে এই বিক্রি কমার হার প্রায় ৩৮ শতাংশ।'

তিনি আরও বলেন, 'ঈদুল আজহা উপলক্ষে আমরা এখনো ৬০ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি করতে পারিনি। অথচ অন্যান্য বছর এ সময় সাধারণত বিক্রি এক লাখ ছাড়িয়ে যায়।'

বিপ্লব কুমার রায় বিক্রি কমার জন্য মূল্যস্ফীতির চাপকে দায়ী করেছেন। কারণ, অর্থনৈতিক সংকটে মানুষ মোটরসাইকেলের মতো বিলাসবহুল পণ্যের চেয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার দিকে মনোনিবেশ করছে।

তিনি বলেন, 'এই শিল্প কবে এসব চ্যালেঞ্জ থেকে মুক্তি পাবে, তা নিয়ে আমাদের স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই।'

তিনি মনে করেন সরকারের উচিত মোটরসাইকেলের ওপর বিদ্যমান মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে অন্তত ৫ শতাংশ কমানো। তাহলে ক্রেতারা উত্সাহী হবেন ও বিক্রেতারা কিছুটা স্বস্তিতে থাকবেন।

জাপানি ব্র্যান্ড ইয়ামাহার স্থানীয় পরিবেশক এসিআই মটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, 'এই ঈদকে সামনে রেখে দামি মডেলের মোটরসাইকেলের বিক্রি বেড়েছে। পাশাপাশি গত ঈদুল ফিতরেও আমরা রেকর্ড গড়েছিলাম। তবে বিক্রয় সম্পর্কিত সম্পূর্ণ ডেটা এখনো কম্পাইল করা হয়নি। তবে, এই ঈদে বিক্রি কিছুটা ধীর হতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে আমাদের বিক্রি বেড়েছে ১৫ শতাংশ। আমরা আশা করছি বিক্রি ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।'

চলমান মূল্যস্ফীতির চাপ ও মার্কিন ডলারের ঘাটতির কারণে বিক্রি কমার আশঙ্কার কথাও জানান তিনি।

'আমাদের সুনাম এবং সেবার কারণে অন্যান্য ব্র্যান্ডের তুলনায় বিক্রয় পরিস্থিতি ভালো,' বলেন তিনি।

বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা শাহ মুহাম্মদ আশেকুর রহমান বলেন, 'চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সামগ্রিকভাবে বিক্রি কমছে।'

তিনি মন্তব্য করেন, মোটরসাইকেলের দাম আরও বাড়ানো হলে সম্ভাব্য ক্রেতারা আগ্রহ হারাবে। বিশেষ করে কম দামি মডেলের। এই মডেলগুলোর ক্রেতারা দামের বিষয়টি নিয়ে বেশি ভাবেন।

মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের কারণে গত এক বছরে মোটরসাইকেলের আমদানি খরচ বেড়েছে। ফলে, মোটরসাইকেলের দাম প্রায় ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ বেড়েছে।

তবে, যেহেতু প্রতিদিনের যাতায়াতে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী বাড়ছে তাই হোন্ডা আশা করছে, শেষ পর্যন্ত মোটরসাইকেলের চাহিদা আরও বাড়বে।

র‌্যানকন মোটরবাইকস লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সুজুকি বাংলাদেশের চিফ অপারেটিং অফিসার এ কে এম তৌহিদুর রহমান বলেন, 'ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এ বছর প্রায় ৪৫ হাজার দামি মডেলের মোটরসাইকেল বিক্রি হতে পারে। ঈদুল ফিতরের আগে যা ছিল প্রায় ৪১ হাজার।'

'সামগ্রিকভাবে মোটরসাইকেল বিক্রি গত বছরের তুলনায় কমেছে। তবে, মানুষ জাপানি পণ্য পছন্দ করায় আমাদের বিক্রি অন্যান্য ব্র্যান্ডের তুলনায় ভালো হয়েছে। কিন্তু, সুজুকির খুচরা বিক্রি হওয়া সাতটি দামি মডেলের সবগুলোর বিক্রিতে এ বছর ধীর গতি ছিল।'

Comments

The Daily Star  | English

Make right to vote a fundamental right

The Constitutional Reform Commission proposes voting to be recognised as a fundamental right, so that people can seek legal remedies if it is violated.

14h ago