ইউক্রেনে অস্ট্রেলিয়ান সেনা নিহত
ইউক্রেনের যুদ্ধে অংশ নেওয়া অস্ট্রেলিয়ান সেনাবাহিনীর একজন আর্টিলারি পর্যবেক্ষক নিহত হয়েছেন।
নিহত সেজ ও'ডোনেলের মা জানিয়েছে, তার ছেলে সবসময় দেশ, মানুষ এবং স্বাধীনতার অধিকার রক্ষায় বিশ্বাসী ছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, ইউক্রেনের জনগণের স্বাধীনতা রক্ষায় একজন অস্ট্রেলিয়ান সেনা সদস্য মারা গেছেন।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত ১০ মাসে সারা বিশ্ব থেকে স্বেচ্ছাসেবক সেনারা ইউক্রেনে গিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তাদের বিশ্বাস, তারা রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।
এ বছরের জুনে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, 'ফেব্রুয়ারিতে সংঘাত শুরুর পর থেকে যুদ্ধে ১ হাজার ৯৫৬ জন 'বিদেশি সেনা' মারা গেছেন। তখন মস্কো আরও বলেছিল, প্রায় ৭ হাজার বিদেশি যোদ্ধা ইউক্রেনে সংঘাতে যোগ দিতে এসেছে।'
নিহত সেজ ও'ডোনেলের মা গণমাধ্যমকে বলেন, ইউক্রেনীয় জনগণের প্রতি তার সহানুভূতি এবং সেখানে যে অবিচার হচ্ছে তার বিরুদ্ধে লড়ায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ডোনেল।
যেসব অস্ট্রেলীয় ইউক্রেনকে সমর্থন জানাতে ইচ্ছুক তাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে আর্থিক অনুদান দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ।
তিনি আজ চ্যানেল নাইনের টুডে শোতে বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ানরা যেভাবে সমর্থন দিতে পারে তা হলো অর্থ দেওয়া। দাতব্য সংস্থা বা অন্যদের যারা ইউক্রেনে কাজ করছে।
তিনি সেখানে যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ করে বলেছেন, 'এটি বিপজ্জনক।'
'আমি নিজে অস্ট্রেলিয়ার সমর্থন জানাতে এ বছরের শুরুতে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেছি,' বলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন অব ইউক্রেনিয়ান অরগানাইজেশনস ও ভিক্টোরিয়ায় ইউক্রেনীয়দের অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, ও'ডোনেলের মৃত্যুর খবরে তারা গভীরভাবে শোকাহত।
শোক বার্তায় তারা জানিয়েছেন, ও'ডোনেল আমাদের দেশকে সাহায্য করতে জীবন দেওয়ায় আমরা তাকে নিয়ে গর্বিত। এটি একটি ভয়ানক ট্র্যাজেডি যে, এমন একজন যুবক ইউক্রেনের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইয়ে তার জীবন দিয়েছেন।
ইউক্রেনের ইন্টারন্যাশনাল লিজিয়ন ডিফেন্সের মেমোরিয়াল পেজ ও'ডোনেলের মৃত্যু নিয়ে একট বার্তা পোস্ট করেছে। তারা লিখেছে, 'আমাদের ভাইয়ের প্রতি সম্মান এবং কৃতজ্ঞতা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে ও'ডোনেলের বাবা বলেছেন, তার ছেলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে মারা গেছে।
তবে, ও'ডোনেল কোথায় নিহত হয়েছেন তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড ডিপার্টমেন্ট বিশদ বিবরণ দেয়নি। কিন্তু তারা জানিয়েছে, তার পরিবারকে সেদেশে কনস্যুলার সহায়তা করা হচ্ছে।
ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর ও'ডোনেলসহ ইউক্রেনে অন্তত ৪ জন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক নিহত হয়েছেন। এর আগে ডোনেটস্ক পিপলস রিপাবলিকের একটি আদালত ৩ বিদেশি যোদ্ধাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। যোদ্ধাদের মধ্যে ২ জন ব্রিটিশ নাগরিক এবং ১ জন মরক্কোর নাগরিক ছিলেন। সেই মৃত্যুদণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেছিল জাতিসংঘ।
গত ১ বছরে রাশিয়া অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তি এবং কয়েকটি সংস্থার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। একই নিষেধাজ্ঞা অস্ট্রেলিয়াও আরোপ করেছে রাশিয়ার প্রতি।
২৮ ডিসেম্বর রাশিয়া ঘোষণা করেছে, তারা অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে তেল বিক্রি নিষিদ্ধ করবে। এর আগে, অস্ট্রেলিয়া রাশিয়ার কাছে জ্বালানি কয়লা বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক
Comments