তিস্তায় আশানুরূপ মিলছে না ‘উত্তরের রূপালি ইলিশ’

‘উত্তরের রূপালি ইলিশ’-খ্যাত বৈরালি মাছ। ছবি: এস দিলীপ রায়

বৃহত্তর রংপুরে সবার প্রিয় হিসেবে খ্যাতি আছে 'বৈরালি' মাছের। স্থানীয় নদ-নদীর মধ্যে তিস্তায় সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় সুস্বাদু এই মাছ। সাম্প্রতিক সময়ে তিস্তাতেও আশানুরূপ মিলছে না বৈরালি। হতাশ মৎস্যজীবীরা।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ও পৌষ-মাঘে জেলেরা 'চায়না' জাল দিয়ে পোনা শিকার করায় বৈরালির প্রজনন কমে গেছে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তার চর রাজপুরের মৎস্যজীবী মোসলেম উদ্দিন (৫৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছোটবেলা থেকেই তিস্তায় মাছ ধরছি। আগে প্রচুর বৈরালি মাছ পাওয়া যেত। এখন সারাদিন নদীতে জাল ফেলে সর্বোচ্চ ২ কেজি বৈরালি ধরতে পারি।'

'আগে প্রতি কেজি বৈরালি ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি করতাম। এ বছর তা বিক্রি করছি ৫০০-৬০০ টাকা দরে। কিছু মৎস্যজীবী পৌষ-মাঘে চায়না জাল দিয়ে বৈরালির পোনা ধরেন। এ কারণে এখন আশানুরূপ মাছ পাওয়া যাচ্ছে না,' যোগ করেন তিনি।

'বৈরালি মাছকে এ অঞ্চলের রূপালি ইলিশও বলা হয়ে থাকে' উল্লেখ করে আদিতমারী উপজেলার তিস্তার চর গোবর্ধানের মৎস্যজীবী জিতেন চন্দ্র দাস (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন তিস্তায় বৈরালি তেমন পাওয়া যায় না। স্থানীয়রা আগে কম টাকায় মাছ কিনতে পারতেন। আশানুরূপ বৈরালি না পাওয়ায় আমরা হতাশ।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তার চর গোকুন্ডার মৎস্যজীবী সেরাজুল ইসলাম (৫৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জীবিকার জন্য বাধ্য হয়েই পৌষ-মাঘে চায়না জাল দিয়ে তিস্তায় বৈরালির পোনা ধরি। সে সময় সরকারি সহায়তা দিলে এ কাজ করবো না।'

আর বলেন, 'তিস্তায় এখন আশানুরূপ বৈরালি পাওয়া যায় না, খুব খারাপ লাগে। আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি।'

তার মতে, 'বৈরালি এত বেশি দামে বিক্রি হয় যে আমরাও এ মাছ খেতে পারছি না।'

ছবি: এস দিলীপ রায়

লালমনিরহাট শহরের সাপ্টানা বাজার এলাকার ক্ষুদ্রব্যবসায়ী নির্মল চন্দ্র রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজারে বৈরালির তেমন সরবরাহ দেখা যায় না। সামান্য কিছু মাছ এলে তা বেশি দামে বিক্রি হয়। এ মাছ এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। আগে আমি প্রায় দিনই বৈরালি কিনতাম। আমার পরিবারে সবার কাছে এ মাছ খুবই প্রিয়।'

লালমনিরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারুকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পৌষ-মাঘে তিস্তায় চায়না জাল দিয়ে বৈরালির পোনা না ধরার জন্য মৎস্যজীবীদের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়। মাঝে-মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে অভিযানও চালানো হয়। কিন্তু, মৎস্যজীবীরা সচেতন হচ্ছেন না।'

'তারা আমাদের কাছে প্রণোদনা চান। এ ব্যাপারে কোন সরকারি নির্দেশনা না থাকায় আমরা তা দিতে পারি না। তিস্তাপাড়ের মৎস্যজীবীদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

3h ago