ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারের চরে কমেছে কাউন চাষ
আশানুরূপ ফলন ও দাম না পাওয়ায় কুড়িগ্রাম এবং লালমনিরহাটের ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারসহ ২৬টি নদ-নদীর চরাঞ্চলে কমেছে কাউনের আবাদ। কয়েক বছর আগেও এসব চরাঞ্চল ছিল কাউনের আবাদে পরিপূর্ণ। প্রায় দেড় যুগ আগে চরাঞ্চলে কাউনকে ভাতের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতেন চরবাসী।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের বিভিন্ন নদ-নদীর চরাঞ্চলে কাউন আবাদ হয়েছে ৬৯০ হেক্টর জমিতে, যা গত বছর ছিল ৯২০ হেক্টর। মাত্র ৬ বছর আগে এ ফসল আবাদ হয়েছিল ৮ হাজার হেক্টর। দেড় যুগ আগে কাউন আবাদ হয়েছিল ২০ হাজার হেক্টর জমিতে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নতুন নতুন ফসল চাষ করে আশানুরূপ ফলন ও লাভবান হওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকরা পুরাতন ফসলের চাষ থেকে বিরত থাকছেন। চরাঞ্চলের কিছু সংখ্যক কৃষক পুরাতন ফসল চাষ করছেন। এসব চাষিই কাউনের চাষাবাদকে ধরে রেখেছেন।'
কাউনের চাষাবাদ নিয়ে বর্তমানে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, এতে আগামী এক যুগ পর কাউনের চাষ চোখেই পরবে না বলে জানান তিনি।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার দুধকমার নদীর বুকে চর বামনডাঙ্গার কৃষক নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, গত বছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে কাউন আবাদ করেছিলেন, আর এ বছর করেছেন মাত্র ২ বিঘা জমিতে। কাউনের আবাদ করতে খরচ কম কিন্তু ফলনও কম। তাছাড়া কাউন বিক্রিতে আগের মতো বাজার সুবিধা মিলছে না।
তিনি জানান, এক বিঘা জমি থেকে ৪-৬ মন কাউন উৎপাদন হয়, আর খরচ হয় ২০০০-২৫০০ টাকা। এ বছর প্রতি মণ কাউন বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১২০০ টাকা দরে। তবে গত বছর দর ছিল ১৪০০-১৬০০ টাকা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে চর যাত্রাপুরের কৃষক বদিয়ার রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে চরাঞ্চলে কাউন, গম, চিনা, কালো জিরাসহ বিভিন্ন জাতের ফসল চোখে পড়তো। এখন এসব ফসল চোখে পড়েই না।'
কাউনকে তারা চালের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতেন। কাউনের ভাতে প্রচুর পুষ্টি আর এ ভাত শরীরে শক্তি যোগায়। আগে চরাঞ্চলের প্রায় সবগুলো বাড়িতে কাউনের ভাত খাওয়ার প্রচলন ছিল বলে জানান তিনি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নদীর চর রাজপুর এলাকার কৃষক বিমল চন্দ্র ডেইলি স্টারকে জানান, আগে তিনি ৮-১০ বিঘা জমিতে কাউন আবাদ করতেন। এখন এ ফসলের আবাদ প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন। কাউনের পরিবর্তে তিনি ধান, ভুট্টা ও মিষ্টি কুমড়া চাষ করছেন। এ বছর মাত্র এক বিঘা জমিতে কাউন চাষ করেছেন, কিন্তু ফলন আশানুরূপ পাবেন না বলে জানান।
তিনি বলেন, 'উৎপাদিত কাউন বিক্রি করে হয়তো খরচ উঠতে পারে।'
একই চরের কৃষক সাবেদ আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাউন চাষ করে লাভবান হওয়া যায় না। কাউন চাষ করে কখনো কখনো আসলও উঠে না। আগে তিনি ৬-৭ বিঘা জমিতে কাউন চাষ করতেন, কিন্তু গত ৩ বছর ধরে চাষ করছেন না। আগে বাড়িতে কাউনের ভাত রান্না হতো, কিন্তু এখন সবসময় ধান জোটে, এজন্য কাউনের ভাত আর কেউ খেতে চায় না।'
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার জোড়গাছ বাজারের কাউন ব্যবসায়ী মমতাজ আলী ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি কৃষকদের কাছ থেকে কাউন কিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান। কাউন এখন পাখির খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যে সব সৌখিন মানুষ পাখি পুষে থাকেন তারা এখন কাউনের ক্রেতা। আগে মানুষ কাউন কিনে চালের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতেন।
তিনি জানান, গত বছর প্রতি মণ কাউন ১৫০০-১৬০০ টাকা দরে কিনেছিলেন, কিন্তু এ বছর তা কিনছেন ১০০০-১২০০ টাকা দরে। পাইকারী বাজারে কাউনের দর বাড়লে তাকেও কৃষকদের কাছ থেকে বেশি দরে কাউন কিনতে হবে।
Comments