পানির অভাবে পাট পঁচাতে পারছেন না রংপুর অঞ্চলের ৭০ হাজার কৃষক

লালমনিরহাট সদর উপজেলার ভোলারচওড়া এলাকায় পানির অভাবে পাট পঁচাতে পারছেন না কৃষক। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

গত কয়েক সপ্তাহের অনাবৃষ্টিতে শুকিয়ে গেছে খাল-বিল। পানির অভাবে কৃষকরা পঁচাতে পারছে না পাট। জমিতে পাট কেটে ফেলে রেখেছেন। অপেক্ষা করছেন বৃষ্টির পানিতে খাল-বিল ভরলে সেখানে পাট পঁচাবেন।

আবার কয়েকজন কৃষক পাটকাঠির আশা ছেড়ে গাছ থেকে আঁশ তুলে স্বল্প পানিতে 'রিবন রোটিং' পদ্ধতিতে পাট পঁচাচ্ছেন।

কৃষি বিভাগ দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, চলতি বছর লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে প্রায় ৭০ হাজার কৃষক ৫১ হাজার ৬২৭ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছেন। গত বছর পাট চাষের জমির পরিমাণ ছিল ৫৬ হাজার ৪১২ হেক্টর।

লালমনিরহাটে এ বছর পাট চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৮৫ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ১৬ হাজার ৫৭৭ হেক্টর, নীলফামারীতে ৬ হাজার ৭১০ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১৫ হাজার হেক্টর ও রংপুরে ৯ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে। পাটের আঁশ উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন।

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা গ্রামের কৃষক নির্মল চন্দ্র বর্মণ (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর ৭ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। গত বছর করেছিলাম ৯ বিঘায়। বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-বিলে পানি নেই। পাট পঁচাতে পারছি না। পাট কেটে জমিতেই ফেলে রেখেছি।'

'রিবন রোটিং' পদ্ধতিতে স্বল্প পানিতে পাট পঁচানো যায় কিন্তু এতে পাটকাঠি নষ্ট হয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'পাটকাঠির প্রয়োজন। বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছি। আগামী ৫-৬ দিনের মধ্যে খাল-বিলে পানি না এলে রিবন রোটিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।'

কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি গ্রামের কৃষক সিরাজ আলী (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পানির অভাবে পাট পঁচাতে না পেরে জটিল সমস্যায় পড়েছি। অতিরিক্ত পরিবহন খরচ করে অনেকে ৮-১০ কিলোমিটার দূরে নদীতে পাট পঁচাচ্ছেন। আশ-পাশের খাল-বিলে পানি নেই। পুকুরগুলোয় পানি আছে। কিন্তু, মাছ চাষ করায় সেখানে পাট পঁচানো যাচ্ছে না। এ বছর ১০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। অর্ধেক জমির পাট কেটে ফেলে রেখেছি।'

একই এলাকার কৃষক নুরুল ইসলাম (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাট চাষ করতে নানান জটিলতার পড়তে হয়। তারপরও পাট চাষ করে ন্যায্যমূল্য পাওয়া না গেলে কষ্ট বেড়ে যায়। এসব কারণে দিন দিন পাটের চাষ কমে যাচ্ছে। সঠিকভাবে পাট পঁচাতে না পারলে উৎকৃষ্টমানের আঁশ পাওয়া যায় না। কমপক্ষে ৩ সপ্তাহ পাট পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়।'

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ এলাকার কৃষক নবের আলী (৫৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবার ৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। এক বিঘা জমির পাট কেটে "রিবন রোটিং" পদ্ধতিতে পাট পঁচাচ্ছি। এতে পাটকাঠি নষ্ট হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে খাল-বিল ভরলে তবে বাকি জমির পাট কেটে পঁচাবো।'

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের রংপুর আঞ্চলিক কর্মকর্তা ড. আবু ফজল মোল্লা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনাবৃষ্টির কারণে কৃষকরা পাট পঁচাতে পারছেন না। রিবন রোটিং পদ্ধতিতে পাট পঁচানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এক সময় সমতলে প্রচুর পরিমাণে পাট চাষ হতো। এখন সেসব জমিতে খাদ্যশস্য উৎপাদন করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এ কারণে পাট চাষ এখন মূলত পরিত্যক্ত জমি ও চর এলাকায় হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'উন্নতজাতের পাট চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। এ জন্য আমরা বিভিন্নস্থানে কৃষকের মাধ্যমে প্রদর্শনী প্লট তৈরি করেছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Cyber protection ordinance: Draft fails to shake off ghosts of the past

The newly approved draft Cyber Protection Ordinance retains many of the clauses of its predecessors that drew flak from across the world for stifling freedom of expression.

6h ago