এন্টার্কটিকায় পেঙ্গুইনের মল থেকে খনিজ

ছবি: সংগৃহীত

এন্টার্কটিকায় দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানো পেঙ্গুইন বরফের ওপর মলত্যাগ করলে দারুন এক ঘটনা ঘটে। সেই মল মাটির সঙ্গে মিশে এক ধরনের বাদামি রঙের খনিজ তৈরি করে। 

খনিজটিতে বলা হয় 'স্ফেনিসিডিটি।' শব্দটি এসেছে স্ফেনিসিমরফিস থেকে, যা পেঙ্গুইনদের দলবদ্ধ বিচরণ বোঝায়। 

তবে খনিজের মতো মনে হলেই কি খনিজ পদার্থ হয়ে ওঠা যায়? আশেপাশে আমরা প্রায় ৬ হাজারের মতো খনিজ দেখতে পাই। 

এ নিয়ে নিয়মিত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক খনিবিদ্যা সংস্থা (আইএমএ)। 

ফুল’স গোল্ড। ছবি: সংগৃহীত

আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত কার্নেগি ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. রবার্ট হাজেন বলেছেন, গত প্রায় ২০০ বছর ধরেই খনিজ শনাক্তের জন্য এর রসায়ন ও ক্রিস্টাল কাঠামোর ব্যাপারটি দেখা হতো। কিন্তু আমরা এর সঙ্গে আরও দুটো জিনিস যোগ করেছি- সময়ের মাত্রাগত ব্যাপ্তি ও গঠিত হওয়ার পারিপার্শ্বিক অবস্থা।
                                                       
সহজ করে বলা যায়, বিভিন্ন রকম খনিজ আসলে বিভিন্ন রাসায়নিকের সুনির্দিষ্ট সমন্বয়। এই সমন্বয় ঘটে নির্দিষ্ট রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ও ক্রিস্টালাইজেশনের মাধ্যমে। বিভিন্ন পাহাড়-পর্বত গড়ে ওঠার পেছনেও আছে লাখ লাখ বছরের বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়া; যার সমন্বয়ে তৈরি হওয়া বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান এই পাহাড়-পর্বত গড়ে তুলেছে।

যেমন- ফেল্ডস্পার, কোয়ার্টজ ও মিকার মতো খনিজ উপাদান গ্রানাইট মৌল তৈরি করতে ভূমিকা রাখে। 

তবে, ড. হ্যাজেন-এর সহকর্মী গবেষক ড. শনা মরিসন খনিজ গঠনের ব্যাপারটিকে আরেকটু তলিয়ে আলাদা কিছু প্রেক্ষিতের সাপেক্ষে দেখতে চান।
 
তিনি বলছেন, 'বিভিন্ন খনিজের সমন্বয়ে যে ধাতু তৈরি বা বড় বড় পাহাড় বা পাথর তৈরি হয়। এর প্রকৃত প্রক্রিয়া জানতে হলে কখন ও কীভাবে; এ দুটি প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে।' 

তারা তাদের গবেষণায় দেখেছেন, মোট ১০ হাজার ৫০০ খনিজ তৈরির জন্য প্রকৃতিতে এমন ৯৭টি 'রেসিপি' আছে। তার জন্য আছে ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়া। যেমন- পেষণ, চূর্ণন, স্ফুটন ও দহন ইত্যাদি।

গবেষকদের মতে, এসব খনিজের উৎপত্তির পেছনে মূল ভূমিকা পালন করে পানি। অন্তত শতকরা ৮০ ভাগ খনিজ উপাদান গঠিত হয়েছে জলের সহায়তা পেয়ে। 

আবার, জীববৈজ্ঞানিক ভূমিকা আছে অন্তত ৫০ ভাগ খনিজ তৈরির পেছনে। এর ভেতর অন্তত এক তৃতীয়াংশ খনিজ উপাদান জীববৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ারই ফল। 

সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার কথা আমরা প্রায় সবাই জানি। এই প্রক্রিয়ায় বাতাসে অক্সিজেন মুক্ত হয়। এটি খুব সক্রিয় গ্যাস। সেই সঙ্গে খুব ভালো জারকও। আমাদের ভূমণ্ডলে অক্সিজেনের উপস্থিতি অন্তত ২০০০ খনিজ উপাদান সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে।

এ ছাড়া আছে খনিজ গঠনে জৈব উপাদানের ভূমিকা। খোলস, দাঁত, হাড়সহ আরও বিভিন্ন জৈব উপাদান মাটিতে মিশে বা সাগরতলে হারিয়ে সহস্র-অজস্র বছর ধরে স্তরীভূত হয়ে খনিজ উপাদানে পরিণত হয়েছে। 

ড. হ্যাজেন ও ড. মরিসন গবেষণায় পেয়েছেন, ৪০ শতাংশ বা ২ হাজার ৩০০টির মতো খনিজ উপাদান একাধিক প্রক্রিয়ায় তৈরি।
 
৩ হাজার ৩৪৯টি বা ৫৯ শতাংশ খনিজ উপাদান একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার ফল। ৯টি খনিজ উপাদান আছে যা ১৫ বা তারও বেশি উপায়ে তৈরি হতে পারে। 

এ ছাড়া পাইরাইট বা ফুল'স গোল্ড ২১টিরও বেশি প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। 

এভাবে তারা খনিজবিদ্যা বিষয়ক অফিসিয়াল আমেরিকান জার্নালে মোট ৫ হাজার ৬৪৯টি খনিজ উপাদানের ক্যাটালগ তৈরি করেছেন। এখানে তাদের উৎপত্তির রাসায়নিক-জৈবিক প্রক্রিয়া, উপাদানসহ সবকিছুরই উল্লেখ আছে।

ড. হ্যাজেনের মতে, 'আগে যেমন বলা হতো ক্যালসাইট মানে ক্যালসাইটই, অর্থাৎ ক্যালসিয়াম কার্বনেটের স্ফটিক। কিন্তু ব্যাপারটা এখন আর তেমন নেই। পাথরে থাকা স্তরীভূত ক্যালসাইট আর সাগরের অতলে হারানো কোন কিছুতে পাওয়া ক্যালসাইটের ধরন এক নয়। পৃথিবীর অভ্যন্তরে উচ্চ তাপ ও চাপের প্রভাবে যে ক্যালসাইট তৈরি হবে- তার প্রকৃতি হবে ভিন্ন। এই ভিন্নতার প্রতি দৃষ্টি রাখা খনিবিদ্যা সংক্তান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নতুন সংযোজন। 

এ ছাড়া বিভিন্ন রকম খনিজের যে বয়সগত ভিন্নতা, তা আমাদের নিয়ে যায় ইতিহাসের দিকেও। যেমন- ২৯৬টি খনিজ উপাদান আছে, যা পৃথিবীর সমান বয়সী। আবার, এমন ৯৭টি খনিজ মৌল পাওয়া যায় যা সূর্যের সমান বয়সী বলে মনে করা হয়। 

এ ছাড়া, শিল্পায়নের ফলে গত কয়েকশ বছরে জন্ম হয়েছে বিভিন্ন খনিজের। প্রায় ৫০০ খনিজ আবিষ্কৃত হয়েছে খনিগুলোতে খনন করতে গিয়ে। কয়লাভিত্তিক শিল্প জন্ম দিয়েছে ২৩৪টি খনিজের। 

ড. হ্যাজেন মনে করেন, খনিজ পদার্থ নিয়ে এসব গবেষণার ফলে অন্য গ্রহের প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কেও ধারণা করা যেতে পারে। পৃথিবীতে প্রাণের আবির্ভাবের সময়ে যেসব খনিজের অস্তিত্ব ছিল, সেই সূত্র ধরে মঙ্গলেও প্রাণের অস্তিত্বের অনুসন্ধান তারা চালিয়ে যাবেন বলে আশা রাখছেন ড. হ্যাজেন।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka cannot engage with non-state actors: foreign adviser

Md Touhid Hossain also emphasised that peace and stability in the region would remain elusive without a resolution to the Rohingya crisis

21m ago