বিশ্বে প্রথমবারের মতো পেঙ্গুইনের চোখের ছানি অপারেশন
এশিয়ার সবচেয়ে বড় পশু অভয়াশ্রমের বাসিন্দা ছিল ৬টি পেঙ্গুইন। তাদেরকে বরফ ভর্তি বালতিতে রেখে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভ্যানে করে ৩০ কিলোমিটার দূরে সিঙ্গাপুরের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি ক্লিনিকে নিয়ে আসা হয়। উদ্দেশ্য, ছানি অপারেশন করে এই বুদ্ধিদীপ্ত প্রাণীগুলোকে অন্ধত্বের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া।
গতকাল শনিবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে ৩টি কিং পেঙ্গুইন ও ৩টি হামবোল্ট পেঙ্গুইনের জীবনের এই বিচিত্র ঘটনার কথা জানানো হয়েছে।
ক্লিনিকে এই সূক্ষ্ম চক্ষু অপারেশন করার জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট পশু চিকিৎসক দল অপেক্ষা করছিলেন। এর আগে কখনোই মেরু অঞ্চলে বসবাসকারী পেঙ্গুইনের ওপর এ ধরনের কোনো অস্ত্রোপচার করা হয়নি।
বার্ধক্যজনিত কারণে উল্লেখিত ৬টি পেঙ্গুইনের চোখে ছানি পড়েছিল। চিকিৎসকরা অপারেশনের মাধ্যমে এই ছানি বের করে এনে তাদের চোখে বিশেষায়িত লেন্স বসিয়ে দেন। ফলে দূর হয় তাদের অন্ধত্ব।
এই লেন্সগুলো পেঙ্গুইনের চোখের সুনির্দিষ্ট মাপ অনুযায়ী জার্মানিতে নির্মাণ করা হয়। পশু অভয়ারণ্য পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মানদাই ওয়াইল্ডলাইফ গ্রুপ (এমডব্লিউজি) জানিয়েছে, এই লেন্স তৈরিতে সময় লেগেছে ২ মাস। এ প্রতিষ্ঠানটি সিঙ্গাপুরের ৪টি অভয়ারণ্যে প্রায় ১ হাজার জাতের ২১ হাজার পশু-পাখীর ব্যবস্থাপনা করে থাকে।
এমডব্লিউজির নিজস্ব পশু চিকিৎসক ড. এলেন রশিদী বলেন, 'আমরা পর্যবেক্ষণ করি, (পেঙ্গুইনের) চোখ ঘোলা হয়ে গেছে এবং তারা এমন ভাবে চলাফেরা করছে, যাতে মনে হয় সামনে থাকা বস্তুগুলো ভালো করে দেখতে পাচ্ছে না'।
তাৎক্ষনিকভাবে, পেঙ্গুইনগুলোকে পানি থেকে সরিয়ে নিয়ে আলাদা জায়গায় রাখা হয়। দিনে ২ বার তাদের চোখে ড্রপ দেওয়া হয়।
তবে আড়াই ঘণ্টার সফল অস্ত্রোপচারের ৩ মাস পর এখন পেঙ্গুইনগুলো সব কিছু পরিষ্কারভাবে দেখছে। তারা আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ প্রাণবন্ত আচরণ করছে এবং প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
এমডব্লিউজি এর আগেও সি লায়ন ও ওরাংওটাং এর মতো প্রাণীর চোখে ছানির অস্ত্রোপচার করেছে। এছাড়াও, শিকারি পাখির পায়ের একটি প্রাণহন্তারক রোগের চিকিৎসায় সংস্থাটি থ্রিডি প্রিন্ট করা প্রতিরক্ষামূলক জুতা ব্যবহার করেছে।
পেঙ্গুইনের অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়ার মূল দায়িত্বে ছিলেন পশুদের চক্ষু চিকিৎসক ড. গ্ল্যাডিস বু। তিনি জানান, এটাই পেঙ্গুইনের ছানি অপারেশনের প্রথম ঘটনা এবং তিনি একে পশু চিকিৎসায় ১ নতুন মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেন।
এমডব্লিউজি এ অস্ত্রোপচারের খরচ সম্পর্কে কোনো তথ্য জানায়নি, তবে তাদের দাবি, পেঙ্গুইনের জীবনের মানোন্নয়নের জন্য তারা এটা করেছে।
গত বছরের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৬ পেঙ্গুইনের চোখে সমস্যা চিহ্নিত হয়।
এই পেঙ্গুইনগুলো সিঙ্গাপুরের জুরং বার্ড পার্কে বসবাস করে। পর্যটক কাছে এটি খুবই জনপ্রিয়, কারণ এখানে প্রায় ৫ হাজার পাখি রয়েছে।
কিং পেঙ্গুইন দক্ষিণ আটলান্টিক ও দক্ষিণ ভার মহাসাগরে বসবাস করে। পেঙ্গুইনদের মাঝে সংখ্যার দিক দিয়ে এ প্রজাতির অবস্থান দ্বিতীয় স্থানে। হামবোল্ট পেঙ্গুইন মূলত দক্ষিণ আমেরিকায় বাস করে। কিং পেঙ্গুইন ও হামবোল্ট পেঙ্গুইন যথাক্রমে ৪০ ও ১৫-২০ বছর বেঁচে থাকে।
Comments