নাসিরনগরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে কোমর সমান পানি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নে শ্রীঘর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে বন্যার পানি। ২১ জুন ২০২২। ছবি: মাসুক হৃদয়/স্টার

গৃহহীন ছন্নছাড়া জীবনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের নতুন ভিটায় তারা শান্তি খুঁজে নিয়েছিলেন। কিন্তু, বছর না পেরোতেই ঘরে বন্যার পানি ওঠায় তারা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নে শ্রীঘর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ২৩ ঘরে বন্যার পানি।

গৃহহীন ও হতদরিদ্র এসব মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ তৈরির কথা থাকলেও নাসিরনগরে তা হয়নি।

নিচু জমিতে মাটি ভরাট না করে ঘরগুলো তৈরি করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা। গত ৩ দিন দুর্ভোগের পর তাদেরকে একই গ্রামের উচ্চ বিদ্যালয়ের বহুতল ভবনে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়াও, এই উপজেলার ভলাকুট, কুন্ডা, নাসিরনগর সদর, পূর্বভাগ ও গোকর্ণ ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোয় থাকা প্রায় ১২০ পরিবার পানি-বেষ্টিত হয়ে বিপাকে পড়েছেন। প্রকল্পে যাতায়াতের রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে।

শ্রীঘর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মো. আক্তার মিয়া ক্ষোভের সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আশ্রয়ণের বাড়িগুলো বানানো হয়েছে আশপাশের বাড়ি থেকে প্রায় ৫ ফুট নিচু জমিতে। উজান থেকে আসা ঢলে ঘরগুলোর প্রায় অর্ধেক অংশ ডুবে গেছে। পাশে কোনো বাড়িতে পানি না ওঠলেও আশ্রয়ণের ঘরগুলোয় পানি উঠেছে।'

ছবি: মাসুক হৃদয়/স্টার

'নিচু জায়গায় ঘর তৈরির সময় আপত্তি করা হয়েছিল' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আপত্তি উপেক্ষা করে নিচু জায়গাতেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে উপজেলা প্রশাসন। তাই এখন ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পানিতে ভাসছে।'

প্রকল্পে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগও তুলেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে কোমর সমান পানি দেখা যায়। পূর্ব ও পশ্চিম দিকে সারিবদ্ধ ঘরগুলোর মাঝখান দিয়ে এক কিশোরকে কলার ভেলায় চড়ে যেতেও দেখা যায়।

আরও দেখা যায়, ঘরের সামনে একজন জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। কিছুসময় পরেই একটি পরিবার নিজেদের আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিতে নৌকা নিয়ে ওই কেন্দ্রে আসেন।

স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া ওই প্রকল্পের বাসিন্দা মমতা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরার ঘরবাড়ি নাই, প্রধানমন্ত্রী হাসিনা আমরারে ঘর দিলেও কপালে দিছে না। ৩ দিন ধইর‌্যা ঘরের মদ্যে পানি। আমরা ঘরবাড়ি ছাইরা গরু-বাছুর, বাচ্চা-কাচ্চা লইয়্যা হাইস্কুলে উঠছি।'

ওই প্রকল্পের অপর বাসিন্দা সত্তরোর্ধ ফজলুল হক মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আশ্রয়ণ প্রকল্পের রান্নাঘর, টয়লেট, টিউবওয়েল, যাতায়াতের রাস্তা সব কিছুই পানিতে ভাসছে। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করছি।'

তার মতে, 'ভূমিহীনদেরকে ঘর দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনের লোকদের আন্তরিকতার কমতি ছিল।'

নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোনাব্বের হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোয় পানি ওঠায় তাদেরকে আমরা স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে পুনর্বাসন করেছি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাদেরকে ১৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল টিমও প্রস্তুত আছে। তাদের খোঁজ-খবর রাখছি। তারা নিরাপদে আছেন।'

২০২০ সালে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ভূমি ও গৃহহীন হতদরিদ্র পরিবারের জন্য বাড়ি ও ২ কক্ষ বিশিষ্ট ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Muslim pilgrims pray at Mount Arafat in hajj apex

Thousands of pilgrims began to gather before dawn around the hill and the surrounding plain

1h ago