মুজিব জন্মশতবর্ষে বাড়ি

বরাদ্দ পেয়েও ৪ মাস ধরে ঘরে উঠতে পারছে না ১২ সাঁওতাল পরিবার

বরাদ্দকৃত ঘর না পেয়ে বঞ্চিত ১২টি সাঁওতাল পরিবার বিক্ষিপ্ত জীবনযাপন করছেন। ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দিনাজপুরে সাঁওতালদের জন্য ঘর বরাদ্দ দেওয়া হলেও গত ৪ মাস ধরে ১২টি পরিবার এসব ঘরে উঠতে পারছেন না।

অভিযোগ আছে, ঘরগুলোর কাছে থাকা কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষার দাবি করে বাড়িগুলো দখল করে রেখেছে কিছু মুসলিম পরিবার।

'আমরা বাড়িগুলোর কাগজপত্র পেয়েছি কিন্তু বাড়িগুলো এখনও বুঝে পাইনি', বলেন সাওন কিস্কু।

এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার দিনাজপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে বঞ্চিত সাঁওতাল পরিবারগুলো যৌথভাবে অভিযোগ জানিয়েছে।

সাঁওতালদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ঘরগুলো। ছবি: স্টার

দিনাজপুর সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের (পিআইও) কর্মকর্তারা জানান, এ বছর সাঁওতালদের আবাসন সুবিধা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দিনাজপুর সদর উপজেলার পাড়াগাঁও গ্রামে ৫২টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়।

এলাকার চিলমন দীঘি ঘেরা এলাকার সব বাড়িঘর আদিবাসী পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে বাড়িগুলো হস্তান্তরের পর ৫২টি পরিবারের মধ্যে ৪০টি পরিবার সেখানে বসবাস শুরু করেছে। কিন্তু বাড়িগুলোর কাছাকাছি একটি কবরস্থান হওয়ায় বাকি ১২টি বাড়ি নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়।

চলতি বছরের এপ্রিলে বাড়ির কাগজপত্র পাওয়ার পর, ১২টি সাঁওতাল পরিবার সেখানে তাদের নামে বরাদ্দকৃত বাড়িতে উঠতে গিয়েছিল, কিন্তু মুসলিম বসতি স্থাপনকারীরা কবরস্থানের কথা বলে তাদের প্রবেশ করতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ আছে।

জানা গেছে, স্থানীয় রহিম উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্য মোস্তফা কামাল, দফিল উদ্দিন, আজিজুল ইসলাম, ইয়াসিন আলী, বকুল আলী ও আমিনা বেগম ভূমিহীন না হয়েও বাড়িঘর দখল করে রেখেছেন এবং সাঁওতাল পরিবারগুলোকে ভয়ভীতি দেখান।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ১২টি বাড়ির মধ্যে ৬টি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে এবং বাকি ৬টি ঘরে জিনিসপত্রে ভরা।

রহিম উদ্দিন ও দফিল উদ্দিন দাবি করেন, তারা ভূমিহীন এবং এসব বাড়ি তাদেরকে বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল।

যেহেতু সেখানে একটি কবরস্থান আছে, তার পবিত্রতার জন্য সেখানে বসবাস করতে হবে বলে জানান দফিল উদ্দিন। তিনি আরও জানান এটা তাদের অধিকার।

রবেন মুর্মু জানান, দিনাজপুর সদর উপজেলার পাড়াগাঁও গ্রামে বরাদ্দকৃত ঘর না পেয়ে বঞ্চিত ১২টি সাঁওতাল পরিবার বিক্ষিপ্ত জীবনযাপন করছেন।

সাঁওতাল সুনীল কিস্কু জানান, তার মাটির তৈরি বাড়ি ভেঙে ওই জমিতে সরকারিভাবে সেমিপাকা বাড়ি তৈরি করা হয়েছে, যেখানে তিনি গত ৩৫ বছর ধরে ছিলেন।

'আমি সত্যিই খুশি হয়েছিলাম যখন আমি এমন একটি বাড়ি পাওয়ার কথা শুনেছিলাম, কিন্তু ৪ মাস হয়ে গেছে আমি এখনও ওই বাড়িতে উঠতে পারিনি', তিনি আক্ষেপ করে বলেন।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের (জেএপি) সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, এলাকার বিরোধের জন্য সেখানকার সাঁওতাল মন্দিরে কোনো ধর্মীয় আচারও পালন করছে না সাঁওতালরা।

দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের দাবি জানান তিনি।

ফাজিলপুর ইউপি চেয়ারম্যান অভিজিৎ বসাক জানান, তিনি দিনাজপুর সদর উপজেলার ইউএনওকে বিষয়টি দেখার জন্য অনুরোধ করেছেন কারণ তিনি এই বিরোধের সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

পরে সাঁওতাল পরিবারগুলো ইউএনওর কাছে লিখিত আবেদন জানায়।

দিনাজপুর সদর উপজেলার ইউএনও মুর্তজা আল মুয়েদ জানান, তিনি সাঁওতাল পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন। তিনি বিষয়টি সম্পর্কে আগে জানতেন না। বরাদ্দকৃত ব্যক্তি বাড়ি পাবেন বলেও তিনি দাবি করেন।

দু-একদিনের মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সমস্যার সমাধান করবেন বলে জানান এই ইউএনও।

Comments

The Daily Star  | English

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

13h ago