আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর: অসাধুতায় পর্যবসিত একটা ভালো উদ্যোগ

নতুন তৈরি টিনশেডের ঘরগুলো অল্প সময়ে ও করুণভাবে ভেঙে পড়ার চিত্রগুলো অসম্ভব রকমের বাজে পরিকল্পনা এবং অপ্রয়োজনীয় তাড়াহুড়ার একটা উৎকৃস্ট উদাহরণ।

মুজিববর্ষে দুস্থদের উপহার হিসেবে দেওয়ার জন্য ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসনীয় একটা উদ্যোগের অংশ হিসেবে। এর আওতায় আগামী জানুয়ারির মধ্যে প্রথম ধাপে ৭০ হাজার ও জুনের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে আরও ৫০ হাজার দরিদ্র মানুষকে স্বল্প খরচে নির্মিত এই ঘরগুলো উপহার দেওয়ার কথা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রশংসনীয় অভিপ্রায়টি এখন নানা দোষে দুষ্ট। এর মধ্য দিয়ে পদ্ধতিগত অদক্ষতা নির্মোহভাবে উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষের জন্য এর চেয়ে বিব্রতকর আর কিছু হতে পারে না।

এই প্রকল্পে যা কিছু ভুল হওয়ার কথা ছিল, তার সবকিছুই হয়েছে। প্রকল্পের জায়গা নির্ধারণ থেকে শুরু করে ভূমি ও পরিবেশগত যে বিষয়গুলো সংশোধন করা উচিত ছিল তার কিছুই করা হয়নি। এমনকি প্রতিটি ঘরের জন্য যে ব্যয় ধরা হয়েছে, সেটাও সঠিক না। একটি বারান্দাসহ দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও শৌচাগার নিয়ে একেকটি ইটের ঘরের জন্য এক লাখ ৭০ হাজার থেকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এমন একেকটি ঘর নির্মাণের জন্য সবচেয়ে কম খরচের হিসাব করা হলেও, তা বরাদ্দকৃত অর্থের তুলনায় ভয়ানক কম বলেই মনে হয়। আর এটা কেবল একটা জায়গার ক্ষেত্রেই ঘটেনি। এখন পর্যন্ত যে ২৪টি জেলায় এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তার ২২টি উপজেলা থেকেই এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সব দেখে মনে হচ্ছে, চরম বিব্রতকর এই কাণ্ডের পেছনে চূড়ান্ত তাড়াহুড়ার বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। যার দায় সরাসরি এই প্রকল্পের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্তদের কাঁধেই বর্তায়। এটা ভেবে আমরা আশ্চর্য হচ্ছি যে, এত দ্রুততার সঙ্গে নির্মাণকাজ শেষ করার এই তাড়া কেন। এমনকি সবচেয়ে অযোগ্য ও অজ্ঞরাও জানেন যে একটা ঘর তৈরিতে ন্যুনতম একটা সময়ের দরকার হয়। এখন সরকারি প্রকৌশলীদের এটা বলার সুযোগ নেই যে প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরিকল্পনা কমিটিতে কি কোনো প্রকৗশলী ছিলেন না? আমাদের প্রশ্ন, কে এমন কমিটি তৈরি করলেন? আমরা এটা বিশ্বাস করতে পারছি না যে, কমিটিতে এমন একজনও ছিলেন না, যিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে বলতে পারতেন যে, মাটির যে প্রকৃতি তাতে সেখানে ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পরিকল্পনার চেয়ে বেশি সময় লাগবে। এখন কি আমাদের কমিটির চেয়ারম্যানের কাছ থেকে বিবৃতি চাওয়া উচিত না যে, কেন ঘরগুলো দুর্বল মাটির ওপরে তৈরি করা হলো? আমাদের প্রশ্ন, যদি এটা একটা জানা বিষয়ই হয়ে থাকে, তাহলে কেন এই নির্মাণকাজ চলতে দেওয়া হলো?

এ ক্ষেত্রে আমাদের অনুধাবন হচ্ছে, প্রথমে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সে অনুসারে পরবর্তী কার্যক্রম চলেছে। বরাদ্দকৃত কাপড় অনুসারেই জামা তৈরির কাজ এগিয়েছে। কিন্তু কাপড়ের পরিমাণ যথেষ্ট ছিল না। এর ফলাফল হিসেবে ঘর পাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোর আশা এবং স্বপ্ন দুটোই ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। আমরা এটা আশা করতে পারি যে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তদন্তের মাধ্যমে কেবল প্রকল্পের ত্রুটিগুলোই বেরিয়ে আসবে না, বরং এমন বিব্রতকর কাণ্ডের জন্য যারা দায়ী তাদেরকেও চিহ্নিত করা হবে। সর্বোপরি, বরাদ্দকৃত অর্থ জনগণেরই। জনগণের অর্থ নিয়ে কাউকেই খেলতে দেওয়া উচিত না। প্রশাসনের যারা এ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান না তাদেরও একটা উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া উচিত। যাতে তারা বুঝতে পারেন, দরিদ্র মানুষের টাকা নিয়ে উপহাস করলে তার চরম মূল্য দিতে হয়।

 

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

8h ago