প্রাইজ বন্ড: দাবিদারহীন পুরস্কারের ৩৫ কোটি টাকা

ছবি: সংগৃহীত

আপনি কি জাতীয় প্রাইজ বন্ড কিনেছেন? যদি কিনে থাকেন, তাহলে আপনার বন্ড নম্বরগুলো ফলাফলের সঙ্গে দ্রুত মিলিয়ে নেন। আপনিও হতে পারেন সেই সৌভাগ্যবানদের একজন যারা লটারি জেতা সত্ত্বেও এখনো তাদের পুরস্কারের দাবি করেননি।

জাতীয় সঞ্চয় বিভাগের সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, বিজয়ীদের প্রায় ২৩ শতাংশ গত সাড়ে ৩ বছরে তাদের পুরস্কার দাবি করেননি। এবারের মোট ৩৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা পুরস্কারের অর্থ এখনো বণ্টন হয়নি।

প্রাইজ বন্ড বিজয়ীরা ফলাফল প্রকাশের ২ বছরের মধ্যে পুরস্কারের অর্থ দাবি করতে পারবেন।

বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালে এ ধরনের প্রাইজ বন্ড চালু করে। প্রতিটি বন্ডের দাম তখন ১০ থেকে ৫০ টাকা ছিল, কিন্তু ১৯৯৫ সালে মূল্য সংশোধিত করে ১০০ টাকা করা হয়।

বাণিজ্যিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং স্থানীয় পোস্ট অফিসগুলো প্রাইজ বন্ড বিক্রি করে।

সঞ্চয় বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রাইজ বন্ড লটারি চালু হওয়ার পর থেকে প্রাইজমানির একটি ভালো পরিমাণ অর্থের দাবিদার পাওয়া যায়নি।

আগে লটারির ফল শুধু সংবাদপত্রেই প্রকাশ হতো। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে একটি সার্চ অপশন যোগ করা হয়।

সংবাদপত্র বা ওয়েবসাইটে প্রাইজ বন্ডের ফলাফল খোঁজার ঝামেলা কমাতে সরকার 'প্রাইজ বন্ড রেজাল্ট ইনকোয়ারি সফটওয়্যার (পিবিআরআইএস)' নামে একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক শাহ আলম বলেন, 'প্রচুর পরিমাণ টাকা দাবিহীন থাকার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।'

কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, যেহেতু ফলাফলের সঙ্গে ৭ সংখ্যার প্রাইজ বন্ড নম্বর মেলানো একটি কঠিন কাজ, তাই অনেকেই আগ্রহ দেখায় না।'

'কখনো কখনো তারা এটি সঠিকভাবে মেলাতে পারেন না। কখনো আবার ফলাফল দেখতে ভুলে যায় বা প্রাইজ বন্ড হারিয়ে ফেলেন,' তিনি যোগ করেন।

একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা রাশিদুল হাসান তেমনি একজন যিনি ফলাফল পরীক্ষা করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

তিনি বলেন, 'কয়েক বছর আগে আমি ১০০ টাকা মূল্যের ৪টি প্রাইজ বন্ড কিনেছিলাম। তখন পুরস্কারের ঘোষণা শুধু পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। কিন্তু কখন ঘোষণা করা হবে তা জানা কঠিন ছিল।'

তিনি বলেন, 'আমি নিয়মিত খবরের কাগজ পড়ি না... ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে শুনে আমি কয়েকদিনের পুরোনোসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকা কিনেছিলাম। কয়েকদিন পর বিরক্ত হয়ে পত্রিকা দেখা বন্ধ করে দেই এবং আমার প্রাইজ বন্ডগুলো বিক্রি করে দিয়েছিলাম।'

সঞ্চয় বিভাগ প্রতিবছর ৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই এবং ৩১ অক্টোবর মোট ১০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা করে মূল্যের ৩ হাজার ৮২টি পুরস্কার ঘোষণা করে।

প্রথম পুরস্কার ৬ লাখ টাকা এবং দ্বিতীয় পুরস্কার ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ১ লাখ টাকা করে ২টি তৃতীয় পুরস্কার, ৫০ হাজার টাকার ২টি চতুর্থ পুরস্কার এবং ১০ হাজার টাকা মূল্যের ৪০টি পঞ্চম পুরস্কার দেওয়া হয়। বছরে প্রদত্ত পুরস্কারের মোট মূল্য দাঁড়ায় ৪৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

সঞ্চয় বিভাগ জানিয়েছে, তারা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শুধু ৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪০ কোটি ৪১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ডিসেম্বরে শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ১৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

সঞ্চয় বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, 'এক কোটি ৮৬ লাখ টাকার পুরস্কার এখনো কেউ দাবি করেননি।'

Comments

The Daily Star  | English

'Why should an innocent person be punished?' says Jahangir on Hamid's arrival

The home adviser says Hamid will face legal consequences only if an investigation finds him guilty

4h ago