মন্ত্রণালয়ে আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা-বানোয়াট: ওয়াসা চেয়ারম্যান

ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. গোলাম মোস্তফা প্রশাসনিক ও দৈনন্দিন কাজে 'অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ করেছেন' উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কাছে (এলজিআরডি) তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মকর্তা।

অভিযোগের পর গত ৩০ নভেম্বর চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের বক্তব্য জানতে চেয়েছে এলজিআরডি।

এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে গোলাম রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমি এখনো মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চিঠি পাইনি।'

'আমি এতটুকুই বলতে পারি যে, আমাকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে... আমি সবকিছু বুঝতে পারছি', বলেন তিনি।

গোলাম মোস্তফা বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগে কারো নাম উল্লেখ নেই। যদি তাদের উদ্দেশ্য ভালো হতো, তাহলে তারা তাদের নাম উল্লেখ করতেন।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বোর্ড চেয়ারম্যানকে চাপে ফেলতেই এই অভিযোগ করা হয়েছে।

তারা জানান, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের বিভিন্ন প্রকল্পের অনিয়ম, নিয়োগ-বাণিজ্য ও তহবিল আত্মসাতের বিষয়ে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঢাকা ওয়াসার লেনদেন সংক্রান্ত একাধিক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের নথি চেয়েছে দুদক। এসব নিয়েই ওয়াসা কর্মকর্তাদের একাংশ বোর্ড চেয়ারম্যানের ওপর ক্ষুব্ধ।

গত ৩০ অক্টোবর ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এ অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মকর্তা। এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের বক্তব্য জানতে চেয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে, চিঠিতে কোনো কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়নি।

চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান পদটি নির্বাহী পদ না হওয়া সত্ত্বেও চেয়ারম্যান বিভাগীয় প্রধানদের ডেকে নিয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। চেয়ারম্যান তার আদেশ নথিভুক্ত অনুমোদন ছাড়াই কার্যকর করতে বাধ্য করেন। চেয়ারম্যান পদটি সম্মানজনক হলেও তিনি একজন বেতনভোগী কর্মকর্তার মতো প্রতিদিন অফিস করেন।

চিঠিতে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ওয়াসার বরখাস্ত কর্মকর্তাদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, ওয়াসার কর্মচারীরা নিজেদের সিবিএ নেতা দাবি করে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে বললে চেয়ারম্যানের নাম উল্লেখ করে হুমকি দেয় তারা। এ নিয়ে অফিসে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কয়েকজন ঠিকাদারকেও কাজের নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান।

ওয়াসার কর্মকর্তাদের এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পানি সরবরাহ শাখা থেকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

গত ১৫ নভেম্বর পাঠানো চিঠিতে ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তাদের অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যানকে মতামত দিতে বলা হয়। তবে, কত দিনের মধ্যে জবাব দিতে হবে, তা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি। একই চিঠি ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিমকেও পাঠানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, ওয়াসার কিছু সংস্কারের জন্য চেয়ারম্যান উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এতে প্রতিষ্ঠানটির অনেকে বিরক্ত হন।

ওয়াসার দুর্নীতি তদন্তে গঠিত ৩ সদস্যের কমিটির প্রধানও গোলাম মোস্তফা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, 'ওয়াসার কিছু লোক এটা পছন্দ করেনি এবং সে কারণেই তারা অভিযোগ এনেছে।'

আইন অনুযায়ী, ওয়াসার নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত বোর্ডের মাধ্যমে নেওয়া হয়। আর সাধারণ কাজ ওয়াসা প্রশাসনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

ওয়াসা আইন ১৯৯৬-এর ৬ ধারায় বোর্ড গঠনের কথা বলা আছে। বিভিন্ন পেশাজীবী সংস্থার প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ওয়াসার আওতাভুক্ত এলাকার সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ওয়াসা বোর্ড গঠিত হয়।

এই সদস্যদের মধ্যে একজনকে সরকার চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদাধিকারবলে বোর্ড সদস্য হন।

এ বিষয়ে জানতে গতকাল রাতে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি।

Comments

The Daily Star  | English

Advisory council clears anti-terrorism law amendement

Draft includes provision to ban an entity's activities, restrict terrorism-related content online

1h ago