ওয়াসা যেন তাকসিম এ খানের রাজত্ব

তাকসিম এ খান। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

২০১৬ সালে অবসর নেওয়া ২ ঘনিষ্ঠজনকে এখনো ওয়াসার শীর্ষ পদে রেখেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।

অবসরের পরেও তাদের ওয়াসায় রাখতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় এবং এমনকি নিয়ম লঙ্ঘন করে তাদের জন্য আলাদা পদ তৈরি করা হয়।

২০১৬ সাল থেকেই ওয়াসার সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আবুল কাশেম ও একেএম শহীদ উদ্দিনকে কখনো পরামর্শক, কখনো উপদেষ্টা, কখনো পরিচালক, আবার কখনো উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, 'তাদের ওপর এমডির এতটাই আস্থা যে যখনই তিনি বিদেশে যান, তখনই কাশেম বা শহীদকে ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।'

ওয়াসা বোর্ডের একাধিক সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তাকসিমের সুপারিশের ভিত্তিতে তৎকালীন বোর্ড তাদের মাসে দেড় লাখ টাকা বেতনে "পরিচালক" হিসেবে নিয়োগ দেয়। কিন্তু, ওয়াসায় এর আগ পর্যন্ত এ ধরনের কোনো পদই ছিল না।'

তাদের নিয়োগ না দেওয়া হলে ওয়াসার কার্যক্রম ব্যাহত হবে বলে বোর্ডকে জানিয়েছিলে তাকসিম। এ কারণেই বোর্ড তাদের নিয়োগের অনুমোদন দেয় বলে জানান ওয়াসার তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাবিবুর রহমান।

২০১৮ সালের ২৯ মার্চে ২৫২তম বৈঠকে বোর্ড তাদের ২ বছরের জন্য পরিচালক হওয়ার অনুমোদন দেয়।

ওই বছরের আগস্টেই আবুল কাশেম ও একেএম শহীদ উদ্দিনের নিয়োগ 'ঢাকা ওয়াসা আইন ১৯৯৬ এবং ঢাকা ওয়াসা সার্ভিস রুল ২০১০'র লঙ্ঘন উল্লেখ করে তাদের নিয়োগ বাতিল এবং বেতন-ভাতা দেওয়া বন্ধ করতে ওয়াসা নির্দেশ দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিডি)।

ওয়াসার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো অনুযায়ী, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অধীনে ৪ জন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক রয়েছেন। প্রধান প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপকরা উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের অধীনে কাজ করেন এবং ১৩ সদস্যের বোর্ড শীর্ষে থেকে সার্বিক তত্ত্বাবধান করে। প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো পরিচালক নেই।

শুধু এলজিডির ওই চিঠিই উপেক্ষা করা হয়নি, পরিচালক হিসেবে প্রথম নিয়োগের পর থেকে কাশেম ও শহীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ বেশ কয়েকবার বাড়িয়েছেন তাকসিম।

এমনকি চলতি বছরের ৩১ মার্চ এক আদেশে বলা হয়, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ) নিয়োগ এখনো না হওয়ায় ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ৬ মাসের জন্য পরিচালক (টেকনিক্যাল) হিসেবে শহীদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

এর ৫ মাস পর শহীদকে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ) করা হয়।

সাবেক প্রধান প্রকৌশলী কাশেমকে করা হয় এমডির উপদেষ্টা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেহেতু আমি দক্ষ, তাই নিয়োগ পেয়েছি। ওয়াসায় থাকাকালীন আমি মেগা প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তাই ওয়াসার আমার দক্ষতা প্রয়োজন।'

বিদেশে থাকায় এ বিষয়ে জানতে কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর একটি সম্মেলনে যোগ দিতে ৬ দিনের জন্য ডেনমার্কে যান তাকসিম। এরপর তিনি চিকিৎসা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার জন্য আরও ৬ সপ্তাহের ছুটি নেন।

এই সময়ের জন্য শহীদকে ওয়াসার ভারপ্রাপ্ত এমডি করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও এলজিডির তৎকালীন সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও ওয়াসা বোর্ডের সাবেক সদস্য এবং বর্তমান জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব মাহবুব হোসেনের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি ওয়াসার বিভিন্ন আর্থিক অসঙ্গতির বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এর পরই নিয়ম লঙ্ঘন করে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে।

গত ২০ অক্টোবর দুদকের একজন উপ-পরিচালকও আবুল কাশেম ও একেএম শহীদ উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

গত ১১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের একটি আদেশ বহাল রাখেন, যেখানে গত ১৩ বছরে তাকসিমকে দেওয়া বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

7h ago