বিদেশে উচ্চশিক্ষা: আবেদনপত্র লেখার সময় যা মনে রাখা জরুরি

আবেদনপত্রে সব যথাযথ উল্লেখ থাকলে লক্ষ্য পূরণে ঠেকায় কে।
ছবি: ফ্রিপিক

মানুষ যেমন আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী, বিদেশে অধ্যয়নের জন্য আবেদনপত্র তেমনই। প্রথমে একজন শিক্ষার্থীর যোগ্যতা যাচাই করা হয় কাগজে সুনিপুণভাবে লেখা তথ্যের মাধ্যমে। তাই আবেদনপত্রে যদি সব যথাযথ উল্লেখ থাকে, লক্ষ্য পূরণে তাকে ঠেকায় কে।

চলুন জেনে নিই আবেদনপত্র লেখার সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে। 

প্রোগ্রাম বাছাই করুন

কোন দেশে পড়তে চান, কখন আবেদন শুরু করলে ভালো হবে, কী নিয়ে পড়লে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন, এসব বিষয়ে চিন্তা করতে হবে অন্তত এক বছর সময় হাতে নিয়ে। তার মানে আগামী বছর বিদেশে পড়তে যেতে চাইলে এখন থেকেই পরিকল্পনা শুরু করতে হবে। কিছু প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারণ থাকে না, তাই সেক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করলেও চলে। এতে আবেদনের ধাপও এগোনো যায় নিশ্চিন্তে।

প্রোগ্রাম বাছাই করার সময় কিছু বিষয় মাথায় না রাখলেই নয়

কোর্স: এমন একটি কোর্স বেছে নিতে হবে যা আপনার আগ্রহ এবং একাডেমিক, ব্যক্তিগত বা পেশাগত লক্ষ্য একসঙ্গে পূরণ করবে। এটি শুধু আপনার পড়ালেখার মনোযোগই টিকিয়ে রাখবে এমন নয়, উপরন্তু আপনার বিদেশে থাকার অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকেও উন্নত করবে।

দেশ: বেশিরভাগ দেশই উচ্চশিক্ষার জন্য নানা সুবিধা দেয়। তবে পড়ালেখা ছাড়াও আবাসন, কাজের সুবিধা, নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ আছে এমন দেশে গেলে ভালো হয়। তাই দেশ বাছাইয়ের জন্যও নিজস্ব পছন্দ গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া উচিত সবচেয়ে বেশি। 

প্রোগ্রামের সময়: আপনি পার্ট-টাইম সময়ে পড়ালেখা করতে চান, নাকি ফুল-টাইম অধ্যয়ন করতে আগ্রহী তার ওপর নির্ভর করে কোন বিশ্ববিদ্যালয় কী প্রোগ্রাম অফার করে সেটি যাচাই করতে হবে। 

ক্রেডিট: অধ্যয়নকালে আপনার অর্জিত ক্রেডিট এবং ডিগ্রি অর্জন লক্ষ্য পূরণে কতটা কাজে আসবে তা ভেবে দেখুন। কিছু ক্রেডিট বা যোগ্যতা অন্যান্য একাডেমিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা স্বীকৃত নাও হতে পারে, তাই এটি আপনার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। 

খরচ: বাছাইকৃত প্রোগ্রামের জন্য আপনার সামর্থ্য বা তহবিল আছে কি না দেখুন। প্রোগ্রামটি কোনো স্কলারশিপ বা আর্থিক সহায়তা প্রদান করে কি না তা জানুন। 

নথিপত্র জোগাড় করুন

যত আগে আপনার পছন্দসই প্রোগ্রাম নির্ধারণ করতে পারবেন, তত এগিয়ে থাকবেন। কারণ বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনে বাড়তি সময় লাগে। তাই আগে থেকে পরিকল্পনা করুন এবং সময় নিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করুন।

অনেক সময় সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থী সংখ্যা পূরণ হয় না। তাই আগে থেকে আবেদনপত্র জমা দিলে লাভই হবে। তা ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে রেকমেন্ডেশন লেটার পেতেও সময় লাগে। 

আবেদন করার জন্য বেশকিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়, সেগুলোর মধ্যে যা যা প্রয়োজন পড়বে

পাসপোর্ট: আপনার পাসপোর্ট শুধু পরিচয় নয়, বিদেশে অধ্যয়নের যোগ্যতা হিসেবেও বিবেচিত হবে। আবেদনের আগে পাসপোর্টের বৈধতা নিশ্চিত করুন। নতুন পাসপোর্ট করতে হলে আবেদনে দেরি হবে। 

অফিশিয়াল একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট বা হোম স্কুল অনুমোদন ফর্ম: একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিদেশে পড়ালেখা করার জন্য আবেদনের সময় জমা দিতে হবে। আপনার যোগ্যতা, গ্রেড অর্জনের আগ্রহ বোঝা যাবে এটির মাধ্যমে। 

সুপারিশ এবং রেফারেন্সের চিঠি: শিক্ষক, নিয়োগকর্তা এবং অন্যান্য পেশাদারদের কাছ থেকে সুপারিশ এবং রেফারেন্স চিঠি জোগাড় করতে হবে। এটি আপনার আবেদনের সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলবে।

একাডেমিক বা পাঠ্যক্রম বহির্ভূত যোগ্যতা: একাডেমিক বা পাঠ্যক্রম বহির্ভূত যোগ্যতা বা অর্জন আপনার আবেদনকে বাড়তি প্রাধান্য দেবে।

'স্টেটমেন্ট অব পারপাস' লেখা

আপনি কেন বাছাইকৃত প্রোগ্রামে অধ্যয়ন করতে চান, কীভাবে দেশের উন্নতিতে অবদান রাখবেন এবং কীভাবে আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে  মূল্যবান সম্পদ হয়ে উঠবেন, এসব স্টেটমেন্ট অব পারপাসে লিখতে হবে। বিদেশে অধ্যয়ন করার সুযোগ পেতে কিছুটা ভিন্নভাবে স্টেটমেন্ট অব পারপাস লিখলে উপকার হবে। মনে রাখবেন, আবেদনপত্রে ব্যক্তিগত তথ্য, গ্রেড, কৃতিত্ব এবং আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত থাকলেও স্টেটমেন্ট অব পারপাসে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে লেখা থাকে। 

ভর্তি কর্মকর্তারা আবেদনপত্রের তথ্য সূক্ষ্মভাবে পরীক্ষা করেন বিধায় আপনার স্টেটমেন্ট অব পারপাস নির্বাচিত প্রোগ্রামের জন্য মানানসই হতে হবে।

'স্টেটমেন্ট অব পারপাস' লেখার সময় যা যা মনে রাখতে হবে

বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট হোন: বিদেশে পড়ালেখা করার জন্য আপনার যুক্তি তুলে ধরুন। কেন আপনি উক্ত দেশ ও প্রোগ্রামের প্রতি আগ্রহী সুনির্দিষ্টভাবে বলুন। এটি আপনার অধ্যয়নের অভিজ্ঞতাকে কীভাবে উপকৃত করবে তা ব্যাখ্যা করুন। 

যোগ্যতা ব্যাখ্যা করুন: আপনার গ্রেড, অভিজ্ঞতা বা অর্জন আপনার সক্ষমতা প্রমাণ করবে। নিজের প্রতি আস্থা রেখে আপনি কেন বিদেশে অধ্যয়নের জন্য যথেষ্ট যোগ্য সেই বিষয়ে বিবৃতি দিন। যেকোনো সহ-শিক্ষা কার্যক্রম বা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না।  

আপনার লক্ষ্য বলুন: আপনি প্রোগ্রাম থেকে কী আশা করেন, প্রোগ্রামটি আপনার ভবিষ্যতের জন্য যে দক্ষতা ও জ্ঞান অফার করে তা আপনি কীভাবে ব্যবহার করবেন তা ব্যাখ্যা করুন।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন: আপনার আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে অভিজ্ঞতা বিষয়ক তথ্য উল্লেখ করুন। এতে আপনার আবেদনপত্র অন্যদের থেকে আলাদা হবে। 

সংক্ষিপ্ত হোন: বর্ণনামূলক ও তথ্যপূর্ণ কিছু লেখার সময় বাক্য অতিরিক্ত জটিল করবেন না। জটিল ভাষা ব্যবহার করলে সেটি পড়তে কষ্ট হতে পারে।  

প্রুফ রিড ও সংশোধন: আবেদন জমা দেওয়ার আগে বিদেশে আছেন এমন সুপারভাইজার, বন্ধু বা পরিবারের সদস্যকে সেটি পড়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে বলতে পারেন। বাহ্যিক ও উদ্দেশ্যমূলক মতামত আবেদনপত্র সংশোধনে সহায়তা করবে। 

পুনরায় আবেদনপত্রটি পড়ুন 

আবেদনপত্র অন্তত দুইবার যাচাই করা উচিত। পর্যাপ্ত সময় থাকলে, নতুন কাউকে দিয়ে পর্যালোচনা করুন। আগাম পরিকল্পনা করলে যেকোনো বিষয়ে নতুন কিছু যোগ করার সময় থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সমস্যা বা ত্রুটি ঘটতে পারে, সেজন্য আগে থেকে হাতে সময় রাখার কথা মনে রাখবেন। 

শুরুতে আবেদনের কাজ অনেক জটিল মনে হতে পারে, কারণ এটি বিদেশে আপনার অধ্যয়নের অভিজ্ঞতার ওপর একটি বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তবে একবার সবকিছু বুঝে গেলে কাজ করা সহজ হয়ে যায়। আবেদন করার সময় সব গুছিয়ে রাখুন হাতের কাছে। মনে রাখবেন, সময় নিয়ে পরিকল্পনা করা মানেই লক্ষ্যকে প্রাধান্য দেওয়া।

Comments