দ্বিতীয় মাস্টার্স নাকি একেবারে পিএইচডি?

উচ্চশিক্ষায় আবেদনের সময় অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, দ্বিতীয় মাস্টার্স না পিএইচডি কোন ডিগ্রির জন্য আবেদন করা ঠিক হবে। আমার অনেক শিক্ষার্থী যারা উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কিংবা সহকর্মীরাও অনেকেই জানতে চান বিষয়টি নিয়ে।

সত্যি বলতে, এটা পুরোটাই নির্ভর করছে আবেদনকারীর ইচ্ছা, তার ক্যারিয়ার পরিকল্পনা এবং পারিপার্শ্বিক নানান বিষয়ের ওপর। যেমন আমার বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষককে দেখেছি, দ্বিতীয় মাস্টার্স শেষে তারপর পিএইচডির জন্য কিছুটা সময় নিয়ে অন্য দেশ বা ভিন্ন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে। এখন অবশ্য সময়ও বদলেছে। অনেকেই এখন সরাসরি পিএইচডিতেই আবেদন করেন এবং ফুল ফান্ডও পেয়ে যান।

এ ক্ষেত্রে আসলে নির্ভর করে ব্যক্তি নিজে কীভাবে তার ক্যারিয়ার পরিকল্পনা গোছাতে চাইছেন। অ্যাকাডেমিয়া বা শিক্ষকতা পেশায় যারা আছেন, তাদের ক্ষেত্রে পিএইচডির আগে একটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি কিংবা এমফিল যোগ হলে পোর্টফলিওতে আরেকটি ডিগ্রি এবং সে সময়কার গবেষণার এবং কাজের অভিজ্ঞতা যুক্ত হয়। যা পরবর্তীতে তার শিক্ষকতা পেশায় অভিজ্ঞতা হিসেবে গুরুত্ব রাখে। অর্থাৎ শিক্ষকতা বা গবেষণা পেশার ক্ষেত্রে একেকটি ডিগ্রি অভিজ্ঞতা হিসেবে যুক্ত হয়। আবার অনেকের অন্য পরিকল্পনাও থাকে তার পরিবার, আর্থিক অবস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ের কারণে।

এ তো গেল অ্যাকাডেমিয়ায় যারা আছেন। এর বাইরেও যারা উচ্চশিক্ষায় যান, তাদের অনেকেও দ্বিতীয় মাস্টার্সে আবেদন করেন। হয়তো আবেদনকারী স্নাতক, স্নাতকোত্তর কোনো একটি বিষয়ে করলেও, পুরো নতুন একটি বিষয়ে পিএইচডি করতে চাইছেন। সেক্ষেত্রে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফান্ডিং বা স্কলারশিপের ক্ষেত্রে সাধারণত সেইসব প্রার্থীকেই বাছাই করেন, যাদের সেই নির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণা আর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। অধ্যাপক যাতে সেই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কাজ করতে পারেন। এমনও দেখেছি আমার সহকর্মী তৃতীয় মাস্টার্স করেছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে, কারণ তিনি আইন বিভাগের শিক্ষক হলেও পিএইচডি করছেন দর্শনের ওপর।

এছাড়াও প্রতি বছরই জরিপে দেখা যায়, উচ্চশিক্ষায় পিএইচডি ড্রপআউটের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। তাই বিদেশে উচ্চশিক্ষা মানেই যে শুধু পিএইচডি এমনটা নয়। গবেষণা কিংবা শিক্ষকতায় আগ্রহ না থাকলে এই ডিগ্রি ছাড়াও অনেককেই দেখেছি শুধু মাস্টার্স শেষেই চাকরির জন্য আবেদন করতে। আমার শিক্ষার্থীরাও অনেকেই উন্নত জীবনব্যবস্থার জন্য উচ্চশিক্ষায় আবেদন করতে আগ্রহী। এমন অনেকেই আছেন যারা দ্রুত নতুন আরেক দেশে গুছিয়ে নিতে চান, তার ওপর নির্ভর করেও আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, আপনি কোন বিষয়ে এবং কোন ডিগ্রির জন্য আবেদন করবেন।

মোট কথা হলো উচ্চশিক্ষা আসলে একটি দীর্ঘ এবং বেশ ধৈর্যের একটা পথ। অনেক ভেবে, চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ মুহূর্তে সেই পরিকল্পনামাফিক নাও হতে পারে। নিজের কয়েকজন বন্ধুকেই দেখেছি, পিএইচডিতে ফান্ড নিয়ে আসলেও, মাঝ পথে ল্যাবের অধ্যাপকের সঙ্গে ঝামেলা! তাই দুই বছর পর মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়েই সেই ল্যাব থেকে ক্ষান্ত দিতে হয়েছে। তবে ইতিবাচক বিষয় হলো, আপনি চাইলে এবং ভালো মতো শ্রম দিলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই আপনার জন্য সুযোগ রয়েছে। তাই কেন দ্বিতীয় মাস্টার্স করে সময় নষ্ট করলেন, কিংবা সরাসরি পিএইচডির জন্য আবেদন করলে ফান্ড হবে কি না, পুরোটাই নির্ভর করছে আপনার সিদ্ধান্ত এবং আপনার নিজের পোর্টফোলিওর ওপর।

নাদিয়া রহমান: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)।

 

Comments

The Daily Star  | English

Project stalled amid bureaucratic hurdles

The construction of Jagannath University’s long-awaited second campus in Keraniganj has stalled due to bureaucratic delays.

1h ago