যেখানে কেটে যায় দিনের বেশিরভাগ সময়

এখানে এই এক সুবিধে। রাতে একদম ফাঁকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসস্টপেজেও নিরাপদে দাঁড়িয়ে থাকা যায়। বাসে ঘুমিয়ে পড়লেও অমায়িক ড্রাইভার বিরক্ত হননি হাসিমুখে পড়াশোনার কথা জিজ্ঞেস করা ছাড়া। 
রোজ স্ট্রিটের উইলিয়াম টি লাইব্রেরি। ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের না হলেও ডর্ম থেকে কাছে হওয়ায় আমার বেশি সময় কাটে রোজ স্ট্রিটের উইলিয়াম টি লাইব্রেরিতে। কখনো রাত ১১টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বন্ধ হয়ে গেলে হেঁটেও চলে এসেছি। কখনো এমনো হয়েছে বিকেলে পড়তে গিয়েছি, বের হয়ে দেখি শান্ত বৃষ্টির রাতে ১১টা বাজতে দেরি নেই। তড়িঘড়ি করে বাসস্টপেজে দাঁড়িয়ে গেছি। বাসে ফেরার সময়ে ঘুমিয়েও পড়েছি, বাস-ড্রাইভার অসীম ধৈর্য নিয়ে আমাকে ডেকে তুলছেন। 

এখানে এই এক সুবিধে। রাতে একদম ফাঁকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসস্টপেজেও নিরাপদে দাঁড়িয়ে থাকা যায়। বাসে ঘুমিয়ে পড়লেও অমায়িক ড্রাইভার বিরক্ত হননি হাসিমুখে পড়াশোনার কথা জিজ্ঞেস করা ছাড়া। 

ক্লাস আর ডর্মের বাইরে যেখানে আমার সবচেয়ে বেশি সময় কাটে, সেটা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি। পুরো ক্যাম্পাসে সব মিলিয়ে সাতটি লাইব্রেরি আছে, বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের জন্য। 

এখানে লাইব্রেরির পরিবেশটাই একেবারে ভিন্ন। বিশাল লাইব্রেরি যেখানে কখনো আসনের অভাব হয় না। পাঁচ-ছয় তলা ভবন ছাড়াও যে লাইব্রেরিগুলো তুলনায় ছোট বা দুতিন তলা, সেখানেও বসার জায়গার অভাব হয় না।
 
দীর্ঘ সময় একজন এক নাগাড়ে সোজা হয়ে বসে থেকে পড়বে—এটা যন্ত্রের ক্ষেত্রে মানা গেলেও মানুষের ক্ষেত্রে নয়। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীর সুবিধার কথা ভেবে লাইব্রেরির আসনগুলো এমনভাবে তৈরি, যাতে শুয়ে-বসেও পড়া যাবে। কারও যদি শ খানেক শিক্ষার্থীর মাঝে বসে পড়তে ভালো না লাগে, তাহলে একেবারে সাইলেন্ট কর্নারে একাকী পড়বার সুযোগও আছে। গ্রুপ স্টাডি করবার জন্যও আলাদা কর্নার আছে। গোলাকার কাঠের বিশাল টেবিলগুলোয় আলোচনা করে অনেক শিক্ষার্থীই পড়েন। 

প্রতিটি ডেস্কেই ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়ার আলাদা ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া আলাদা করে ছোট ল্যাম্প রাখা আছে। অর্থাৎ, পড়তে বসে চোখের ক্ষতি করা যাবে না। 

এ তো গেল পড়ার ব্যবস্থার কথা। দীর্ঘ সময় ধরে পড়তে পড়তে ক্ষুধা পাবে না তা তো হয়ই না। বিশেষ করে শীতের দিনে উষ্ণ কফি, চা তো প্রয়োজন হয়ই। তাই লাইব্রেরির মধ্যে একটা কর্নারে ক্যাফে, স্ন্যাকসের ব্যবস্থা আছে। অনেক সময় গেছে, পড়ার মাঝে বিরতি নিয়েছি এই ক্যাফেতে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করে। আবার যখন বিকেল শেষে সোডিয়াম বাতিগুলো জ্বলে উঠেছে তখন যে যার ডেস্কে ফিরে গেছি। আবার রাতে একসঙ্গে ডর্মে ফিরেছি। ক্যাফে ছাড়াও ক্যাম্পাসের ডাইনিংগুলো একেবারে লাইব্রেরির এবং ডর্মের মাঝামাঝি। শুধু রাস্তাটুকু পেরোলে ডাইনিং।  

কোনোমতেই এই গল্প, আড্ডার শব্দ যাতে বাইরে না আসে সেজন্য সাউন্ডপ্রুফ ব্যবস্থা তো এখানে সাধারণ ব্যাপার। এমনকি শিক্ষার্থীদেরও কখনো দেখিনি উচ্চস্বরে কথা বলতে। এখানে কেউ কারও কাজে বিঘ্ন ঘটাতে চায় না। 

গ্রীষ্মের দিনে দেখেছি লাইব্রেরির সামনে বিশাল ঢালু মাঠটাতে শিক্ষার্থীদের রোদ পোহাতে। পড়ন্ত বিকেলে অনেকে একটা মাদুর পেতে শুয়ে বসে বইও পড়েন। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে ওয়াইফাই সুযোগ তো আছেই। সব থেকে ভালো লাগে, বিভিন্ন পিয়ার রিভিউড জার্নালের এক্সেস পাওয়া যায় লাইব্রেরি থেকে। নিজের ল্যাপটপ সঙ্গে না থাকলে একেবারে নিচ তলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেস্কটপগুলোয় বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিজের মতো কাজ করা যায়। আর কোথাও কোনো সমস্যা হলে লাইব্রেরির কর্মীরা আছেন, ওনাদের শুধু গিয়ে বললেই হয় কী সমস্যা। কোনো অপেক্ষা করা ছাড়াই প্রত্যেকবার তারা শিক্ষার্থীদের সহায়তা করেন। এই যে হাজার হাজার বইয়ের ইলেক্ট্রনিক বইয়ের শেলফ, কোনো বই খুঁজে না পেলে তাদের শুধু বললেই হলো। প্রতিটি বইয়ের, জার্নালের যেমন হার্ডকপি আছে তেমনি লাইব্রেরি ওয়েবসাইটে সফটকপিও আছে। সেই ৯০-এর শুরু দিকের বই থেকে শুরু করে গত এক মাসের প্রতিটি জার্নালের কপি অনায়াসেই পাওয়া যায়। 

মনে করছিলাম, দেশে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম খুব বেশি লাইব্রেরি যাওয়া হয়নি। অন্যতম কারণ ছিল হয়তো প্রয়োজনীয় বই খুঁজে পাইনি, নয়তো বসার জায়গা পাইনি। আর এখানে গ্র্যাজুয়েট জীবনের অন্যতম অংশই হলো লাইব্রেরি। 

 

নাদিয়া রহমান: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির শিক্ষার্থী।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

5 killed as two buses collide in Faridpur

Five people were killed and at least 15 others injured in a head-on collision between two buses in Faridpur early today

29m ago