শিক্ষক ৭ জন, উপস্থিত থাকেন ১ জন

চর কাগজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চর কাগজীপাড়া গ্রামের চর কাগজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে সাত জন শিক্ষক থাকলেও মাত্র একজন শিক্ষক নিয়মিত পাঠদান করেন। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক না আসায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

তবে বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য না এলেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন ছয় শিক্ষক।

জানা যায়, চর কাগজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১৩ সালে। ১৯৯৫ সালে বিদ্যালয়টি পুনর্নির্মাণ করা হয় এবং ২০০৩ সালে সরকারিকরণ করা। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৩৫ জন।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানায়, বিদ্যালয়ে সাত জন শিক্ষক আছেন। তবে মিজনু খাতুন ছাড়া বাকি ছয় শিক্ষকদের দুই একজন মাঝে মধ্যে এলেও বাকিরা  কেউ আসেন না।

প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় মিজনু খাতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক হলেন-- মিজনু খাতুন, নুর মিয়া, জাকির হোসেন, কামরুন্নাহার, মেরিনা সরকার, ফাতেমা আক্তার ও বেহেশতামা আক্তার।

স্কুলটির কয়েকজন শিক্ষার্থী দ্য ডেইলি স্টারকে জানায়, বহুদিন ধরে বিদ্যালয়ে কোনো পাঠদানই হচ্ছে না। মাঝে মাঝে মিজনু আপা পড়ান। পড়ালেখা না হওয়ার কারণে তারাও স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ পায় না।

কয়েকজন অভিভাবক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, করোনা মহামারির সময় কাটিয়ে বিদ্যালয় খোলার পর থেকেই এ অবস্থা চলছে। একজন শিক্ষক ছাড়া সবাই কুড়িগ্রাম শহরের বাসিন্দা। তারা বিদ্যালয়ে আসেন না। দুই সপ্তাহ পর বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় সই করে চলে যান। গ্রামের লোকজন শিক্ষা অফিসারের কাছে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। আশপাশে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় তারাও চরম বিপাকে পড়েছেন।

এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আজিজুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শহর থেকে আসা শিক্ষকরা খুব দাপট দেখান। তাদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে এসে পাঠদানের কথা বললে তারা ক্ষেপে যান। আমরা অভিভাবকরা অসহায় হয়ে পড়েছি।'

তিনি অভিযোগ করেন বলেন, 'বিদ্যালয়ে না আসার জন্য শহরের শিক্ষকরা চরের বিদ্যালয়ে পোস্টিং নেন। কিন্তু শিক্ষা অফিসার এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না।'

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সোহরাব হোসেন খন্দকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শিক্ষকের অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাকে একাধিকবার জানানো হয়েছে কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শহর থেকে আসা শিক্ষকরা খুব দাপট দেখান। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া যাচ্ছে না।

অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক জাকির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদ্যালয়টি দুর্গম এলাকায় হওয়ায় নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারছেন না। বিষয়টি শিক্ষা অফিস কর্তৃপক্ষ জানে।'

একই কথা বলেন শিক্ষক কামরুন্নাহার, ফাতেমা আক্তার, মেরিনা সরকার ও বেহেশতামা আক্তার।

তবে শিক্ষক নুর মিয়া বলেন, তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করেন। মাঝেমাঝে বিদ্যালয়ের জরুরি কাজে তিনি শিক্ষা অফিসে অবস্থান করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিজনু খাতুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মাঝে মাঝে নুর মিয়া ও মেরিনা সরকার বিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকে পাঠদান করান। আমি নিয়মিত উপস্থিত থাকি এবং পাঠদান দেওয়ার চেষ্টা করি।

'আমি যেহেতু প্রধান শিক্ষক নই এজন্য অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারছি না। অনুপস্থিত থাকা শিক্ষকরা জোর করে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন,' তিনি বলেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এইউইও) কানিজ আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

কুড়িগ্রামে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউইও) শরিফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) নবেজ উদ্দিন সরকারকে একাধিকবার ফোন ও টেক্সট মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুজাহিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

Comments

The Daily Star  | English
tailor injured during July mass uprising fights for dignity

Is respect too much to ask for?

Rasel Alam, 36, a tailor from Mohammadpur, has been fighting two battles since the July mass uprising -- one for his health and another for his dignity.

19h ago