যে স্কুলে শিশুরা বর্ণপরিচয় শেখে তালপাতায়

তালপাতায় লেখা
শিশু শিক্ষা নিকেতনে শিশুদের তালপাতায় লেখা শেখাচ্ছেন পন্ডিত কালীপদ বাছার। ছবি: সংগৃহীত

অতীতে পাঠশালায় শিশুদের শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত করাতেন পন্ডিতেরা। সেখানে বর্ণমালা এবং সংখ্যা শেখানো হতো কালিতে  বাঁশের কঞ্চির কলম ডুবিয়ে শুকনো তালপাতায়।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লেট-চক এবং তারপরে ব্ল্যাকবোর্ডের ব্যবহার এসেছে, পাঠশালার পরিবর্তে শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা হয়েছে।

তবে বাগেরহাটের চিতলমারির ডুমুরিয়া দক্ষিণপাড়া শিশু শিক্ষা নিকেতন ধরে রেখেছে সেই ঐতিহ্য। শিশুদের হাতে বাঁশের কলম আর কালিতে তালপাতায় ফুটে উঠছে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, শতকিয়া, নামতা আর নৈতিক শিক্ষা।

১৮ বছর ধরে চিতলমারীতে এই কাজটি করে আসছেন পন্ডিত কালীপদ বাছার।

চিতলমারী উপজেলার প্রত্যন্ত ডুমুরিয়া গ্রামে, ৭৫  বছর বয়সী পণ্ডিত কালিপদ বাছার গ্রামবাসীদের সহায়তায় স্কুলটি পরিচালনা করছেন। শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা দিচ্ছেন -- বর্ণমালা, সংখ্যা, নৈতিক পাঠ।

আশেপাশের পাঁচটি গ্রামের ৩৮ জন শিশু পণ্ডিত কালিপদর স্কুলে পড়ছে।

নিজের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক পন্ডিত কালীপদ বাছার। ছবি: সংগৃহীত

শান্তি লতা মন্ডল নামে একজন অভিভাবক বলেন, পণ্ডিত কালিপদ বাছার বাচ্চাদের খুব ভালো শেখান। তিনি তাদের বাঁশের কলম দিয়ে তাল পাতায় হাতে ধরে লেখার প্রশিক্ষণ দেন, শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তুত করেন এবং প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য মাসে মাত্র ১৫০ টাকা নেন।'

কালিপদ বাছার বলেন, 'তালপাতার অনুশীলন শিশুদের হাতের লেখা ভালো করতে সাহায্য করে। লাইন সোজা হয়।'

তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে। তবে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। জোয়ারের সময় নদীর পানি স্কুলের মাঠকে প্লাবিত করে বলে জানান তিনি।

বিদ্যালয়টির সেক্রেটারি সঞ্জিত রায় বলেন, 'এই বিদ্যালয়টি  ২০০৫ সালে স্থানীয়দের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে এখানে ৩৮ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। অনেক সমস্যার মধ্যে বিদ্যালয়টি চলছে। আমাদের জরুরী ভিত্তিতে একটি প্রবেশ পথ নির্মাণ করা দরকার।'

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালিদ হোসেন বলেন, 'বিদ্যালয়টি আমাদের শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাব্যবস্থাকে ধরে রেখেছে, যা একটি প্রশংসনীয় প্রয়াস। তারা যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সে বিষয়ে আমার কাছে আবেদন করলে আমি তাদের সহায়তার জন্য ব্যবস্থা দেবো।'

Comments

The Daily Star  | English

What if the US election ends in a Trump-Harris tie?

While not highly likely, such an outcome remains possible, tormenting Americans already perched painfully on the edge of their seats ahead of the November 5 election

3h ago