অন-ক্যাম্পাস কোর্স নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসির মতবিরোধ
গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনআই) মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে এনইউ কর্তৃপক্ষের মতবিরোধ চলছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে চার বিভাগে স্নাতক (সম্মান) প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তিসহ সব কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে ইউজিসি। একইসঙ্গে অন-ক্যাম্পাস স্নাতক প্রোগামে শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ কেন নেওয়া হয়েছে, সেই বিষয়ে এনইউ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
ইউজিসি কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, এনইউর মূল ক্যাম্পাসের প্রাথমিক কাজ হলো এর অধিভুক্ত কলেজগুলোর কার্যক্রম তদারকি করা, স্নাতকোত্তর পর্যায় থেকে এমফিল ও পিএইচডি পর্যন্ত গবেষণার অফার দেওয়া এবং অনুরূপ কার্য সম্পাদন করা।
তবে এনইউ রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন গতকাল ইউজিসিকে পাঠানো এক চিঠিতে বলেছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯২ অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এনইউর কাছ থেকে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর ও সচিব ফেরদৌস জামান।
অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, 'আমরা আইনি বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করব।'
'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন (অনার্স) প্রোগ্রামের জন্য ইউজিসির অনুমোদন চায়নি এবং কমিশন ক্যাম্পাসে কোর্স পরিচালনার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনবল ও সক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান', যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সরকারি ও বেসরকারি—উভয় বিশ্ববিদ্যালয়কেই কোনো কোর্স চালুর আগে কমিশনের অনুমোদন নিতে হয়।
ইউজিসির আপত্তি
গত ২০ জুলাই গাজীপুর কেন্দ্রীয় ক্যাম্পাসে এলএলবি, বিবিএ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্সে স্নাতক কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তিসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইনের কথা উল্লেখ করে ইউজিসি মঙ্গলবার বলেছে, দেশের 'কলেজ শিক্ষার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচির আধুনিকীকরণ ও উন্নতিসাধন, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও যোগ্যতা বৃদ্ধিসহ কলেজের যাবতীয় বিষয় ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়' হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়।
আইনের ৮(১) ধারা উল্লেখ করে ইউজিসি বলেছে, ডিগ্রি, ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট প্রদান সংক্রান্ত সব স্বীকৃত শিক্ষাদান সাধারণত কলেজ, স্কুল ও কেন্দ্র দ্বারা এককভাবে বা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিত সহযোগিতায় অথবা এই উদ্দেশ্যে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতায় পরিচালিত হবে৷
এই প্রেক্ষাপটে অন-ক্যাম্পাস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির সার্কুলারটি ১৯৯২ সালের আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করে ইউজিসি।
এনইউর জবাব
ইউজিসিকে দেওয়া চিঠিতে এনইউ বলেছে, ৪১(১) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও অন্যান্য কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি এনইউর অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক নিযুক্ত ভর্তি কমিটি কর্তৃক প্রণীত বিধি দ্বারা পরিচালিত হবে।
'আইন অনুযায়ী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্মান ও স্নাতকোত্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করবে। এর অর্থ মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত আইনসঙ্গত ও যথার্থ', এনইউ বলেছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্যাম্পাসে কোর্স চালানোর ক্ষেত্রে আইনি কোনো বিধি-নিষেধ নেই। আইনে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারি।'
'আমরা ইতোমধ্যে অনুমোদন নিয়ে এমফিল ও পিএইচডি কোর্স অফার করছি। আমাদের ইউজিসির কাছ থেকে নতুন করে অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন নেই', বলেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদ ডেইলি স্টারকে বলেন, উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণে ক্যাম্পাসে কোর্স করার আইনগত এখতিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রয়েছে।
'বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও প্রবিধান অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ক্যাম্পাসে মেডিসিন ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো কোর্স চালু করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আছে। তা ছাড়া অন্য কোনো কোর্স চালু ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিধিনিষেধ নেই।'
২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকটি মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদ।
সরকার থেকে আর্থিকভাবে স্বাধীন হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টির কোর্স চালুর জন্য ইউজিসির অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
Comments