স্কুলমাঠে বাড়ি-কলাবাগান, খেলাধুলা বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নে কুরুল কালীবাড়ী নিগমানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ দখল করে বাড়ি নির্মাণ ও কলাবাগান করায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

স্কুলমাঠে বাড়ি ও কলাবাগান তৈরি করায় একমাস ধরে খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত আছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কুরুল কালীবাড়ী নিগমানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

স্কুল প্রতিষ্ঠার ৩৫ বছর পর জমির মালিকানা দাবি করে মমিনুর রহমান ও তার লোকজন গত ২৬ ও ২৭ আগস্ট স্কুলমাঠে বাড়ি নির্মাণ করে কলাবাগান তৈরি করেন। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

এ বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ করার পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। স্কুলমাঠ দখল করায় বন্ধ আছে ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ।

ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

স্কুল সূত্র জানায়, স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৮৭ সালে আর সরকারিকরণ হয়েছিল ২০১৩ সালে। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ের নামে ৪৩ শতাংশ জমি দান করেছিলেন মৃত মনমোহিনী বর্মনী ও মোক্তার আলী। জমিদাতা মোক্তার আলীর দানকৃত সাড়ে ২১ শতাংশ জমি নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। মোক্তার আলীর ভাতিজা মমিনুর রহমান হঠাৎ ১১ শতাংশ জমির দাবি করে স্কুলমাঠ দখলে নিয়েছেন। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ৫ জন আর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪৯ জন।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী অপূর্ব রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, তারা গেল একমাস ধরে স্কুলমাঠে খেলাধুলা করতে পারছে না। ক্লাসরুমে চুপ করে বসে থাকতে হচ্ছে। স্কুলমাঠে বাড়ি আর কলা বাগান দেখতে খুবই খারাপ লাগছে।

একই শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, তারা স্কুলমাঠে খেলাধুলা চর্চা করতে না পারায় খুবই অস্বস্তিবোধ করছে। হঠাৎ তাদের খেলাধুলা চর্চা বন্ধ হওয়ায় তারা অসুস্থ অনুভব করছে। স্কুলে আসতে মন চায় না।

আশিষ রায় নামে একজন অভিভাবক বলেন, শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা চর্চার সুযোগ না পেলে তারা পড়াশুনায় মনযোগী হতে পারবে না। বিদ্যালয় মাঠ থেকে বাড়ি সরানো না হলে তিনি তার সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করাবেন।

অভিযুক্ত স্কুলমাঠ দখলকারী মমিনুর রহমান ডেইলি স্টারকে জানান, তার বাবা অজগর আলী ও চাচা মোক্তার আলী ছিলেন জমির মালিক। তার চাচা মোক্তার আলী অবৈধভাবে একাই সম্পূর্ণ জমি বিদ্যালয়কে দান করেছিলেন। তিনি তার বাবা আজগর আলীর অংশ ১১ শতাংশ জমিতে বাড়ি ও কলা বাগান তৈরি করেছেন।

তিনি বলেন, 'প্রয়োজন না থাকায় এতদিন জমি দখলে নেওয়া হয়নি। এখন প্রয়োজন হয়েছে তাই জমি দখলে নিয়েছি। আমি স্কুলমাঠ থেকে বাড়ি সরিয়ে নেব না। আমরা এই বাড়িতে বসবাস করবো।'

জমিদাতা মোক্তার আলীর ছেলে ও ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির দাতা সদস্য গোলাম মোস্তফা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার বাবা তার ভাইয়ের অংশসহ সাড়ে ২১ শতাংশ জমি স্কুল দান করেছিলেন। তিনি কিসের ভিত্তিতে এটি করেছিলেন সেটা আমি বলতে পারবো না। আমার চাচাতো ভাই জমির মালিকানা দাবি করে স্কুলমাঠ দখল করেছেন। কীভাবে এই স্থাপনা সরানো যায় সেটা স্কুল কর্তৃপক্ষই ব্যবস্থা নেবে।'

সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্কুলমাঠে বাড়ি ও কলা বাগান থাকায় শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা চর্চা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তারা ক্লাসে মনযোগীও হতে পারছে না। আমরা এ বিষয়টা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন।'

প্রধান শিক্ষক নিলুফা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাপ্তাহিক ছুটির দিনে স্কুলমাঠে বাড়ি ও কলা বাগান তৈরি করেন মমিনুর রহমান। আমি এ ব্যাপারে লিখিতভাবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। সমস্যাটি জমিদাতার পরিবার থেকে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু জমিদাতার পরিবার থেকেও এ সমস্যা সমাধানে কোনো সাড়া মিলছে না। স্কুলমাঠ দখল হওয়ায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজও বন্ধ আছে।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ইউইও) আনোয়ারুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতায় ওই বিদ্যালয়ের জমি সংক্রান্ত জটিলতা সমাধানের প্রক্রিয়া করা হচ্ছে।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহমুদা মাসুম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এ বিষয়ে অবগত আছি। কাগজপত্র পর্যালোচনা চলছে। শিগগির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে স্কুলমাঠকে দখলমুক্ত করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

13h ago