ছাত্রশিবিরের উপস্থিতিতে অসন্তোষ, জাকসু নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময় সভা স্থগিত
ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাদের উপস্থিতির কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আয়োজিত মতবিনিময় সভা বর্জন করেছেন বিভিন্ন প্রগতিশীল ও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম দ্বিতীয় দফায় এই সভা আহ্বান করেছিলেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বিকেল ৪টায় সভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আমন্ত্রণ না পেলেও ছাত্রশিবিরের নেতারা সভায় অংশ নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিবির নেতাদের উপস্থিতিতে প্রগতিশীল সংগঠনের প্রতিনিধি ও প্রশাসনের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় উপস্থিত সবাইকে তাদের সাংগঠনিক পরিচায় জানাতে বলা হয় এবং চারজন তাদের শিবির সদস্য পরিচয় দেন।
এরপরই ছাত্রদল ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা প্রতিবাদ জানান। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (অ্যাডমিন) অধ্যাপক ড. মো. সোহেল আহমেদ ছাত্র সংসদের (জাকসু) সভাপতি ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসানের অনুপস্থিতির কারণ দেখিয়ে সভা মুলতবি করেন।
অধ্যাপক সোহেল আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এরপরই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা সভা বর্জন করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। শিবিরকে 'সন্ত্রাসী সংগঠন' আখ্যা দিয়ে তারা স্লোগান দিতে দিতে সভা কক্ষ ত্যাগ করেন।
অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলন, জুলাই গণহত্যা বিচার নিশ্চিত পরিষদ ও গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের মতো সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর সমালোচনা করে এবং 'বাকশাল ও মুজিববাদের দোসর' আখ্যা দেয়। তারা ছাত্রশিবিরের সমর্থনে পাল্টা বিক্ষোভ করে।
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শরণ এহসান বলেন, 'শিবির নেতারা উপস্থিত থাকায় আমরা সভা বর্জন করেছি। সাংস্কৃতিক জোট সব সময় ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে এবং আমরা শিবিরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করি না।'
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাহাঙ্গীরনগর শাখার সংগঠক সজীব আহমেদ বলেন, '১৯৮৯ সালে কবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে ২২টি ছাত্র সংগঠন সম্মিলিতভাবে জাবিতে শিবিরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছিল। শিবির একটি স্বীকৃত সন্ত্রাসী দল। এই ধরনের সংগঠনের সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসতে পারি না।'
এই ব্যাপারে ইসলামী ছাত্রশিবিরের দায়িত্বশীল কেউ কোনো মন্তব্য করেননি।
প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনকে ইঙ্গিত করে জুলাই গণহত্যা বিচার নিশ্চিত পরিষদের কর্মী শোয়েব হাসান বলেন, 'যথাযথ জনসমর্থন ছাড়াই কিছু অবৈধ ছাত্র সংগঠন এখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। যে কারণে আমরা সভা বর্জন করতে বাধ্য হয়েছি। তাদের কর্মকাণ্ড চরমভাবে নিন্দনীয় এবং তাদের কারণেই জাকসু নিয়ে কোনো ফলপ্রসূ আলোচনা সম্ভব হয়নি।'
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রশিদুল আলম বলেন, 'জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বদ্ধপরিকর। আমরা বিভাগ ও হল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আবারও আলোচনা শুরুর পরিকল্পনা করছি।'
Comments