জাবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সহসমন্বয়কসহ ১৭ জনের পদত্যাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ সমন্বয়ক ও ৪ সহসমন্বয়ক পদত্যাগ করেছেন। তারা এই আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে সরকারি দলের মতো আচরণ ও গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট–বিরুদ্ধ কাজ করার অভিযোগ তুলেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

বক্তারা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন নয় দফার ওপর ভিত্তি করে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। পরবর্তীতে দেখা যায়, যে নয় দফার ওপর ভিত্তি করে সাধারণ মানুষ জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছে, নয় দফায় অন্তর্ভুক্ত দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ, জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার এবং আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের দাবিগুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একপ্রকার নিশ্চুপ রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠনের মতো ভূমিকা পালন করছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সর্বস্তরের আন্দোলনকারীদের একই ব্যানারে অন্তর্ভুক্ত করতে ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। একইসঙ্গে এই ব্যানার এখনো বজায় থাকা আন্দোলনে সব পেশার, সর্বস্তরের ও সব দলের মানুষের অংশগ্রহণের ইতিহাসকে ম্লান করে দিচ্ছে, বলেন বক্তারা।

তারা আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আরও জোরাল ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে যত দ্রুত সম্ভব বিলুপ্ত করে দিতে হবে।

পদত্যাগ করা সমন্বয়কেরা হলেন আবদুর রশিদ জিতু, রুদ্র মুহাম্মদ সফিউল্লাহ, হাসিব জামান, জাহিদুল ইসলাম ইমন, জাহিদুল ইসলাম, ফাহমিদা ফাইজা, রোকাইয়া জান্নাত ঝলক, মিশু খাতুন, রাফিদ হাসান রাজন, হাসানুর রহমান সুমন, আব্দুল হাই স্বপন, নাসিম আল তারিক ও ঐন্দ্রিলা মজুমদার।

সহসমন্বয়করা হলেন জিয়া উদ্দিন আয়ান, তানজিম আহমেদ, জাহিদুল ইসলাম বাপ্পী ও সাইদুল ইসলাম।

গত ৪ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেলকে আহ্বায়ক ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহফুজ ইসলাম মেঘকে সদস্য সচিব করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত কিছুদিন ধরেই তাদের মধ্যে মতানৈক্য স্পষ্ট হচ্ছিল। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শামীম মোল্লা হত্যাকাণ্ডের ভিডিওতে এক সমন্বয়ক জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি মামলাও হয়েছে।

ব্যক্তিগত প্রভাব খাটানো ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো দায়ও এসেছে লিমন নামে শাখা সহসমন্বয়কের বিরুদ্ধে। এরই জেরে গুঞ্জন ওঠে, আরও সমন্বয়ক পদত্যাগ করতে পারেন। এ পর্যন্ত ১৯ জন পদত্যাগ করলেন, অব্যাহতি পেয়েছেন দুইজন। সব মিলিয়ে ২১ জন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার পদ ছাড়লেন।

Comments

The Daily Star  | English

Pathways to the downfall of a regime

The erosion in the credibility of the Sheikh Hasina regime did not begin in July 2024.

6h ago