ঢাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার চেষ্টা

‘অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানের ভূমিকা অত্যন্ত দায়িত্বশীল ছিল’

ঢাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার চেষ্টা
অপরাজেয় বাংলা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা এসএম এহসান উল্লাহ ওরফে ধ্রুব আত্মহত্যা চেষ্টা ও প্রফেসর ড. তানজিমউদ্দীন খানের অবস্থান স্পষ্ট করতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ১৩তম ব্যাচের প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা কথা বলেছেন। ৭২ জন শিক্ষার্থী একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন তাদের অবস্থান।

এতে বলা হয়েছে—'গত ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এহসান ধ্রুব তার ফেসবুক প্রোফাইলে বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানকে দোষী উল্লেখ করে আত্মহননের ঘোষণা প্রচার করেন। সেই পোস্টে তিনি তানজীম স্যারকে পাঠানো মেইলের স্ক্রিনশটও যুক্ত করেন।'

'পোস্টটি দেওয়ার পর থেকে এহসান ধ্রুবকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক চেষ্টার পর আনুমানিক রাত সাড়ে ১২টায় তাকে শহীদুল্লাহ হলের পুকুর পাড়ে পাওয়া যায় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়।'

'অত্যন্ত স্বস্তির ব্যাপার এই যে, সে বর্তমানে সুস্থ ও বাসায় আছে। কিন্তু ইতোমধ্যে এহসান ধ্রুবর প্রচারিত একপাক্ষিক বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে একটি মহল বিভ্রান্তিবশত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রচার করতে শুরু করে এবং ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থান নেয়।'

'এর পরিপ্রেক্ষিতে জনমনে তৈরি হওয়া বিভ্রান্তি দূর করতে আমরা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা, যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এহসান ধ্রুবর এই প্রতিক্রিয়া সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে নিজেদের বক্তব্য এবং অবস্থান স্পষ্ট করছি।'

বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীরা লিখেছেন, 'ঘটনার শুরু ২ মার্চ বিকালে, তানজীম স্যারের ক্লাস চলাকালে। সম্ভবত ক্লাস শুরু হওয়ার আগে এহসান ধ্রুব স্বপ্রণোদিত হয়ে তানজীম স্যারের কাছে ব্যাচের একটা বিষয়ে অভিযোগ দেয়। যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ সেই ঘটনায় তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সে ক্লাসে আসার আগেই স্যার আমাদের ক্লাস শুরু করেন এবং ইতোমধ্যে তিনি সহপাঠীদের নিয়ে গুজব ছড়ানোকে ইর‍্যাশনাল বিহেভিয়ার হিসেবে অভিহিত করেন। এরপর তিনি আমাদের পড়ানো শুরু করেন।'

'ক্লাসের মাঝামাঝি সময়ে এহসান ধ্রুব ক্লাসরুমে ঢোকেন। ক্লাসের শেষের দিকে স্যার ধ্রুবকে দাঁড়াতে বলেন এবং তার রটানো গুজবের সূত্র সম্বন্ধে জানতে চান। ধ্রুব কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং এর বদলে স্ক্রিনশট দেখানোর ইচ্ছা পোষণ করে। তানজীম স্যার এরপরও নাম বলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করলে সে নাম বলতে ব্যর্থ হয়। তানজীম স্যার তখন সহপাঠীদের নামে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে বারণ করেন।'

'প্রত্যুত্তরে এহসান ধ্রুব আশ্চর্যজনকভাবে They conspired against me so I conspired against them (তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, তাই আমিও ষড়যন্ত্র করছি) এই স্বীকারোক্তিমূলক বাক্যটি ব্যবহার করে যা শুনে স্বাভাবিকভাবে আমরা অবাক হই।'

'এরপর তানজীম স্যার তাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে নিজের সহপাঠীদের সম্পর্কে কী বলা যায় আর যায় না সেটি তার বোঝা উচিত। প্রত্যুত্তরে যখন ধ্রুব কিছু বলতে চায় তখন স্যার তাকে থামিয়ে বলেন যে, একজনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কারণে সেই ব্যক্তির সম্পর্কে কুৎসা রটনা করার অধিকার তার (ধ্রুব) নেই। এরপর স্যার ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলে ধ্রুব তার কাছে ক্ষমা চাইতে যান। পরবর্তীতে স্যার তার সঙ্গে নিচে নেমে তাকে ফুচকা খাওয়ান।'

'এই ঘটনায় আমাদের সহপাঠী ধ্রুবর ফেসবুক পোস্ট ও আত্মহননের চেষ্টা বেশ দুঃখজনক। কিন্তু একটা ব্যাপার ভালোভাবে স্পষ্ট করা প্রয়োজন যে এই পুরো ঘটনার সঙ্গে এহসান ধ্রুবর রাজনৈতিক পরিচয়ের কোনোই যোগসূত্র ছিল না।'

'এহসান ধ্রুবকে খুঁজে বের করতে আমাদের ব্যাচ এবং সম্পূর্ণ বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ সর্বাধিক তৎপরতা দেখিয়েছে। আমরা তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। তবে উপরে বর্ণিত প্রেক্ষাপট এবং গত পরশু থেকে এখন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা স্পষ্ট করা খুবই জরুরি। এহসান ধ্রুবর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার কার্যকারণ একান্তই ব্যক্তিগত। এই ঘটনায় অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানের ভূমিকা অত্যন্ত দায়িত্বশীল ছিল এবং তা নির্দ্বিধায় প্রশংসার দাবিদার।'

'একজন নারী শিক্ষার্থীকে হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করতে একজন সচেতন শিক্ষকের যে ভূমিকা পালন করার কথা, তিনি তাই করেছেন। ঠিক কী কারণে এহসান ধ্রুব এই ঘটনার সঙ্গে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় জুড়ে দিয়ে একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করলেন তা ক্লাসে উপস্থিত পঞ্চাশের বেশি শিক্ষার্থীর কাছে দুর্বোধ্যই বটে।'

'তানজীম স্যার এই ঘটনা চলমান অবস্থায় ছাত্রলীগ কিংবা কোনোপ্রকার রাজনৈতিক পরিচয়ের দিকে বিন্দুমাত্র ইঙ্গিত না করলেও স্যারের নামে এই ধরনের কুৎসা রটানো কিংবা বিদ্বেষমূলক আচরণ সত্যিই দুঃখজনক।'

'এহসান ধ্রুবর ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক উস্কানি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও অমূলক এবং তা প্রতিরোধ করতে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের প্রত্যেক শিক্ষার্থী সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করবে, এই প্রত্যয় আমরা ব্যক্ত করতে চাই। পাশাপাশি সব রাজনৈতিক ও শিক্ষার্থী মহলকে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।'

Comments

The Daily Star  | English

What's causing the unrest among factory workers?

Kalpona Akter, labour rights activist and president of Bangladesh Garment and Industrial Workers Federation, talks to Monorom Polok of The Daily Star about the recent ready-made garments (RMG) workers’ unrest.

8h ago