চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছেলেদের ৩৫ মেয়েদের ৩৭: যে ব্যাখ্যা দিলেন কমিটি প্রধান

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ। ছবি: আনিসুর রহমান

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পুরুষের ক্ষেত্রে ৩৫ ও নারীর ক্ষেত্রে ৩৭ বছরের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। একই সঙ্গে কেন এই সুপারিশ, তার ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন।

আজ সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, 'মেয়েদের একটু আলাদা করে বেশি বয়স দেওয়া হয়েছে। মেয়েদের আমরা এ কারণে দিয়েছি যে, মেয়েদের ছেলেদের মতো ওই বয়সে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয় না।‌ পারিবারিক দায়িত্ব থাকে, বিয়ে হয়ে যায়, বাচ্চা হয়। তাই তারা যেন আসতে পারে।'

'এছাড়া আমাদের নারী কর্মকর্তার সংখ্যা তুলনামূলক কম। কোটা আছে কিন্তু অতটা পূরণ হয় না এখনো। সেজন্য আমরা এ সুপারিশ দিয়েছি। যাতে নারীরা এ সুবিধাটা পায়, তারা আসতে পারে,' বলেন তিনি।

আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, 'চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ সবার জন্য প্রযোজ্য হবে, তবে নারীদের জন্য আমরা দুই বছর বাড়িয়ে ৩৭ বছর সুপারিশ করেছি। এটা করেছি কারণ আরও বেশি সংখ্যক নারী অংশগ্রহণ করতে পারে, আসতে পারে, পরীক্ষা দিতে পারে, চাকরিতে আসতে পারে।'

কমিটির আহ্বায়ক বলেন, 'আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা পাশের দেশগুলোও দেখেছি। বিভিন্ন দেশে যে বয়সসীমা আছে সেটার সঙ্গে আমাদের সুপারিশ সঙ্গতিপূর্ণ হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে আলাদা কিছু নয়।'

'আমি শুনেছি উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হবে, এ বিষয়ে তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। পাশের দেশগুলোতে এমন সুবিধা আছে সেজন্য আমরা এটা করেছি। আমরা নতুন কিছু আবিষ্কার করিনি,' বলেন তিনি।

'সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরের বিষয়ে কমিটি কোনো সুপারিশ করেনি' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এখন যাদের বিষয়ে সুপারিশ করলাম, তারা চাকরি করে অবসরে আসতে অনেক সময়। এর মধ্যে অনেক কিছু চিন্তা করে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।'

তিনি আরও বলেন, 'এখন যারা অবসরে যাবেন, তারা আগের বয়স অনুসারে চাকরিতে ঢুকেছেন, তাদের অবসরের ক্ষেত্রে তো কোনো অসুবিধা নেই। আগামী ৮-১০ বছর পর্যন্ত তো তারাই অবসরে যাবেন। এটা নিয়ে এখনই চিন্তার কোনো কারণ নেই। এখন চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর কারণে তাদের ওপর তো কোনো প্রভাব পড়ছে না।'

'যাদের বয়সের সুপারিশ আমরা করেছি তারা এখনো চাকরিতে ঢোকেনি, জন্মই হয়নি। তারা চাকরিতে ঢোকার পর চাকরি করলে তখন কী করতে হবে, সেটা সরকার সেসময় সিদ্ধান্ত নেবে,' বলেন আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী।

চাকরিতে অবসরের বয়স বাড়ানো নিয়ে কোনো ক্ষোভ হবে না বলেও জানান কমিটির আহ্বায়ক।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সাধারণ প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়স ৩০ এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৩২ বছর।

সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণের দাবিতে অনেকদিন ধরে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা। ‌গত ৩০ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন আন্দোলনরতরা। 
তাদের সরিয়ে দিতে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড ছোড়ে পুলিশ। এরপরও তারা সেখানে অবস্থান নেন। পরে তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন।

পরে ওইদিনই চাকরি প্রার্থীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সাবেক সচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী এ কমিটির আহবায়ক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সদস্য সচিব।

কমিটিতে সাবেক যুগ্মসচিব কওছার জহুরা, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইকবাল ও তখনকার অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বর্তমানে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সদস্য হিসেবে ছিলেন।

কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছিল। কমিটি গত ৯ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের প্রতিবেদন দাখিল করে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Those involved in Ijtema ground deaths won't be spared: home adviser

He also said that those who are involved with the killings must be brought to book.

40m ago