ফিরছে এয়ারশিপের সুদিন

ফ্লাইং হোয়েল (উড়ন্ত তিমিমাছ) এয়ারশিপ। ছবি: ফ্লাইং হোয়েলের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
ফ্লাইং হোয়েল (উড়ন্ত তিমিমাছ) এয়ারশিপ। ছবি: ফ্লাইং হোয়েলের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে জানা যায়, একসময় আকাশে এয়ারশিপেরই রাজত্ব ছিল। ওজনে আজকালকার এরোপ্লেনের চাইতে বহুগুণে হালকা এসব আকাশযান তখন সাঁই সাঁই করে উড়ে বেড়াতো। প্রায় ১০০ বছর আগে সে স্বর্ণযুগের অবসান হয়েছে। তবে আকাশপথে আবারো নিজের জায়গা করে নিতে তারা ফিরছে। এই প্রত্যাবর্তনের পেছনে কাজ করে চলছে ফ্লাইং হোয়েলস, এলটিএ রিসার্চ, বিএএসআই সহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান।

'ফ্লাইং হোয়েলস' (উড়ন্ত তিমি) নামের এক ফরাসি প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে সম্প্রতি একটি এয়ারশিপ নির্মাণ করা হচ্ছে। অবশ্য বিশাল আকৃতি ছাড়া তিমি নামের প্রাণীটির সাথে আদতে এই আকাশযানের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়াও নতুন আকাশযানটির 'এলসিএ৬০টি' বলে একটি খটমটে নামও রয়েছে; ইংরেজিতে যার পূর্ণরূপ দাঁড়ায়– 'লার্জ ক্যাপাসিটি এয়ারশিপ ৬০ টন'।

নাম থেকেই এর আকার ও পরিবহন ক্ষমতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। অন্তত ২ জন ক্রু নিয়ে ১টি ফ্লাইং হোয়েল ৬০ টন মালামাল পরিবহন করতে পারবে, যা কিনা ২ থেকে ৩টি মালবাহী ট্রাকের সমান। একে মূলত বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে বায়ুকলের পাখা, নির্মাণকাজের ইট-বালি-সুড়কি, বড় বড় গাছের মতো ভারি সব পণ্য পরিবহনের উপযোগী করে নির্মাণ করা হচ্ছে। শুধু পরিবহন নয়, মাঝপথে মাটিতে অবতরণ না করেও পণ্য নামিয়ে দিতে পারে এই এয়ারশিপটি। এতে করে অনেকটা জ্বালানি বেঁচে যাবে, আর অবতরণ নিয়েও কোনো ঝক্কিও পোহাতে হবে না।

ফ্লাইং হোয়েলস (উড়ন্ত তিমিমাছ) এয়ারশিপ। ছবি: ফ্লাইং হোয়েলের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
ফ্লাইং হোয়েলস (উড়ন্ত তিমিমাছ) এয়ারশিপ। ছবি: ফ্লাইং হোয়েলের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

এখনো এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সব ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে প্রথম এয়ারশিপটি আকাশে উড়বে এবং ২০২৭ সালের দিকে চালু হবে বাণিজ্যিক ফ্লাইট। এয়ারশিপের নতুন প্রজন্ম নির্মাণে এই প্রতিষ্ঠানটি বেশ বদ্ধপরিকর। এর যোগাযোগ প্রধান রোমান শ্ল্যাকের মতে, অবকাঠামোগত সমস্যা থাকা সত্ত্বের মালামাল পরিবহনের কাজ করতে সক্ষম হবে এটি। তিনি আরো বলেন, 'এ ক্ষেত্রে সব ধরনের বাধা-বিপত্তি ও সমস্যাকে অতিক্রম করার মাধ্যমে আমরা উড্ডয়ন জগতে সম্ভাবনার নতুন মাত্রা যোগ করব।'

শুধু পরিবহন ক্ষমতার দিকেই নজর দেননি নির্মাতারা, খেয়াল রাখা হয়েছে পরিবেশবান্ধব হওয়ার বিষয়টিতেও। বন-জঙ্গল ও প্রত্যন্ত এলাকার পথের কোনো ক্ষতি না করে, ১০ শতাংশেরও কম কার্বন নিঃসরণ করে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃংখলের সঙ্গে ছোট ছোট গ্রাম, পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়গুলোকে সংযুক্ত করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। রোমান শ্ল্যাক তার এক বক্তব্যে আশা প্রকাশ করেন, 'বিশ্বের সব অঞ্চলে এয়ারশিপ চালু করা আমাদের লক্ষ্য।'

জ্বালানি হিসেবে এতে হাইড্রোজেনের পরিবর্তে হিলিয়ামের ব্যবহার হবে। নবায়নযোগ্যতা ও কম খরচের দিক দিয়ে হাইড্রোজেন এগিয়ে থাকলেও অদাহ্য হওয়ার ফলে নিরাপদ যাত্রার জন্য ফ্লাইং হোয়েলস এবং এলটি রিসার্চের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রথম পছন্দ হিলিয়াম গ্যাস।

এলটিএ'র এয়ারশিপ। ছবিঃ এলটিএ'র ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

আগে হাইড্রোজেন জ্বালানি ব্যবহারের কারণে হাইডেনবার্গের মতো উড়োজাহাজ বিপর্যয়ও এই বাড়তি সতর্কতার কারণ। তবে হিলিয়ামের খরচ এই এয়ারশিপের মতোই আকাশচুম্বী। প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহও কম।

জ্বালানি গ্যাস ছাড়াও এসব এয়ারশিপের স্থান সংকুলান নিয়েও দুশ্চিন্তার রেখা দেখা দিয়েছে নির্মাতাদের কপালে। বিভিন্ন দেশে উড়োজাহাজ সংরক্ষণের স্থান বা 'হ্যাঙ্গার' খুঁজে চলেছেন তারা।

ফ্লাইং হোয়েলস যখন ফ্রান্সে নতুন হ্যাঙ্গার স্থাপনের কথা ভাবছে, তখন অন্য এয়ারশিপ নির্মাতা কোম্পানিগুলো প্রাচীন আর ঐতিহাসিক সব সংরক্ষণ স্থান ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছে। এলটিএ রিসার্চ ইতোমধ্যে ওহাইওতে ১৯২৯ সালে নির্মিত অ্যাক্রম এয়ারডক এবং সানফ্রান্সিসকো উপসাগরের কাছে অবস্থিত ১৯৩৩ সালে স্থাপিত একটি হ্যাঙ্গার কিনে নিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি হাইব্রিড এয়ার ভেহিকলস (এইচএভি) কার্ডিংটন এয়ারফিল্ডের হ্যাঙ্গারগুলো কাজে লাগাচ্ছে।

ফ্লাইং হোয়েলস (উড়ন্ত তিমিমাছ) এয়ারশিপ। ছবি: ফ্লাইং হোয়েলের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
ফ্লাইং হোয়েলস (উড়ন্ত তিমিমাছ) এয়ারশিপ। ছবি: ফ্লাইং হোয়েলের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

ফ্লাইং হোয়েলস বর্তমানে ইউরোপ, কানাডা ও এশিয়ার বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল জুড়ে রাষ্ট্রীয় এবং বেসরকারি– উভয়ভাবেই আর্থিক বিনিয়োগ যোগাড়ের চেষ্টা করছে এবং ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এই এয়ারশিপের বিস্তার ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

তথ্যসূত্র:

সিএনএন

এইরোটাইম ডট কম 

 

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk30 lakh: Prof Yunus

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus today said each martyr's family will get Tk 30 lakh from the government, reiterating that his government will rehabilitate families of all mass-uprising martyrs and bear the full expanses of the treatment of all the injured..In a televised address to the n

11m ago