যে কারণে বোর্ডিং পাসের ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করবেন না

যে কারণে বোর্ডিং পাসের ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করবেন না
ছবি: সংগৃহীত

উড়োজাহাজে ভ্রমণের সময় বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের কাউন্টার থেকে প্রত্যেক যাত্রীকে বোর্ডিং পাস দেওয়া হয়, যেখানে যাত্রীর নামের পাশাপাশি সিট নাম্বারও লেখা থাকে। যেহেতু ভ্রমণ শেষে এই বোর্ডিং পাসের আর প্রয়োজন হয় না, তাই অনেকেই বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় সেটি ডাস্টবিনে অথবা যত্রতত্র ফেলে দেন।

অনেকেই আবার ভ্রমণের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বন্ধুদের জানাতে বোর্ডিং পাসের ছবি ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে আপ করেন। তবে যাত্রীর পুরো নাম, যাত্রা শুরুর স্থান ও সময় এবং গন্তব্য- এসব ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে বোর্ডিং পাসে। কোনো হ্যাকার বা ভুল কারও হাতে পড়লে এসব ব্যক্তিগত তথ্য যাত্রীর নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকপূর্ণ হতে পারে। 

আমরা হয়তো অনেকেই ভালোভাবে জানি না যে বোর্ডিং পাসে থাকা ছোট্ট বারকোডে আমাদের প্রচুর ব্যক্তিগত তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে।

বোর্ডিং পাসে যে বারকোড থাকে, সেটি যে শুধু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ্যই স্ক্যান করতে পারে তা নয়। স্মার্টফোনে এখন অসংখ্য ফ্রি স্ক্যানার অ্যাপ আছে, যেগুলোর সাহায্যে যে কেউ আপনার বোর্ডিং পাস স্ক্যান করে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে, যা আপনার জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এমনকি বোর্ডিং পাসের ছবি অনেকে ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমেও পোস্ট করেন, যেখান থেকে যে কেউ আপনার অনেক ব্যক্তিগত তথ্য জেনে যেতে পারে। তাই সামাজিক মাধ্যমে বোর্ডিং পাসের ছবি দেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

করোনা মহামারির সময় সংস্পর্শ এড়াতে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে কিউআর কোড স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে মেন্যু দেখার প্রচলন চালু হয়। ফলে অনেকেই বারকোড বা কিউআর কোড স্ক্যানিংয়ের সঙ্গে অভ্যস্ত। 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তথ্যটি বেহাত হতে পারে সেটি হচ্ছে আপনার এয়ারলাইন গ্রাহক নম্বার। এই নম্বারের সাহায্যে আপনি কত ঘন ঘন বিমানভ্রমণ করেন, কোন কোন জায়গায় যান, আপনার ফোন নাম্বার ও ইমেইল ঠিকানা- ইত্যাদি সব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য অন্য কেউ দেখে ফেলতে পারে। কোনো হ্যাকার আপনার বোর্ডিং পাসের বারকোড স্ক্যান করে কত অর্থ দিয়ে টিকেটটি কিনেছেন এমনকি আপনার ক্রেডিট কার্ডের শেষ ৪ ডিজিটও বের করে ফেলতে পারে। 

তথ্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?

এয়ারলাইনস গ্রাহক নম্বরের সাহায্যে কোনো হ্যাকার আপনার পুরো নাম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডি, গোপনীয় নিরাপত্তা প্রশ্ন (যেমন- আপনার পছন্দের পোষা প্রাণীর নাম কী, কোথায় জন্মগ্রহণ করেছেন) ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য পেতে পারে। এমনকি তারা আপনার এয়ারলাইন্স একাউন্টে ঢুকে ফ্লাইট, উপহারের পয়েন্টসহ অনেক তথ্যই পরিবর্তন করে দিতে পারে। দক্ষ কোনো হ্যাকার এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ সেজে ফোন করে আপনার আরও ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। তারা যেহেতু আপনাকে আপনার পুরো নাম, গ্রাহক নম্বর, ক্রেডিট কার্ডের নম্বরসহ সব তথ্য দেবে, তখন আপনিও সহজেই তাদেরকে বিশ্বাস করতে পারেন। ফলে ব্যক্তিগত তথ্যের, এমনকি আপনার নিজের নিরাপত্তাও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে। 

সব যাত্রীর হয়তো এয়ারলাইন গ্রাহক নাম্বার থাকবে না। কিন্তু তারপরও বোর্ডিং পাসের ছবি কাউকে দেখানো উচিত নয়। খুব দক্ষ কোনো হ্যাকার সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইট হ্যাক করে আপনার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। তাই ইন্টারনেটের এই স্বর্ণযুগে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। 

বোর্ডিং পাসে থাকা তথ্য কীভাবে সংরক্ষণ করা উচিত?

তাহলে বোর্ডিং পাস কী করব? সহজ কথায় বলতে গেলে, আপনি আপনার আইডি কার্ড বা পাসপোর্ট যেভাবে সংরক্ষণ করেন, বোর্ডিং পাসের ক্ষেত্রেই তাই করা উচিত। বিমানের আসনে কিংবা অন্য কোথাও এটিক ফেলে যাবেন না। ভ্রমণ শেষে ভালোভাবে ছিঁড়ে কোনো ডাস্টবিনে ফেলে দিন অথবা সম্ভব হলে পুড়িয়ে ফেলুন। 

আর অবশ্যই ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকে বোর্ডিং পাসের ছবি পোস্ট করবেন না। এটি আপনার অনেক বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষাকে সবসময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। 

 

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

 

Comments

The Daily Star  | English

'No legal bar' to Babar's release after acquittal in another 10-truck arms case

He has now been cleared in both cases filed over the high-profile incident from 2004

2h ago