যেমন ছিল ইলন মাস্কের শৈশব

যেমন ছিল ইলন মাস্কের শৈশব
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায় ভাইদের সঙ্গে মাস্ক। ছবি: মেই মাস্ক, মাস্কের মা

বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও অন্যতম প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক গত ২ দশকে পেপ্যাল, স্পেসএক্স, টেসলা এবং টুইটারের মতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছেন কিংবা এখনো করছেন। সফল উদ্যোক্তা হওয়ার আগে তরণ বয়সেও মাস্কের জীবন ছিল নানা ঘটনায় পরিপূর্ণ। নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশা তার খুব ছোটবেলা থেকেই। অল্প বয়সেই নিজে নিজে রকেট তৈরি করেছেন তিনি। নিজেই কোডিং করে ভিডিও গেম তৈরি করেছেন। তবে ছোটবেলায় বাসায় ও স্কুলে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখিও হতে হয়েছে তাকে। 

চলুন জেনে নেওয়া যাক, কেমন ছিল ইলন মাস্কের তরুণ বয়স।

বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে চকলেট বিক্রি করতেন মাস্ক

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায় বড় হয়েছেন মাস্ক। সে সময় তিনি, তার ভাই কিম্বাল ও অন্যান্য কাজিনরা দেশটির রাজধানীর ধনী এলাকায় মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে চকলেট বিক্রি করতেন। 

তারা মানুষের বাসায় যেতেন এবং ২০ গুণ লাভে বাসায় তৈরি চকলেট বিক্রি করতেন। 

২০১৭ সালে সিএনবিসির সঙ্গে এক স্বাক্ষাৎকারে কিম্বাল বলেছিলেন, 'একটি ইস্টার এগ বানাতে আমার খরচ হতো ৫০ সেন্ট, কিন্তু বিক্রি করতাম ১০ ডলারে। সবাই আমাকে শুধু জিজ্ঞেস করতো কেন একটি ইস্টার এগ ১০ ডলারে বিক্রি করছি! জবাবে আমি বলতাম, 'ওকে, আপনারা একজন তরুণ উদ্যোক্তাকে সহায়তা করছেন। আমার কাছে ছাড়া এটি আর কোথাও পাবেন না। আর আপনারা জানেন ১০ ডলার খরচ করার সামর্থ আছে আপনাদের।'

তাকে অপদস্থ করা হতো

ছোটবেলায় প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে মাস্ককে। প্রিটোরিয়ার একটি স্কুলে পড়েছেন তিনি। সহপাঠীদের মধ্যে মাস্ক সবচেয়ে স্মার্ট ছিলেন, সেটি তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি সব সময় নতুন কিছু শেখা ও বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতেন। 

২০১৫ সালে প্রকাশিত 'ইলন মাস্ক: টেসলা, স্পেসএক্স, অ্যান্ড দ্য কোয়েস্ট ফর এ ফ্যান্টাস্টিক ফিউচার' বইয়ের জন্য দেওয়া এক স্বাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'ছেলেদের গ্যাং তাকে তাড়া করতো এবং একবার মেরে তাকে সিঁড়িতে ফেলে দিয়েছিল। এই ঘটনায় হাসপাতালেও যেতে হয়েছিল মাস্ককে।' 

'আমাকে মারতে মারতে প্রায় মেরে ফেলছিল তারা।'

১৫ বছর বয়স পর্যন্ত বুলিংয়ের শিকার হতে হয়েছিল মাস্ককে। এরপর তিনি নিজেকে রক্ষায় জুডো, কারাতে ও রেসলিং শেখেন। 

মাস্কের বাবা-মা ভাবতেন তিনি কানে শোনেন না

ছোটবেলায় মাস্ক কোনো কিছু নিয়ে এতটাই গভীর মনেযাযোগে ডুবে থাকতেন যে তার বাবা-মা চিন্তায় পড়ে যান যে, তিনি বধির কি না, তা জানার জন্য ডাক্তারের শরাণাপন্নও হয়েছিলেন।  পরে অবশ্য তার মা বুঝতে পেরেছিলেন যে এটি তার নতুন আবিষ্কার সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার উপায়।

মাস্কের মা বলেন, 'সে যখন কোনো কিছু নিয়ে ভাবে, তখন দেখবেন সে ভিন্ন জগতে চলে গেছে। সে এখনো এই কাজ করে। এখন আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করি না। কারণ আমি জানি সে হয়তো নতুন রকেট বা অন্য কিছু নিয়ে ভাবে।'

নিজের জন্য বিস্ফোরক ও রকেট তৈরি করেছিলেন মাস্ক

মাস্কের বাবা-মা যখন বাসায় থাকতেন না, তখন তিনি বাসার রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির তত্বাবধানে থাকতেন। মাস্ক জানান, তিনি যাতে বাসার কিছু নষ্ট না করেন, সেদিকে লক্ষ্য রাখতেন ওই নারী। 

মাস্ক বলেন, 'তিনি আমাকে নিয়ে পড়ে থাকতেন না। আমি নিজে নিজে বিস্ফোরক তৈরি করতাম, বই পড়তাম, রকেট বানাতাম এবং আরও অন্যান্য জিনিস করতাম, একটু এদিক সেদিক হলে যেগুলো আমার জীবন নিতে পারতো। আমার সবগুলো আঙুল অক্ষত আছে দেখে আমি এখনো বিস্মিত।'

বই পড়ার প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল মাস্কের

শৈশবে মাস্কের জগৎজুড়ে ছিল বই। মাস্কের মতে, 'আমি বইয়ের সঙ্গে বেড়ে উঠেছি। প্রথমে বই, তারপর আমার মা-বাবার কাছ থেকে শিখেছি।'

মাত্র ৯ বছর বয়সে পুরো এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা পড়া শেষ করেছিলেন মাস্ক। সায়েন্স ফিকশন, কমিকস এবং নন-ফিকশন বইয়ের পেছনে দিনে ১০ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতেন তিনি। 

ভিডিও গেম তৈরি করে ৫০০ ডলার আয় করেছেন তিনি

কম্পিউটার কোডিংয়ের শুরুর দিনগুলোতে মাস্ক 'ব্লাস্টার' নামের একটি ভিডিও গেমের কোডিং করেন। এটা ছিল একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিভিত্তিক গেম। পৃথিবীকে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আসা এলিয়েন স্পেসক্রাফটকে ধ্বংস করাই ছিল ব্লাস্টের উদ্দেশ্য। 

গেমটির সোর্স কোড দক্ষিণ আফ্রিকার একটি প্রকাশনা সংস্থার কাছে ৫০০ ডলারে বিক্রি করে দেন তিনি। 

১৬ বছর বয়সেই ভিডিও ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন মাস্ক

মাত্র ১৬ বছর বয়সে ভাই কিম্বাল ও কাজিনদের সঙ্গে বাসার পাশেই ভিডিও আর্কেড প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন মাস্ক। তারা জায়গা ভাড়া নেওয়ার জন্য শহর কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ফর্ম পূরণ করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে শহর কর্তৃপক্ষ জানায়, জায়গা ভাড়া নেওয়ার মতো উপযুক্ত বয়স তাদের হয়নি। এজন্য তাদের এই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। 

কিম্বাল বলেন, 'তার বাবা ও আঙ্কেল- কেউই তাদের এই উদ্যোগে সাড়া দেয়নি।' 

কিশোর বয়সে তিনি উত্তর আমেরিকায় পাড়ি জমান

কৈশোরে পা দেওয়ার পর মাস্ক তার জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে উত্তর আমেরিকায় চলে যান। সেখানে তিনি কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন। পদার্থবিদ ও গবেষক নীল ডিগ্রেসের সঙ্গে এক রেডিও স্বাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেন, 'জীবন কেমন, তা দেখার জন্যই দেশ ছাড়েন তিনি।' 

তিনি বলেন, 'দেখলাম যে আমেরিকায় বেঁচে থাকা খুবই সহজ।'

মাস্ক তখন দৈনিক ১ ডলার খরচ করে জীবন ধারণের চেষ্টা করতেন। 

 

সূত্র: সিএনবিসি

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

 

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

2h ago