যে কারণে বাথরুমে ফোন ব্যবহার উচিত নয়

যে কারণে বাথরুমে ফোন ব্যবহার উচিত নয়
ছবি: সংগৃহীত

অধুনা জীবনযাপনে ২৪ ঘণ্টাজুড়ে অন্য কোনো মানুষের সঙ্গে না থাকা হলেও একটা জিনিস প্রায় পুরোটা সময় আমাদের সঙ্গেই থাকে। সেই ঘুম থেকে উঠে রাতে আবার ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত, সকালের অ্যালার্মটা সেট করা অবধি– স্মার্টফোনটিই এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। অনেকে বাথরুমেও প্রিয় ফোনটি নিয়ে যেতে ভোলেন না। 

গেম খেলা হোক, ফেসবুকে অবিরত স্ক্রলিং বা ইউটিউবে ভিডিও দেখা, বাথরুমের অতি ব্যক্তিগত সময়টুকুতেও যেন তাদের ফোন ছাড়া চলে না। তবে এই অভ্যাসটি কতটা স্বাস্থ্যকর? কী কী সমস্যা হতে পারে এই অভ্যাস কিংবা বদভ্যাসের ফলে? এসব খুঁটিনাটি নিয়েই আজকের এই লেখাটি। 

২০১৬ সালের একটি গবেষণায় জানা যায়, ৪১ শতাংশ অস্ট্রেলিয়ান টয়লেটে ফোন ব্যবহার করেন এবং সনি দ্বারা পরিচালিত আরেকটি গবেষণায় জানা যায়, আমেরিকানদের মধ্যে এ হার ৭৫ শতাংশের কাছাকাছি। ৪ জন আমেরিকানের মধ্যে অন্তত একজন স্বীকার করেন যে তারা টয়লেটে থাকাকালীন ফোন ব্যবহারে অভ্যস্ত। এর মধ্যে বেশিরভাগই জেন-জি'র সদস্য। 

'ব্যাংক মাই সেল' নামক একটি গ্যাজেট কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত একটি জরিপে ২ হাজারেরে বেশি মানুষের মন্তব্য নেওয়া হয়। এদের মধ্যে ৪০ শতাংশই বলেন যে তারা এই সময়টাতে গান শোনার জন্য ফোন ব্যবহার করেন। এমন চাহিদা কারও থেকে থাকলে তারা অবশ্য বাথরুমের বাইরে একটু উঁচুস্বরে গান ছেড়ে তারপর বাথরুমে যেতে পারেন। যদিও এইটুকু সময় তা না করতে পারলেও খুব একটা ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই। 

এসব পরিসংখ্যান দেখে মনে করবার উপায় নেই যে শুধু যে উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোতেই এ অভ্যাস বিদ্যমান। বাংলাদেশেও, বিশেষত শহুরে অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্যও এটি বেশ পরিচিত একটি কাজ। অনেকে একে মাল্টিটাস্কিং বা সময়ের অতি সদ্ব্যবহার বলেও মনে করেন। কিন্তু সব জায়গায় ফোন সঙ্গে রাখার ব্যাপারটি আসলে অতটা স্বাস্থ্যকর নয়। ডক্টর আঞ্চিতা কর্মকারের মতে, 'ফোনের আনাচে-কানাচে পানি বা বায়ুর বিভিন্ন উপাদান আটকা পড়ার জায়গা রয়েছে। বেশিরভাগ ফোনের কভার এবং কেসই রাবার দিয়ে তৈরি, যা কি না ব্যাকটেরিয়া বেড়ে ওঠার জন্য বেশ আরামদায়ক ও উপযোগী পরিবেশ।' এসব ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে রয়েছে স্যালমোনেলা, ই-কোলাই, শিগেলা এবং ক্যাম্পাইলোব্যাক্টার– যা কি না ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে অসুস্থ করে তুলতে সক্ষম। ব্যাকটেরিয়াই শুধু নয়, গ্যাস্ট্রো এবং স্ট্যাফজাতীয় বিভিন্ন ভাইরাসও ফোনের গায়ে লেগে থাকতে পারে, যা পরবর্তী সংস্পর্শে রোগব্যাধী ছড়ায়। বাবা-মায়েদের এ ক্ষেত্রে একটু বেশি সচেতন থাকা দরকার, কেন না গেম খেলার জন্য বাচ্চারা প্রায়ই ফোন ব্যবহারের আবদার করে। এসব ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস কম বয়সীদেরকে আরও সহজে আক্রমণ করতে সক্ষম।

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডোমলজি বা রোগব্যাধিবিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক এমিলি মার্টিন মনে করেন, ফোন ব্যবহার করার জন্য সবচেয়ে বাজে স্থান হচ্ছে বাথরুম। কেন না ফ্লাশ করার সময় সব জায়গায় রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে যায়, হাতে থাকা ফোনটিতেও। কিন্তু কেউই তাদের সব সময়ের ব্যবহৃত ফোনটিকে নোংরা মনে করেন না। প্রতিবার বাথরুমে আসা-যাওয়ার আগে ও পরে হাত ভালো করে ধোয়া হলেও ফোনটি পরিষ্কার করার কথাও কারও মাথায় খুব একটা আসে না। আর সেভাবেই ভালোভাবে পরিষ্কার হবার পরও রোগ-জীবাণু শরীরের প্রবেশের পথ করেই নেয়। 

একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা সাধারণত ভালো হলেও সার্বক্ষণিক সঙ্গীরূপে হাতে থাকা ফোনটিই যদি রোগ-জীবাণুর ধারক ও বাহক হয়, তবে সুস্থ জীবনযাপন অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। আমরা যেসব বস্তু স্পর্শ করি, তা থেকে বিভিন্ন ধরনের প্যাথোজেন সংক্রমণ খুব সহজ এবং এসব বস্তুর মধ্যে আমাদের ফোন অন্যতম। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে হলে এই বদভ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি। 

প্রযুক্তির কল্যাণে স্মার্টফোনে বিভিন্ন মজার ফিচার থাকায় জেগে থাকা অবস্থায় মানুষের মধ্যে প্রায় পুরোটা সময়ই এতে বুঁদ হয়ে থাকার স্বভাব ক্রমশ বেড়েই চলেছে। কিন্তু নিজের ভালোর জন্যই কিছুক্ষণের জন্য হলেও এ থেকে বিরতি নেওয়া দরকার। আসক্তির ফলে মানসিক সুস্থতায় প্রভাব ফেলার সঙ্গে শরীরীভাবেও অসুস্থতার কবলে পড়তে হতে পারে, যদি মুঠোফোনটি একেবারেই মুঠোছাড়া না করা হয়– অন্তত বাথরুমে যাবার সময়টাতে! 

তথ্যসূত্র: ডেইলিমেইল, এসবিএস ও দ্যহেলদিডটকম
 

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

8h ago