শিগগির খাবার টেবিলে মিলবে ল্যাবে উৎপাদিত মাংস

শিগগির খাবার টেবিলে মিলবে ল্যাবে উৎপাদিত মাংস
ছবি: রয়টার্স

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নয়, এবার বাস্তবেই ল্যাবে উৎপাদিত মাংস পরিবেশন করতে দেখা যাবে যুক্তরাষ্ট্রের রেস্তোরাঁগুলোতে। চাষ করা এসব মাংস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এবার অনুমোদন পেলেই আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মেন্যুতে যোগ করা হবে বলে জানানো হয়েছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে।

এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকে ইতোমধ্যে আর্জেন্টিনার ফ্রান্সিস মলম্যান এবং স্প্যানিয়ার্ড জোসে আন্দ্রেসের মতো নামি-দামি শেফদের সঙ্গে চুক্তিও করেছেন তাদের খাবারের দোকানে এসব মাংস রাখার জন্য।
 
গবাদি পশু থেকে সংগৃহীত কোষের একটি ছোট নমুনা থেকে তৈরি করা হবে এসব মাংস। পরে এতে পুষ্টি যোগ করার পর বিশালাকার বায়োরিঅ্যাক্টর পাত্রে রাখা হয় এবং এমনভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয় যা দেখতে ও স্বাদে আসল মাংসের মতো হয়। 
 
তবে রয়টার্সকে দেওয়া ৫ জন নির্বাহীর তথ্য অনুযায়ী, ল্যাবে তৈরি মাংসের প্রচলন করতে সুপারমার্কেটগুলো বেশ বড় বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে। উৎপাদন বাড়াতে প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও তহবিলের প্রয়োজন হবে, যাতে গরুর মাংসের স্টেক ও মুরগির ব্রেস্টপিস আরও সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে ভোক্তাদের ল্যাবের মাংস খাওয়ার জন্য আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করতে হবে।
 
এখন পর্যন্ত শুধু সিঙ্গাপুর খুচরা বিক্রয়ের জন্য পণ্যটি অনুমোদন পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পণ্যটির অনুমোদন দিতে প্রস্তুত। গত বছর নভেম্বর মাসে ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) জানিয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়ার আপসাইড ফুডসের ল্যাবে তৈরি মুরগির ব্রেস্টপিস মানুষের জন্য নিরাপদ। ২০২৩ সালের মধ্যে রেস্তোরাঁয় এবং ২০২৮ সালের মধ্যে মুদি দোকানে এ পণ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি। 

তবে প্রতিষ্ঠানটির এজন্য ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারের ফুড সেফটি অ্যান্ড ইন্সপেকশন সার্ভিস কর্তৃক পরীক্ষিত এবং এজেন্সি থেকে এটির লেবেল স্বাক্ষরিত হতে হবে।
 
ক্যালিফোর্নিয়ার এমেরিভিলে আপসাইডের ল্যাবে মাংস প্রক্রিয়াকরণে কর্মীরা বেশ সতর্কতা অবলম্বন করে। যে কক্ষে মাংস কাটা ও প্রক্রিয়াজাত করা হয় সেটিকে তারা 'কসাইখানা' নাম দিয়েছে। 

ল্যাব পরিদর্শনকালীন নমুনা পরীক্ষায় দেখা যায়, তাদের তৈরি মুরগির মাংস কাঁচা অবস্থায় কিছুটা পাতলা হলেও রঙে ও স্বাদে আসল মাংসের মতোই।
 
আপসাইডের নির্বাহী কর্মকর্তা উমা ভ্যালেটি জানায়, নভেম্বরে এজেন্সির ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়ার আগে থেকেই তারা ৪ বছর ধরে এফডির সঙ্গে কাজ করছে। 
 
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক এসব মাংস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গুড মিট ইতোমধ্যে এফডিএ-এর কাছে আবেদন করেছে। এ ছাড়া নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক মোসা মিট এবং ইসরায়েল-ভিত্তিক বিলিভার মিটসের সঙ্গে আলোচনা চলমান।
 
প্রতিষ্ঠানগুলোর এসব মাংস ভোক্তাদের নিকট পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি পাওয়াটাই প্রথম বাঁধা বলে মনে করছেন তারা। তবে চাষ করা মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বৃহদাকার বায়োরিয়াক্টর ও মাংসের কোষে পুষ্টি মিশ্রণের জন্য সাপ্লাই চেইন বৃদ্ধি করা আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ বলেও মনে করছেন তারা।
 
মাংস শিল্প লবি গ্রুপ নর্থ আমেরিকান মিট ইনস্টিটিউট অনুসারে, আপসাইড বছরে ৪ লাখ পাউন্ড চাষ করা মাংস উৎপাদন করতে সক্ষম যা ২০২১ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত ১০৬ বিলিয়ন পাউন্ড মাংস চাহিদার ক্ষেত্রে খুবই কম।
 
গুড মিটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জোশ টেট্রিক রয়টার্সকে বলেন, কোম্পানিগুলো যদি উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় তহবিল না পায় তাহলে তাদের পণ্য কখনোই প্রচলিত মাংসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে পৌঁছাতে পারবে না। যতক্ষণ না পর্যন্ত বড় আকারের অবকাঠামো তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে, এটি সীমিত আকারেই চলবে।
 
গুড ফুড ইনস্টিটিউটের (জিএফআই) তথ্য অনুসারে, কৃত্রিম মাংস খাতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। তবে ভালো আকারে বায়োরিয়াক্টরের জন্য আরও অর্থের দরকার পড়বে।
 
এ শিল্পে এখন পর্যন্ত ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম, জেবিএস এসএ, টায়সন ফুডস ইনক এবং আর্চার-ড্যানিয়েলস-মিডল্যান্ড কোম্পানির মতো প্রধান খাদ্য সংস্থাগুলো বেশি বিনিয়োগ করেছে।  
 
জেবিএসের মুখপাত্র নিকি রিচার্ডসন বলেন, 'চাষ করা মাংসে কোম্পানির বিনিয়োগ ঐতিহ্যগত, উদ্ভিদ-ভিত্তিক এবং বিকল্প প্রোটিন পণ্যের একটি বৈচিত্র্যময় বৈশ্বিক খাদ্য পোর্টফোলিও তৈরির জন্য প্রচেষ্টার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
 
বিলিভার মিটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিকোল জনসন হফম্যান বলেন, 'উত্তর ক্যারোলিনায় ২০২৪ সালের প্রথম দিকে নতুন পরিকল্পনা চালু করা হবে, যা বার্ষিক ২২ মিলিয়ন পাউন্ড মাংস উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। গুড মিটেরও ক্যালিফোর্নিয়া এবং সিঙ্গাপুরে বার্ষিক ৩০ মিলিয়ন পাউন্ডের মতো উৎপাতদন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
 
ক্রেতাদের মধ্যে এই পণ্যের প্রতি বিদ্বেষ কাটানোর জন্য চাষ করা মাংস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রচলিত পশুসম্পদ রক্ষা, প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা ও নৈতিকতার বিষয়গুলো প্রচারের চেষ্টা করছে। যেহেতু এ পণ্যে পশু জবাই করা হয় না, প্রতিষ্ঠানগুলো আশা করছে যারা নৈতিক কারণে মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকেন তাদেরকে এটি মাংস খেতে আগ্রহী করবে।ৎ
 
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতে, খাদ্য উৎপাদন, বন উজাড় ও সার ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন কারণে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হয়। তাই মাঠের পরিবর্তে স্টিলের পাত্রে মাংস উৎপাদন করলে গবাদি পশুর পরিবেশগত প্রভাব কমবে।
 
লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য মনোবিজ্ঞানী জ্যানেট টমিয়ামা জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল সাইকোলজিতে প্রকাশিত গবেষণায় দেখিয়েছেন, ৩৫ শতাংশ মাংস গ্রহণকারী এবং ৫৫ শতাংশ নিরামিষাশীরা চাষকৃত মাংস খাওয়ার প্রতি অনাগ্রহী হবেন। অনেকে এটি 'অপ্রাকৃতিক' মনে করে না খেয়েই নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে পারে।
 
ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পণ্য কীভাবে তৈরি করে এবং এটি খাওয়া নিরাপদ কিনা এ সম্পর্কে যতটা সম্ভব স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে বলেও জানান তিনি।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

গ্রন্থনা: আসরিফা সুলতানা রিয়া
 

Comments

The Daily Star  | English

What if the US election ends in a Trump-Harris tie?

While not highly likely, such an outcome remains possible, tormenting Americans already perched painfully on the edge of their seats ahead of the November 5 election

2h ago