ভয়ভীতি দূর করতে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি থেরাপি

ভয়ভীতি দূর করতে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি থেরাপি
ভয়ভীতি দূর করতে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি থেরাপি। ছবি: ডয়চে ভেলে

কারণে-অকারণে সবার মনেই ভয় জন্মায়। তবে উদ্বেগজনিত ব্যাধি বড় এক সমস্যা। সেই ভয় দূর করতে এবার ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি থেরাপি প্রয়োগ শুরু হচ্ছে।

মানুষের আদিম এই অনুভূতি সম্পর্কে নতুন তথ্যও জানা যাচ্ছে।

সেবাস্টিয়ান এয়ার্বের থেরাপির প্রস্তুতি দেখলে মনে হবে, তিনি যেন কোনো কম্পিউটার গেম খেলতে শুরু করবেন। তবে সেই ধারণা পুরোপুরি অমূলক নয়৷ গত কয়েক মাস ধরে তিনি মানসিক অসুখের চিকিৎসার ক্ষেত্রে মূলত গেমিং ক্ষেত্রের সেই প্রযুক্তি প্রয়োগ করছেন৷ তিনি উদ্বেগজনিত ব্যাধির রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছেন৷ 

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে এয়ার্বে বলেন, 'সামাজিক ক্ষেত্রে ফোবিয়া বা ভীতি সৃষ্টি হয়৷ মনে হয় ভুল মূল্যায়ন হবে৷ অন্যদের সমালোচনামূলক মূল্যায়নের আশঙ্কায় মনে ভয় জন্মায়৷ তাছাড়া অ্যাগোরাফোবিয়া নামের এক ভীতি থাকলে কোনো নির্দিষ্ট জায়গার উপর দিতে যেতে ভয় লাগে৷ গণপরিবহন ব্যবহার করতে ভয় লাগতে পারে৷ এমন সব সমস্যা বা বাধা নিয়ে রোগীরা আমাদের হাসপাতালে আসেন৷ এর ফলে ব্যক্তিগত জীবনে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটে৷ গণপরিবহণ ব্যবস্থা ব্যবহার না করতে পারলে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷ তখন কর্মক্ষেত্রে যাওয়া, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করা হয়তো সম্ভব হয় না৷ নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে, সামাজিক জীবনযাত্রা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলে বড় সমস্যা হয়৷''

এখনো পর্যন্ত কথোপকথনের মাধ্যমে থেরাপি এবং রোগীদের ভয়ের কারণ দূর করতে 'এক্সপোজার ট্রেনিং'-এর আওতায় তাদের সেই পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে সমস্যা দূর করার চেষ্টা করা হতো৷ এখনো এমন প্রচেষ্টা চালানো হয়৷ প্রযুক্তির কল্যাণে এবার সেই পরিস্থিতি সবার আগে ভার্চুয়াল পরিবেশে সৃষ্টি করা সম্ভব হচ্ছে৷ এর সুবিধার উল্লেখ করে সেবাস্টিয়ান এয়ার্বে বলেন, 'এর ফলে আর সময় নষ্ট হচ্ছে না৷ তাছাড়া এই থেরাপি হাতের আরও নাগালে এসে পড়েছে৷ রোগীরাও সেটা গ্রহণ করছেন৷ তাদের এই মনোভাবের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ এভাবে তারা আরও সহজে 'এক্সপোজার ট্রেনিং'-এ অংশ নিতে পারছে৷'

থেরাপির ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির প্রয়োগ স্পষ্ট করে তুলতে সেবাস্টিয়ান এয়ার্বে এক সহকর্মীর সঙ্গে অনুশীলন করে দেখালেন৷ কিয়র্স্টেন স্ট্রাসবুর্গার অবশ্য কোনো ভীতিতে ভুগছেন না৷ তিনি কোনো পক্ষপাত ছাড়াই ভার্চুয়াল পরিস্থিতির মধ্যে ডুবে গেলেন। কিয়র্স্টিনকে ভার্চুয়াল জগতে এক বড় চত্বরে নিয়ে যাওয়া হলো৷ তিনি চারিদিকে তাকিয়ে জায়গাটির বিস্তার বোঝার সুযোগ পেলেন৷ তারপর তাকে কয়েকজন পুলিশকর্মীদের দিকে এগিয়ে যেতে বলা হলো৷ তাদের নাকি কিছু প্রশ্ন করার কথা৷

পুলিশকর্মীরা জানালেন, তারা নাকি আজ রুটিন চেক হিসেবে সবার পরিচয়পত্র পরীক্ষা করছেন৷ কিয়র্স্টিনকে বললেন, নার্ভাস হবার প্রয়োজন নেই৷ কারণ এটা রুটিন চেক ছাড়া কিছু নয়৷

ডাক্তার ও ভিডিও ক্যামেরা গোটা পরিস্থিতি দ্বিমাত্রিক পর্যায়ে দেখতে পাচ্ছে৷ কিয়র্স্টেন কিন্তু তার থ্রিডি চশমার দৌলতে ভার্চুয়াল জগতের গভীরে প্রবেশ করতে পারছেন৷ সেই জগতে এক আগন্তুক সিগারেট চাইলো৷ কিন্তু কিয়র্স্টেন সবিনয়ে জানালেন, তিনি ধূমপান করেন না৷ নিজের সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমার কাছে পুরোটাই অত্যন্ত বাস্তব মনে হয়েছে৷ মনে হয়েছে, আমি রাজপথে কারও সঙ্গে সত্যি কথা বলেছি৷ অবশ্যই একটু বেগ পেতে হয়৷ এক ব্যক্তি আমার কাছে সিগারেট চাইছিল৷ বললাম আমি ধূমপান করি না৷ বাস্তব জীবনেও তো এমনটাই ঘটে৷ সত্যি খুব বাস্তব মনে হয়েছে৷'

বেশিরভাগ ভিডিও গেমের গ্রাফিকের মান এই ছবির তুলনায় সত্যি অনেক ভালো, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই৷ তবে থেরাপির পরিস্থিতির জন্য এর চেয়ে ভালো মানের গ্রাফিকের প্রয়োজন নেই৷ মনোবিজ্ঞান এবং সাইকোথেরাপি বিশেষজ্ঞ হিসেবে সেবাস্টিয়ান এয়ার্বে মনে করেন, 'আমাদের যুক্তিবোধ খুব ভালো করে বুঝিয়ে দেয় যে এই পরিস্থিতি মোটেই বাস্তব নয়৷ কিন্তু ভীতির প্রণালীর তাতে কিছু এসে যায় না৷ সেই 'ফিয়ার সিস্টেম' অত্যন্ত সেকেলে৷ মনে ভয় জাগলে এমনকি আরও খারাপ গ্রাফিকও সেই প্রণালী চালু করে দিতে পারে৷ ভিআর চশমা পরার সময় আমি যদি আপনার মনে চাপ সৃষ্টি করতে বলি, যে পুলিশ আপনার কাছ থেকে কিছু চাইছে, আপনাকে দ্রুত সেটা করতে হবে, কেন পারছেন না? অর্থাৎ ভীতির সমস্যা না থাকলেও এমনটা হতে পারে৷ মোটকথা, 'ফিয়ার সিস্টেম' অত্যন্ত আদিম এক প্রণালী৷ সহজেই সেটা চালু করা যায়৷ সেটাই উদ্বেগজনিত ব্যাধির সমস্যা৷''

অন্যান্য ভীতির ক্ষেত্রেও ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি থেরাপি প্রয়োগ করা সম্ভব কিনা, সে বিষয়ে আরও গবেষণা চলছে৷

Comments

The Daily Star  | English

Power, Energy Sector: Arrears, subsidies weighing down govt

The interim government is struggling to pay the power bill arrears that were caused largely by “unfair” contracts signed between the previous administration and power producers, and rising international fuel prices.

8h ago