মানুষের ডিজিটাল অবতার সৃষ্টি করছে জার্মান কোম্পানি

মানুষের ডিজিটাল অবতার সৃষ্টি করছে জার্মান কোম্পানি
ছবি: ডয়চে ভেলে

কোনো বিদেশির পক্ষে জার্মানিতে এসে হাইটেক প্রযুক্তির স্টার্টআপ কোম্পানি খোলা খুব কঠিন। পাকিস্তানের এক নারী এমনই অসাধ্যসাধন করে দেখিয়ে দিয়েছেন। মানুষের ভার্চুয়াল অবতারকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে সেই কোম্পানি।

জার্মানির দক্ষিণ পশ্চিমে ট্যুবিঙেন শহরের সাইবার ভ্যালির স্টার্টআপ কোম্পানি মেশকাপেড বডি স্ক্যানিং প্রযুক্তি আরও সহজ করার লক্ষ্য স্থির করেছে৷ কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা নউরিন মাহমুদের মতে, তাদের এই উদ্ভাবনের ফলে মানুষের হুবহু ডিজিটাল দোসর সৃষ্টি করা অনেক সহজ হয়ে উঠেছে৷ 

নউরিন বলেন, 'আমরা যা ডেভেলপ করছি, তার ফলে যে কেউ অত্যন্ত সহজে নিজের অবতার সৃষ্টি করতে পারবেন। শুধু নিজের ফোন দিয়ে একটা ছবি তুললেই সেই অবতার প্রস্তুত করা যাবে। নিজের আরও ছবি তুললে বিভিন্ন দিক থেকে নিজের চেহারা সংক্রান্ত আরও তথ্য অবতারের কাছে চলে যাবে৷ ফলে সেই অবতার আরও বেশি আপনার মতো দেখতে হবে। মেশকাপেড কোম্পানিতে আমরা সেই বিশাল ক্ষমতা সৃষ্টি করছি৷'

মহামারি পরবর্তী যুগে আমাদের শারীরিক বাস্তবতা ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে দ্রুত মিলেমিশে যাচ্ছে৷ মানুষ নিজের মতো দেখতে অবতার চাইছে, যার মুখের অভিব্যক্তি ও বাস্তবসম্মত সঞ্চালন থাকবে।

মেশকাপেড কোম্পানির অত্যাধুনিক এসএমপিএল প্রযুক্তি একাধিক সূত্র থেকে তথ্য নিয়ে থ্রিডি ফরম্যাটে নিখুঁত ও বাস্তবসম্মত 'মেটা হিউম্যান' সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে ফ্যাশন, মনোরঞ্জন ও চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে৷ নউরিন মাহমুদ বলেন, 'আমরা মেশিন লার্নিং ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স শিখে সেগুলো ব্যবহার করেছি৷ থ্রিডি স্ক্যানিং প্রণালীর তথ্যও ব্যবহার করেছি৷ আমরা নানা ধরনের শারীরিক আকার-আয়তনের হাজার হাজার মানুষের শরীর স্ক্যান করেছি৷ তারা বিভিন্ন পোজে ছবি তুলিয়েছে৷ সেই তথ্যের ভিত্তিতে কম্পিউটারকে মানুষের অভিব্যক্তি ও সঞ্চালন শিখিয়েছি৷ বর্তমানে আমরা যে কোনো ধরনের তথ্য কাজে লাগাতে পারি৷ আমরা আপনার শরীরের কিছু সঞ্চালন পরিমাপ করে আপনার এমন এক সংস্করণ সৃষ্টি করতে পারি, যেটি কাজে লাগিয়ে আপনি জামাকাপড় কিনতে পারেন৷ আশা করি শিগগিরই সেই প্রতিমূর্তি দিয়ে ভার্চুয়াল মিটিং সৃষ্টি করতে পারব৷'

নউরিন পাকিস্তানের লাহোর শহরের মানুষ৷ তিনি ৫ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৮ সালে আরও দুজনকে নিয়ে মেশকাপেড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন৷ বার্লিনে নউরিন মাহমুদ ও তার টিম জার্মানির বিখ্যাত মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট ও আরেকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৫০ হাজার ইউরো মূল্যের একটি পুরস্কার পেয়েছেন৷ সেই অনুভূতি বর্ণনা করে তিনি বলেন, 'সেই মুহূর্তে খুবই বিনয় বোধ হচ্ছিল৷ প্রথমত নিজের খুব গর্ব হলো। পাকিস্তান, বিশেষ করে সেখানকার নারীরা আরও অনেক কিছু করতে পারে বলে মনে হলো৷ খুবই আনন্দের অনুভূতি হলো৷'

জার্মানির এই স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে মাত্র ১১ শতাংশ প্রতিষ্ঠাতা নারী৷ স্টার্টআপ প্রযুক্তি কোম্পানি খোলা নউরিন মাহমুদের জন্য বেশ কঠিন কাজ ছিল৷ তার মতে, নানা ধরনের মানুষ কাজ, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার কাজে জার্মানিতে এলে তাদের জন্য উপযুক্ত সুযোগ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি। নউরিন বলেন, 'তারা এমন স্টার্টআপের জন্য আরও বেশি সাপোর্ট সিস্টেম সৃষ্টি করলে ভালো হয়। বিশেষ করে ইউরোপের বাইরের নানা অঞ্চলের মানুষকে সহজে স্টার্টআপ গড়ার সুযোগ দেওয়া উচিত৷ এটা করলে জার্মানির বিশাল লাভ হবে৷'

ট্যুবিঙেন শহরে স্টার্টআপ কোম্পানির রমরমা চলছে৷ নউরিন ও তার স্বামী তালহা মাহমুদের কাছে রূপকথার মতো এমন ছোট শহর একইসঙ্গে বাসা ও কর্মক্ষেত্র হিসেবে আদর্শ।

 

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka sends diplomatic note to Delhi to send back Hasina: foreign adviser

The Ministry of Foreign Affairs has sent a diplomatic note to the Indian government to send back ousted former prime minister Sheikh Hasina to Dhaka.

2h ago