থ্রেডসে কেন আগ্রহ হারালো ব্যবহারকারীরা
গত ৫ জুলাই টুইটারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থ্রেডস চালু করে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা, যা পুরো প্রযুক্তি বিশ্বে উন্মাদনা সৃষ্টি করে। থ্রেডসকে বলা হচ্ছিল টেক্সট ভিত্তিক অভিনব একটি প্ল্যাটফর্ম এবং সকল রেকর্ড ভেঙ্গে চালুর মাত্র ৫ দিনেই ১০ কোটি গ্রাহক অর্জন করেছিল এই সামাজিক মাধ্যমটি।
সে সময় মেটা ও ফেসবুকের প্রধান মার্ক জাকারবার্গ বেশ কিছু পোস্ট করে তৎকালীন টুইটারকে (এখন এক্স) নিয়ে কটাক্ষ করেন। এমন কী, দীর্ঘ দিন পর নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে লগইন করে পোস্টও করেন তিনি। বিশ্লেষকরাও টুইটারের দিন গুণতে শুরু করে দিয়েছিলেন।
চালুর মাত্র ৩ মাসের মাথায় গ্রাহকদের অধিকাংশই আর অ্যাপটি ব্যবহার করছেন না। অনেকের মনেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কী হল থ্রেডস এর? এ লেখায় সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে।
বিশাল পতন
ইন্টারনেট তথ্য বিশ্লেষনী প্রতিষ্ঠান সিমিলারওয়েব জানায়, ৭ জুলাই পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে থ্রেডসের দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারী ছিল ৪ কোটি ৯৩ লাখ। কিন্তু জুলাইয়ের ১৪ তারিখের মধ্যেই তা নাটকীয়ভাবে কমে ২ কোটি ৩৬ লাখে দাঁড়ায় আর আগস্টের ১৭ তারিখের মধ্যে তা ১ কোটি ৩ লাখে নেমে আসে।
এই বিশাল পতনের ফলে দীর্ঘমেয়াদে থ্রেডসের কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের পছন্দ দ্রুত পরিবর্তনের প্রবণতাও চিহ্নিত হয়েছে।
গ্রাহক ধরে রাখায় ব্যার্থতা
দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারী নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ার চেয়েও যত সংখ্যক গ্রাহক থ্রেডস ব্যবহার পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছে, তা বেশি উদ্বেগজনক। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেও থ্রেডস অর্ধেকের বেশি গ্রাহক হারিয়েছে। ফলে কীভাবে গ্রাহক ধরে রাখা যায়, তা নিয়ে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে মেটা। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি এখনো এক্ষেত্রে সফলতা পায়নি।
নতুন কিছু আনার সম্ভাব্য বিপদ
অনেক সময় নতুন সামাজিক মাধ্যম এমন কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে, যা প্রচলিত বা মূল ধারার সামাজিক মাধ্যম থেকে ভিন্ন। কিন্তু ওই সামাজিক মাধ্যমটিই যখন মূলধারার মাধ্যমে পরিণত হয়, তখন আর সেই আবেদন থাকে না এবং ধীরে ধীরে প্রাসঙ্গিকতা হারায়। থ্রেডসের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খুব দ্রুতই ঘটেছে। মূলত এটি এক্সের বিকল্প (সাবেক টুইটার) হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালালেও এমন কোনো নতুন ফিচার নিয়ে আসতে পারেনি, যা গ্রাহকের আগ্রহ ধরে রাখতে সক্ষম।
দ্রুত উত্থান, দ্রুত পতন
থ্রেডসের উত্থান ও পতন যে নাটকীয়তার সঙ্গে ঘটেছে, তা বেশ ব্যতিক্রমধর্মী। সদাপরিবর্তনশীল প্রযুক্তি, ব্যবহারকারীদের পছন্দ-অপছন্দের পরিবর্তন ও উচ্চ গতির ডাউনলোডের যুগে একটি প্ল্যাটফর্ম প্রায় রাতারাতি 'হিরো থেকে জিরো' হয়ে যেতে পারে।
এই দ্রুত জনপ্রিয় হওয়া এবং দ্রুত হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি শুধু নতুন সামাজিক মাধ্যম সম্পর্কেই সতর্কবার্তা দেয় না, এই প্রবণতা বর্তমান প্রযুক্তি-বান্ধব গ্রাহকদের আচরণ সম্পর্কেও কিছুটা ইঙ্গিত দেয়। তারা নতুন কোনো প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে খুব বেশি সংযুক্ত হতে চান না। এক প্ল্যাটফর্মে আটকে না থেকে তারা পরবর্তী নতুন কোনো অভিনব সেবা বা মাধ্যম পরখ করতে বেশি আগ্রহী।
থ্রেডস দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়ার পেছনে ইনস্টাগ্রামের প্রত্যক্ষ্য ভূমিকা ছিলো। ইনস্টাগ্রামের লগইন পাসওয়ার্ড দিয়েই এটি ব্যবহার করা যায়। পাশাপাশি, দুই প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সংযুক্তিও রয়েছে। উল্লেখ্য, ইনস্টাগ্রামের নিয়মিত গ্রাহকের সংখ্যা ১০০ কোটি।
মেটার জন্য এটি একটি অন্যরকম, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
থ্রেডসের ঘটনা প্রমাণ করলো প্রযুক্তির ক্রমাগত পরিবর্তনশীল জগতেও ব্যবহারকারীদের অস্থিরতা বা উদাসীনতার বিষয়টি অপরিবর্তিত আছে। মেটা নিশ্চয়ই থ্রেডস নিয়ে নতুন করে ভাববে। এই প্ল্যাটফর্মটি টিকে থাকবে কী না, কিংবা এখান থেকে পরবর্তী প্রকল্পের জন্য মেটা কী শিক্ষা নিলো, তা হয়তো ভবিষ্যতেই বোঝা যাবে।
এই দ্রুতগতির বিশ্বে, যেখানে সবাই পরবর্তী জনপ্রিয় পণ্য বা সেবাটি তৈরি করতে চায়, থ্রেডসের ঘটনা তাদের জন্যও একটি সতর্কবার্তা। থ্রেডসের ব্যর্থতাই প্রমাণ করে যে বিশাল প্রতিষ্ঠানও ব্যর্থ হতে পারে।
ইংরেজি থেকে ভাবানুবাদ করেছেন আহেমেদ হিমেল
Comments