কম্পিউটার থেকে মুছে ফেলুন অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার

অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার মুছে ফেললে বাড়তে পারে কম্পিউটারের গতি ও উপযোগিতা। ছবি: অর্কিড চাকমা/স্টার
অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার মুছে ফেললে বাড়তে পারে কম্পিউটারের গতি ও উপযোগিতা। ছবি: অর্কিড চাকমা/স্টার

মোবাইলের পাশাপাশি যে ডিভাইস আমরা নিয়মিত ব্যবহার করি, তা হল কম্পিউটার। এটি হতে পারে প্রথাগত ডেস্কটপ পিসি বা ল্যাপটপ। প্রায় সব উইন্ডোস ভিত্তিক কম্পিউটারেই অনেক সফটওয়্যার ইনস্টল করা থাকে, যেগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে আমরা খুব একটা জানি না আর সেগুলো সেভাবে ব্যবহারও করা হয় না। কিন্তু গুরুত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে না পারার কারণে সেগুলো ডিলিটও করা যায় না।

এমন অপ্রয়োজনীয় কিছু উইন্ডোস প্রোগ্রাম নিয়ে কথা হবে এ লেখায়, যা ডিলিট করলে কম্পিউটারের স্টোরেজ বৃদ্ধি পাবে– সেইসঙ্গে কর্মক্ষমতাও, কিন্তু সার্বিক কার্যকারিতায় কোনো প্রভাব পড়বে না।

১। পিসি ক্লিনার

সিক্লিনার ক্লিন না করে বরং আবর্জনা বাড়ায়। ছবি: সংগ্রীহিত
সিক্লিনার ক্লিন না করে বরং আবর্জনা বাড়ায়। ছবি: সংগ্রীহিত

কম্পিউটার ব্যবহারের সময় প্রায় সবাই কখনো না কখনো এ ধরনের একটি সফটওয়্যার ডাউনলোড ও ইনস্টল করে থাকেন। এসব সফটওয়্যার কম্পিউটারকে 'ক্লিন' করার দাবি করলেও আদতে এগুলোর ব্যবহারে পিসির আবর্জনাই বেড়ে যায়। এতে সরাসরি ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলেও এগুলোর উপস্থিতি কম্পিউটারের কোনো উপকারে আসে না, তা নিশ্চিত।

তাই 'মাই ক্লিন পিসি' কিংবা 'পিসি অপটিমাইজার' এর মতো পিসি ক্লিনার জাতীয় সফটওয়্যার মুছে দেওয়ায় ভালো হবে।

২। উইনরার

ফাইল এক্সট্রাকশন বা কমপ্রেশনের জন্য বিভিন্ন টুল ব্যবহার করা দরকারি হলেও এক্ষেত্রে উইনরার খুব একটা কার্যকর ভূমিকা রাখে না। বরং এতে থাকা 'শেয়ারওয়্যার' লাইসেন্স এটিকে আরো অকেজো করে তোলে। বিনামূল্যে এর ট্রায়াল ভার্সন ডাউনলোড করতে পারলেও কিছু সময় পরই এতে মূল্য পরিশোধের জন্য তাগাদা দেয়া হয়। তবে মূল্য পরিশোধ না করলেও এটি অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যবহার করা যায়। অন্তত এই কারণটি ছাড়া উইনরার ব্যবহারের আর কোনো কারণ নেই। উইন্ডোজের সর্বশেষ ভার্সনগুলোতে বিল্ট-ইন কম্প্রেশন টুল থাকে, যা কার্যত উইনরারকে পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয় করে তুলেছে।

৩। মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজার

সময়ের সঙ্গে মাইক্রোসফট এজ (আগে এক্সপ্লোরার নামে পরিচিত) উন্নত হলেও বহুলব্যবহৃত গুগল ক্রোম বা মজিলা ফায়ারফক্সের মতো ব্রাউজারের তুলনায় এর ধীরগতি সম্পর্কে সবারই কমবেশি জানা আছে। তাই অন্য ভালো গতির ও সক্রিয় ইন্টারনেট ব্রাউজার থেকে থাকলে মাইক্রোসফট এজ আনইনস্টল করে ফেলাই সঠিক কাজ হবে।

৪। অ্যাডোবি ফ্ল্যাশ

ফ্ল্যাশ এখন আর আগের মতো প্রাসঙ্গিক নয়। ছবি: সংগৃহীত
ফ্ল্যাশ এখন আর আগের মতো প্রাসঙ্গিক নয়। ছবি: সংগৃহীত

একসময়ে ভিডিও, গেমস এবং ওয়েব কনটেন্টের জন্য অ্যাডোবি ফ্ল্যাশকে আদর্শ সফটওয়্যার ধরা হতো। কিন্তু তা এখন মোটামুটি অবসরেই চলে গেছে। তাই পুরনো 'ফ্ল্যাশ গেম' নিয়ে খুব বেশি নস্টালজিয়া কাজ না করলে অ্যাডোবি ফ্ল্যাশ কম্পিউটারে জঞ্জাল করে রেখে দেবার মানে নেই। অ্যানিমেশন জগতে ক্রমশ উন্নয়নের ফলে বেশিরভাগ গেম ও ভিডিওই এখন জিইউআই, অর্থাৎ 'গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস' ফরম্যাটে রূপান্তরিত হয়েছে, যেখান ফ্ল্যাশ আর কার্যকর হতে পারছে না।

৫। কর্টানা

উইন্ডোসের আরেক অপ্রয়োজনীয় ফিচার কর্টানা। ছবি: সংগৃহীত
উইন্ডোসের আরেক অপ্রয়োজনীয় ফিচার কর্টানা। ছবি: সংগৃহীত

কর্টানা হচ্ছে মাইক্রোসফটের ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট, যা বিঞ্জ সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে বিভিন্ন রিমাইন্ডার দিয়ে সাহায্য করে। উইন্ডোসের নতুন সংস্করণগুলোতে এটি আগে থেকেই কার্যকর করা থাকে। তবে এর কার্যকারিতা ও ব্যবহার প্রশ্নবিদ্ধ। শুরুতে সাড়া ফেললেও এটি এখন আর উইন্ডোস সার্চের অংশ নেই– যাতে স্টার্ট মেনু সার্চ, উইজেটস সার্চ, এনহ্যান্সড সার্চ অপশন ইত্যাদি নতুন সব ফিচার যুক্ত হয়েছে। এছাড়াও তথ্যের গোপনীয়তা নিয়ে চিন্তা থাকলেও কর্টানা নিষ্ক্রিয় করে দেয়া দরকার, কারণ এর মাধ্যমে মাইক্রোসফটের সঙ্গে অনেক তথ্য সরাসরি আদান-প্রদান ঘটে যায়।

৬। স্কাইপি

গুগল মিট আর জুম আসার পর থেকে অনলাইনে মিটিং, প্রশিক্ষণ, এমন কী আড্ডা দেওয়াও অনেক সহজ হয়েছে। এই নতুন প্রযুক্তির জোয়ারে একসময়ের ভিডিও কলের মূল মাধ্যম স্কাইপি যেন হারিয়েই গেছে। সময়ের সঙ্গে সবাইকে বদলাতে হয়। এখনো অনেক কম্পিউটারে আগে থেকেই স্কাইপি ইনস্টল করা থাকে। উন্নত ও অপেক্ষাকৃত উপযোগী বিকল্প থাকায় স্কাইপি আনইনস্টল করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

৭। ইউটরেন্ট বা অন্য যেকোনো টরেন্ট সফটওয়্যার

বিনামূল্যে সিনেমা, বিভিন্ন টিভি সিরিজ, গেম বা অন্যান্য সফটওয়্যার ডাউনলোডের সহজ ও নির্ভরযোগ্য সমাধান হিসেবে ইউটরেন্ট সহ অন্যান্য টরেন্ট ক্লায়েন্ট এক সময় খুব জনপ্রিয়তা পেলেও গত কয়েক বছরের ব্যবধানে ব্যবহারকারীদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা ও নির্ভরশীলতা কমেছে। টরেন্ট ক্লায়েন্ট ব্যবহারে শুধু অবৈধ, কপিরাইট করা কণ্টেন্ট ডাউনলোডও হয়, সঙ্গে আসে ম্যালওয়্যার, স্পাইওয়্যার ও অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকারক জিনিস। তাই এ ধরনের সফটওয়্যার বা অ্যাপ মুছে ফেলা উচিৎ।

যেকোনো অপ্রয়োজনীয় এবং বাড়তি স্থান দখলকারী প্রোগ্রাম বা অ্যাপ ডিলিট করতে চাইলে প্রথমে 'উইন্ডোস স্টার্ট' মেনুতে গিয়ে সেটিংস অপশনে ক্লিক করতে হবে। সেখান থেকে 'অ্যাপস' অংশে গিয়ে কম্পিউটারে ইতোমধ্যে বিদ্যমান প্রোগ্রাম ও অ্যাপের তালিকা দেখতে পাবেন। এরপর সহজেই অদরকারি সফটওয়্যারগুলো মুছে ফেলে কম্পিউটারকে আরও গতিশীল ও হালকা করে তুলতে পারেন।

তথ্যসূত্র– মেইকইউজঅফ, উইন্ডোসগ্রাউন্ড, বিবিসি 

 

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka cannot engage with non-state actors: foreign adviser

Md Touhid Hossain also emphasised that peace and stability in the region would remain elusive without a resolution to the Rohingya crisis

29m ago