‘কার ফ্লুইড’ সম্পর্কে যে তথ্যগুলো যেনে রাখা উচিত

‘কার ফ্লুইড’ সম্পর্কে যে তথ্যগুলো যেনে রাখা উচিত

মানুষের শরীর যেমন রক্তের পাশাপাশি বিভিন্ন তরল পদার্থের ওপর নির্ভর করে চলে; তেমনি গাড়িরও সঠিকভাবে চলার জন্য বিভিন্ন ধরনের তরল পদার্থের ওপর নির্ভর করতে হয়। গাড়ির মালিক কিংবা গাড়ি ব্যবহারকারী সবারই গাড়িতে ব্যবহৃত এসব তরল পদার্থ বা ফ্লুইডের আদ্যোপান্ত জানা জরুরি।

চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক, গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় কিছু অত্যাবশ্যকীয় ফ্লুইড বা তরল পদার্থ সম্পর্কে। 

ইঞ্জিন অয়েল

ইঞ্জিন অয়েল একটি গাড়ির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তরল পদার্থ। এটি ইঞ্জিনের চলমান অংশগুলোকে পিচ্ছিল রাখে এবং ঘর্ষণ ও ক্ষয়ে যাওয়া রোধ করে। এটি তাপ শোষণ এবং স্থানান্তরের মাধ্যমে ইঞ্জিনকে ঠান্ডা রাখতেও সাহায্য করে। তবে, সময়ের সঙ্গে এই তেল নোংরা এবং দূষিত হয়ে পড়ে এবং এর কার্যকারিতা হ্রাস পায়। ইঞ্জিনের ক্ষতি রোধ করতে এবং সর্বোত্তম কর্মক্ষমতা নিশ্চিত করতে, নিয়মিত বিরতিতে ইঞ্জিন তেল পরিবর্তন করা উচিত। 

‘কার ফ্লুইড’ সম্পর্কে যে তথ্যগুলো যেনে রাখা উচিত

মাইলেজের ওপর নির্ভর করে তেল পরিবর্তনের সময় একেক গাড়িতে একেক রকম হতে পারে। ৩ ধরনের ইঞ্জিনের তেল রয়েছে, প্রাকৃতিক, আধা-সিন্থেটিক এবং সম্পূর্ণ-সিন্থেটিক। প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করলে প্রতি ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার চলার পর তেল পরিবর্তন করা নিরাপদ। আধা-সিন্থেটিকের জন্য ৫ হাজার কিলোমিটার এবং সম্পূর্ণ-সিন্থেটিক ইঞ্জিন তেলের ক্ষেত্রে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার পর পর তেল পরিবর্তন করা উচিত।

ট্রান্সমিশন ফ্লুইড

ট্রান্সমিশন ফ্লুইড গাড়ির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তরল পদার্থ। কারণ, এটি ইঞ্জিন থেকে চাকায় শক্তি স্থানান্তর করতে সাহায্য করে। এটি গিয়ারগুলোকে পিচ্ছিল রাখে এবং ঘর্ষণ ও পিষণ প্রতিরোধ করে। যা ট্রান্সমিশনকে অতিরিক্ত গরম হওয়া থেকে রক্ষা করে। ইঞ্জিন তেলের মতোই, ট্রান্সমিশন ফ্লুইডও নোংরা এবং দূষিত হতে পারে। যা একসময় ট্রান্সমিশনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই, গাড়ির গঠন এবং মডেলের ওপর নির্ভর করে প্রতি ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার কিলোমিটার চলার পর পর ট্রান্সমিশন ফ্লুইড পরিবর্তন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ব্রেক ফ্লুইড

ব্রেক প্যাডেল থেকে ব্রেকগুলোতে শক্তি স্থানান্তর করতে সাহায্য করে ব্রেক ফ্লুইড। যার মাধ্যমে আপনি আপনার গাড়ির গতি কমাতে এবং থামাতে পারেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক ফ্লুইড আর্দ্রতা শোষণ করে এবং দূষিত হতে পারে। যা এর কার্যকারিতা হ্রাস করে; এমনকি ব্রেক ফেইলিয়রও ঘটাতে পারে। তাই প্রতি ২ বছর কিংবা প্রতি ৪০ হাজার কিলোমিটার অন্তর ব্রেক ফ্লুইড পরিবর্তন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

‘কার ফ্লুইড’ সম্পর্কে যে তথ্যগুলো যেনে রাখা উচিত

পাওয়ার স্টিয়ারিং ফ্লুইড

যদিও কিছু গাড়িতে ইলেকট্রনিক স্টিয়ারিং থাকার কারণে পাওয়ার স্টিয়ারিং ফ্লুইডের প্রয়োজন হয় না। তবে এর বাইরে অন্যদের এটির ওপর নির্ভর করতে হয়। পাওয়ার স্টিয়ারিং ফ্লুইড গাড়ির স্টিয়ারিংয়ের জন্য হাইড্রোলিক চাপ সরবরাহ করে। পাশাপাশি, এটি পাওয়ার স্টিয়ারিং পাম্প এবং গিয়ারগুলিকেও লুব্রিকেট বা পিচ্ছিল করে। অন্যান্য তরলগুলির মতোই, পাওয়ার স্টিয়ারিং ফ্লুইড নোংরা এবং দূষিত হতে পারে। যার ফলে এর কর্মক্ষমতা দুর্বল হতে পারে, এমনকি পাওয়ার স্টিয়ারিং সিস্টেমেরও ক্ষতি হতে পারে। যদিও উপরে উল্লিখিত অন্যান্য তরলগুলোর মতো পাওয়ার স্টিয়ারিং ফ্লুইড ঘন ঘন পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় না। তবে একটি সচল ও স্বাস্থ্যকর স্টিয়ারিং সিস্টেম বজায় রাখতে প্রতি ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ কিলোমিটার চলার পর পর এই তরলটি পরিবর্তন করা উচিত।

ডিফারেনশিয়াল ফ্লুইড

ইঞ্জিন থেকে চাকায় শক্তি স্থানান্তর করতে সাহায্য করে ডিফারেনশিয়াল ফ্লুইড। এর মাধ্যমে চাকাগুলো বিভিন্ন গতিতে ঘুরতে পারে। ডিফারেনশিয়াল ফ্লুইড গিয়ার ও বিয়ারিংকে পিচ্ছিল রাখে এবং ডিফারেনশিয়ালকে ঠান্ডা রাখে। গিয়ারের ঘর্ষণ প্রতিরোধ করতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর ডিফারেনশিয়াল বজায় রাখতে, প্রতি ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার কিলোমিটার অন্তর অন্তর ডিফারেনশিয়াল ফ্লুইড পরিবর্তন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

আপনার গাড়ি মসৃণভাবে চলতে এবং এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশগুলোর ক্ষতি রোধ করতে নিয়মিত এসব ফ্লুইড বা তরল পদার্থ পরিবর্তন করা অপরিহার্য। যদিও এসব ফ্লুইড পরিবর্তনের প্রস্তাবিত ব্যবধান বা সময়গুলো গাড়ির গঠন এবং মডেলের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। তবে, আপনার গাড়ির কার্যক্ষমতা এবং দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করতে, এই ক্ষেত্রে গাড়ির প্রস্তুতকারকের দেওয়া বিভিন্ন সুপারিশ বা পরামর্শগুলো অনুসরণ করতে পারেন।

অনুবাদ: আহমেদ বিন কাদের অনি

Comments

The Daily Star  | English

20 non-banks on BB red list

As of December last year, they disbursed Tk 25,808 crore in loans against collateral worth Tk 6,899 crore, according to the BB report

9h ago