আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

রান তাড়ায় ‘তিনশর ভূতে’ কাবু দুই দলই!

তিনশ রানের লক্ষ্যে পূরণ তো করতেই পারছে না, লক্ষ্যের ধারেকাছেও যেতে পারছে না। এক ম্যাচ, দুই ম্যাচ নয়- টানা ছয় ম্যাচে একই চিত্র। ছয়বারের সবকটিতেই আবার অলআউট! চার ম্যাচে খেলতে পারেনি ৩৫ ওভারের বেশি।

মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা

রান তাড়ায় ‘তিনশর ভূতে’ কাবু দুই দলই!

Australia vs South Africa

কলকাতায় সেমিফাইনালের টস করতে যখন নামবেন প্যাট কামিন্স ও টেম্বা বাভুমা, দুজনেরই কী একই পছন্দ হবে না? আগে ব্যাটিং নাকি পরে ব্যাটিং নয়, ঘুরেফিরে একই পছন্দেই তো আসার কথা দুজনের। আগে ব্যাটিংয়ে এক রূপ, পরে হলেই ভিন্ন- এই নিয়ে প্রোটিয়াদের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। রেকর্ড বলে, অজিদেরও তো তাড়া করছে রান তাড়ায় তিনশর ভূত!

তিনশ রানের লক্ষ্যে পূরণ তো করতেই পারছে না, লক্ষ্যের ধারেকাছেও যেতে পারছে না। এক ম্যাচ, দুই ম্যাচ নয়- টানা ছয় ম্যাচে একই চিত্র। ছয়বারের সবকটিতেই আবার অলআউট! চার ম্যাচে খেলতে পারেনি ৩৫ ওভারের বেশি। তিনশ রানের লক্ষ্যে নেমে ওই ছয় ম্যাচের চারটিতে আবার হারের ব্যবধানটা ৭০ রানের বেশি থেকেছে। 

বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩০৭ রানের লক্ষ্যে জিতেছে অজিরা। পুনের ওই ম্যাচের আগে তাদের সফল তিনশ রান তাড়া খুঁজতে গেলে, যেতে হয় সেই ২০২০ সালে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সে জয়ের পর ভারতের বিপক্ষে ২০২০ সালেই সিরিজের এক ম্যাচে ২৮৯ রানেই অলআউট হয়ে যায় অজিরা। বিশ্বকাপের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ খেলে অস্ট্রেলিয়া। ওই সিরিজে তিন ম্যাচে তিনশর বেশি রানের লক্ষ্যে নেমে তিনবারই ব্যর্থ হয়েছে। এমন অবস্থায় সর্বোচ্চ ২৫২ রানে যেতে পেরেছিল তারা। সবচেয়ে বেশি ৩৪.৫ ওভার খেলতে সক্ষম হয়েছিল।

বিশ্বকাপের আগে তাদের সবশেষ যে সিরিজ, সেখানে ভারতের বিপক্ষে তারা ত্রিশ ওভারের আগেই সবকটি উইকেট খুইয়ে বসে, যেতে পারে ২১৭ রানে। বিশ্বকাপে এসে দক্ষিণ আফ্রিকা আবার তাদের ঠেলে দেয় প্রশ্নের মুখে। ১৭৭ রানেই অলআউট হয়ে পড়া অজিদের সামনে ভেসে উঠে এই প্রশ্ন- তিনশ রান তাড়া করে জিততে পারবে তো অস্ট্রেলিয়া? হেরে যাওয়ার সাথে অলআউট হয়ে লড়াইবিহীন হার। তিনশর ভূতই তাদের তাড়া করে ফিরছিল যেন।

অবশ্য অজিদের প্রতিপক্ষ প্রোটিয়াদের তো আরও বেশি করেই এই প্রশ্ন ঘিরে ধরেছে। টেম্বা বাভুমারাও বিষয়টা একেবারে হাওয়ায় মিলিয়ে দিচ্ছেন না। বরং বাভুমা, এইডেন মার্করামদের মুখে শোনা গেছে অনেকটা একই সুর- প্রথম ইনিংসের মতোই আমরা খেলার চেষ্টা করছি দ্বিতীয় ইনিংসে।

প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়াদের রূপটা যে পাল্টে যায় দ্বিতীয় ইনিংস এলে। ২০২৩ সালে আগে ব্যাটিং করেছে তারা যে ১১ ম্যাচে, একটি বাদে জিতেছে সবকটিতেই। সব ম্যাচই জয় হয়ে যেত, ২২৩ রানের লক্ষ্যে অজিদের দিয়ে ১১৩ রানে ৭ উইকেট তুলে জয়ের সুবাসই পাচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। পরে মারনাস লাবুশেনের ৮০ ও এস্টন অ্যাগারের ৪৮ রানের ইনিংসে প্রোটিয়ারা হেরে যায়।

আগে ব্যাট করে তাদের রেকর্ড এতটাই দুর্দান্ত! কিন্তু চলতি বছরে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে তারা যেখানে গড়ে প্রতি উইকেটে রান তুলেছে ৫২.৫, পরে ব্যাটিংয়ে তা ৩১.৮৪ রান। প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটাররা এবছরে ব্যাট করেছেন ১১১.২৪ স্ট্রাইক রেটে। দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের স্ট্রাইক রেটটা ৯৭.৭৯ এর উপরে যায়নি। এবছর পাওয়া ১৬ শতকের ১৩টিই তারা পেয়েছে প্রথম ইনিংসে।

দুই ইনিংসে যেন দেখা যায় দুই দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংসের বিধ্বংসী প্রোটিয়ারা যে কোন প্রতিপক্ষের মনেই আতঙ্ক ছড়াবে। ১১ ম্যাচে ৯ বারই যে তিনশের বড় স্কোর গড়েছেন তারা। সেই ৯টির মধ্যে আবার ৫টিকে ৩৫০ রানের উপরে নিয়ে গেছে। এই ভয়ঙ্কর প্রোটিয়াদেরই জ্বলজ্বলে রেকর্ড পরে ব্যাটিংয়ের বেলায় নিভু নিভু হয়ে পড়ে। ২০২৩ সালে যে ১০ ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে হয়েছে তাদের, জিতেছে অবশ্য অর্ধেক ম্যাচেই। কিন্তু সেই পাঁচ ম্যাচের ৪টিতে লক্ষ্য ছিল না তিনশ রানের বেশি।

হেরেছে যে পাঁচ ম্যাচে, তার মধ্যে চারটিতেই আবার লক্ষ্য ছিল তিনশ রানের উপরে। তার মানে তিনশতেই সমস্যা। একই দলেরই আবার প্রথমে ব্যাট করলে তিনশ কোন ব্যাপারই না! তাদের এই রান তাড়ায় রঙ বদলে যাওয়া নিয়ে হেইনরেখ ক্লাসেন বলেছেন, 'মিডিয়া থেকে আসা চ্যালেঞ্জ পছন্দ করছি আমরা। কথা হচ্ছে এটা নিয়ে। তবে আমরা লোকজনকে ভুল প্রমাণ করতেই পছন্দ করবো।'

শেষমেশ রান তাড়ার এই ভূত দূর করতে পারলে, দক্ষিণ আফ্রিকার আনন্দ নিশ্চয়ই আরও বেড়েই যাবে।

Comments