উৎসবের নগরীতে সমর্থন পেয়ে জেগে উঠবে বাংলাদেশ?
দুর্গাপূজা শেষ হয়েছে গত মঙ্গলবার। কিন্তু কলকাতায় আসলে শেষ হয়নি, উৎসবের রেশ এখানে প্রবল। শুক্রবার সেরা মণ্ডপগুলো নিয়ে শোভাযাত্রার আয়োজন ছিল। ইডেন গার্ডেন্সের ঠিক পাশেই ময়দান থেকে চলা শোভাযাত্রা দেখতে রাস্তার দুই পাশেই ছিলো হাজার হাজার মানুষের ভিড়, সেই ভিড়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লাল সবুজ জার্সিধারিদেরও দেখা মিলল।
জনস্রোত ঠেলে বাংলাদেশের সমর্থকদের গন্তব্য অবশ্য ছিলো গন্তব্য ছিলো মোহামেডান ক্লাব। অনেকটা পথ হেঁটে সেখান থেকেই টিকেট সংগ্রহ করেছেন তারা। পুরো রাত জুড়ে সদর স্ট্রিট, মার্কুইস স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট এলাকায় প্রচুর বাংলাদেশি মানুষের দেখা মিলেছে। তাদের সবাই এসেছেন কলকাতায় বাংলাদেশের দুই ম্যাচ দেখতে। স্থানীয় মানুষদেরও বিশ্বকাপ ও বাংলাদেশের খেলা নিয়ে আগ্রহ দেখা গেছে। তবে ছুটির দিনে তারা কতটা মাঠে যাবেন তা নিয়ে সংশয় আছে।
উৎসবের রেশ লেগে থাকা শহরে আজ নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ে ফেরার চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ দলের। নামে ভারে ডাচরা অনেক পিছিয়ে কিন্তু সাকিব আল হাসানের দলের সাম্প্রতিক ছবি ভয় ধরানোর মতন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ জেতার পর বাকি চার ম্যাচে প্রতিপক্ষের কাছে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ার পর মাঠের বাইরেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বড় হারের পর দলের সঙ্গে কলকাতা না এসে দুদিনের জন্য ঢাকায় ফিরে গিয়েছিলেন সাকিব। সেখানেই ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন। যদিও তার এই সফরকে বাহবা দিচ্ছে গোটা দল। আগের দিন তাসকিন আহমেদ জানিয়েছেন, অধিনায়ক রানে ফেরার মরিয়া তাড়না দেখাচ্ছেন।
নেদারল্যান্ডস আছে অনেকটা চাপমুক্ত। বিশ্বকাপে খুব বড় কোন প্রত্যাশা নিয়ে আসেনি তারা। এরমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দেওয়ায় একটি প্রাপ্তি যোগ হয়ে গেছে। বাংলাদেশকে হারালে বাড়তি পাওনা, না হারাতে পারলেও ক্ষতি নেই।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জিততেই হবে, হারলে দেখা দিবে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতি। বাংলাদেশের সমর্থকরাও এই ম্যাচ ঘিরে তাই তুমুল উন্মাদনায় মাতছেন।
পার্ক স্ট্রিটের এক রেস্তুরায় বৃহস্পতিবার রাতে গিয়ে দেখা গেল উপস্থিত সবাই বাংলাদেশি। সবারই উদ্দেশ খেলা দেখা। নীলা সুলতানা নামের এক ভক্ত বললেন, 'আশা ছিল সেমিফাইনাল যাবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেটা হবে না। সেজন্য মন খারাপ। তবে আমরা কলকাতায় দুটো জয় দেখতে চাই। তাহলেও হবে।'
ওয়ালটনে চাকরি করেন ফয়সাল আজিজ নামের আরেক ভক্ত, দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে পাকিস্তানের হারে বেশ খুশি। তার মতে পাকিস্তান চাপে পড়ে যাওয়ায় কলকাতা থেকে দুটি জয়ের আশা এখন করাই যায়।
রাকিব সোবহান অফিসের ছুটি নিয়ে বর্ডার ক্রস করে এসেছেন ম্যাচের আগের রাতে। অনলাইনে কাটা টিকেট সংগ্রহের চিন্তায় দেখা গেল তাকে। জানালেন, শুক্রবার বিপুল মানুষকে দেখা গেছে বেনাপোল বর্ডারে। ভিসা জটিলতা কাটিয়ে বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে এসেছেন তারা।
মানুষের সমর্থন নিশ্চিতভাবেই ইডেনে থাকছে। গ্যালারিতে দর্শকধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি হওয়ায় বাংলাদেশের ১০-১২ হাজার মানুষ থাকলেও অনেকটা ফাঁকা লাগবে। তবে যা আওয়াজ পাওয়া যাবে সবই সাকিবদের পক্ষে।
বিশ্বকাপে যেসব উইকেটে খেলা হচ্ছে তা একদম ব্যাটিং বান্ধব। এসব উইকেটে বোলারদের কাজটা কঠিন বলে অনেকটা অসহায়ত্ব ফুটে বেরিয়েছে তাসকিনের কণ্ঠে। আসল দায়িত্ব তাই নিতে হবে ব্যাটারদের। পুরো দলকে শরীরী ভাষায় দেখাতে হবে চাঙা ভাব। সেই আমেজ ফেরাতে গ্যালারি থেকে সমর্থন চাইছিলেন তাসকিন। তাতে অন্তত পাঁচ শতাংশ লাভও যদি হয়। তাসকিনদের ভরসা দিতে হাজির সমর্থকরা। সমর্থন পেয়ে এবার মাঠে জেগে উঠার কাজটা করতে হবে সাকিবদেরই।
Comments