বিশ্বকাপে দুটি ‘প্রথম’ আর স্পিনারদের কীর্তির সম্মিলনে আফগানদের ইতিহাস
পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে দিয়ে আফগানিস্তান গড়েছে ইতিহাস। বিশ্বকাপে টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় জয়ের সঙ্গে অষ্টম চেষ্টায় করেছে পাকিস্তানবধ। সোমবার চেন্নাইয়ে সেই ঐতিহাসিক অর্জনে অবদান রেখেছে দুটি 'প্রথম'। অন্যভাবে বলা যায়, ব্যাট হাতে সেই 'প্রথম'গুলোর দেখা এতদিন না পাওয়াতেই বিলম্বিত হয়েছে আফগানদের আরাধ্য মুহূর্তের নাগাল পাওয়া।
রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান ও রহমত শাহ— টপ অর্ডারের এই তিন ব্যাটারের ফিফটি পাওয়ার ঘটনা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। গুরবাজ ৬৫, ইব্রাহিম ৮৭ ও রহমত খেলেছেন অপরাজিত ৭৫ রানের ইনিংস। তাদের বদৌলতে আফগানিস্তান টপকে গেছে পাকিস্তানের দেওয়া ২৮৩ রানের লক্ষ্য। বিশ্বকাপের মঞ্চে তিন আফগান ব্যাটারের পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলার ঘটনা এদিনই ঘটেছে 'প্রথম'বারের মতো। আর নিঃসন্দেহে সেই 'প্রথম' অবদান রেখেছে আফগানিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন একটি অধ্যায় লিখতে।
শুধু তাই নয়! টপ অর্ডারের তিন ব্যাটার পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন, বিশ্বকাপে রান তাড়ায় এটাও আফগানদের কল্যাণে দেখা গেছে 'প্রথম'বার। তবে আগে ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে আরও আটটি ম্যাচে তা হয়েছে।
জয়ের পেছনে অবশ্য আফগান স্পিনারদেরও কৃতিত্ব দিতে হয়। স্পিনাররাও এক পুরনো রেকর্ডে অংশীদার বাড়িয়েছেন। পেসার ফজলহক ফারুকির জায়গায় নূর আহমেদকে জায়গা দিয়ে আফগানিস্তান নেমেছিল চার স্পিনার নিয়ে। তারা মিলে করেছেন মোট ৩৮ ওভার।
বিশ্বকাপের মঞ্চে কোনো দল এক ম্যাচে স্পিন দিয়ে এর চেয়েও বেশি ওভার করিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০১১ সালের আসরে জিম্বাবুয়ের স্পিনাররা মিলে করেছিলেন ৩৯ ওভার। সংযুক্ত আরব আমিরাতও সমান ৩৯ ওভার স্পিন করিয়েছিল ১৯৯৬ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। তবে দুটি ম্যাচেই স্পিনার ব্যবহার করা হয়েছিল চার জনের বেশি। তবে সর্বোচ্চ চার জন স্পিনার ব্যবহার করে ৩৮ ওভারের বেশি হাত ঘোরানোর নজির আর একটিও নেই। বিশ্বকাপের মঞ্চে চার স্পিনারের সর্বোচ্চ ওভার করার রেকর্ড এটি। এর আগেও এমনটা একবার ঘটেছিল, যা করেছিল আফগানিস্তানই। ম্যাচটা ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপে, পাকিস্তানেরই বিপক্ষে!
সেদিন মুজিব, নবি, রশিদ— স্পিনত্রয়ীর সঙ্গে ছিলেন লেগ স্পিনার সামিউল্লাহ শেনওয়ারি। এবারও আফগানিস্তান করিয়েছে ৩৮ ওভার স্পিন। নূর, রশিদ ও নবি— তিনজনেরই কোটা পূর্ণ হলেও মুজিব উর রহমানকে দিয়ে ৮ ওভার করান আফগানিস্তান অধিনায়ক হাশমতুল্লাহ শহিদি।
মুজিব নিজের সেরা ছন্দে না থাকলেও বাকি তিন স্পিনারই দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। মোট ৩৮ ওভারে মাত্র ৪.৬৩ ইকোনমিতে ১৭৬ রান দিয়ে চার জন মিলে নিয়েছেন ৪ উইকেট। পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের ভালো শুরু ও শেষের মাঝে স্পিনারদের নৈপুণ্যেই আফগানরা রানের গতি লাগামছাড়া হতে দেয়নি। এত ওভার স্পিন করিয়ে নিজেদেরই যে রেকর্ডে ভাগ বসাল আফগানিস্তান, ইতিহাস গড়ায় সেটিরও তাই অবদান আছে বলা যায়।
পাকিস্তান-আফগানিস্তান ম্যাচে দুই দল মিলিয়েও স্পিন ব্যবহৃত হয়েছে অনেক বেশি— মোট ৫৯ ওভার। এদিন বিশ্বকাপের এক ম্যাচে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওভার করেছেন স্পিনাররা। এর চেয়ে বেশি ওভার স্পিন বোলিং হয়েছে মাত্র এক ম্যাচে। লিডসে ২০১৯ বিশ্বকাপের ওই পাকিস্তান-আফগানিস্তান ম্যাচে দুই দলের স্পিনাররা করেছিলেন মোট ৬০ ওভার। বিশ্বমঞ্চ অবশ্য আরও একবার ৫৯ ওভার স্পিন দেখেছিল। সেটি ২০১১ সালে ভারত-আয়ারল্যান্ড ম্যাচে।
পাকিস্তান-আফগানিস্তান ম্যাচে এক দলের স্পিন জ্বলজ্বল করলেও আরেক দলের ক্ষেত্রে বিবর্ণ থেকেছে। শাদাব খান, উসামা মীর ও ইফতিখার আহমেদ মিলে ২১ ওভার করে কোনো উইকেট পাননি। রান খরচ করেছেন ১৩১। এশিয়ার মাটিতে হওয়া বিশ্বকাপে এর চেয়ে বেশি ওভার করেও স্পিনারদের ভাগ্যে উইকেট না জোটার নজির আছে। তবে সেসব ঘটনায় সম্মিলিত ইকোনমি ছিল ছয়ের কম। এদিন পাকিস্তানি স্পিনাররা উইকেটশূন্য থেকেছেন, রানও বিলিয়েছেন ওভারপ্রতি ছয়ের বেশি করে। বিপরীতে, স্পিনারদের নৈপুণ্যের পর ব্যাটারদের দুটি 'প্রথম'-এর হাত ধরে আফগানিস্তান চড়েছে আনন্দের ভেলায়।
Comments