আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

স্পিনজালে ইংল্যান্ডকে আটকে আফগানিস্তানের আপসেট

টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে বিশ্বকাপে প্রথম জয়টা আফগানরা পেল কিনা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদেরই বিপক্ষে!

স্পিনজালে ইংল্যান্ডকে আটকে আফগানিস্তানের আপসেট

ইংল্যান্ড বনাম আফগানিস্তান

আফগানিস্তান দলের কিছু নামের খাতিরে বিশ্বক্রিকেটে সুনাম। আফগানিস্তান দলের উপর তাই আলাদা নজর থাকে ক্রিকেটবিশ্বের। কিন্তু দল হিসেবে বড় মঞ্চে বড় কিছুর স্বপ্ন তারা সত্যি করতে পারছিলো না। বিশ্বকাপে জয় মাত্র একটি। ছিল, ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়ে যে সে সংখ্যাটা এখন দুই। টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে বিশ্বকাপে প্রথম জয়টা তারা পেল কিনা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদেরই বিপক্ষে!

বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ পুঁজি ২৮৪ রান নিয়ে আফগানিস্তান নেমেছিল বোলিংয়ে। তাতে ইংল্যান্ডকে তারা ২১৫ রানে অলআউট করে দিয়ে জিতেছে ৬৯ রানে। স্পিনত্রয়ীর সাথে ফারুকী ও নাভিন সময়মতো কাজে এসেছেন, আফগানরা মিলে তাই জন্ম দিয়েছে নতুন এক আপসেটের।

আফগানিস্তান বোলিং ইনিংসের সূচনা ফজলহক ফারুকী করেন। এদিন নিয়মিত চিত্র বদলে গেলে ফজলহক ফারুকীর ভাগ্যও যেন বদলে যায় তাতে। দুর্দান্ত এক ইনসুইংয়ে প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন জনি বেয়ারস্টোকে। তিন রানে প্রথম উইকেট হারানো ইংল্যান্ড মালান-রুটের ব্যাটে ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিল। অপর প্রান্তে মুজিব নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রান আটকে রেখেছিলেন, মুভমেন্ট পেয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেও ইংলিশ ব্যাটারদের উইকেট আর পাননি ফারুকী। মুজিব এসে জো রুটকে বোল্ড করে দেন দলীয় ৩৩ রানে।

মালানের সঙ্গে ব্রুক এসে বড় ধাক্কার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়ার দিকেই যাচ্ছিলেন। ১৩তম ওভারে মোহাম্মদ নাবি এসে মালানকে ফিরিয়ে দেন চারটি চারে গড়া ৩২ রানের ইনিংস শেষে। ৬৩ রানে তিন উইকেট হারানো ইংল্যান্ডের উপর তখন চেপে বসে আফগানরা। ব্রুক স্বস্তিতে থাকলেও বাটলার নড়বড়ে ছিলেন। ইংল্যান্ড একশ পেরিয়ে যাওয়ার আগে বাটলারেরও বিদায় ঘটে যায়। নাভিনের দুর্দান্ত ইনসুইংয়ে বাটলার বোল্ড হন ১৮ বলে ৯ রানে।

আফগানদের পক্ষে ম্যাচ আনতে রশিদ খানের হাতে তখন নাটাই। তখনও রশিদের বাকি নয় ওভার। রশিদের শিকার পেতে বেশি সময় লাগেনি। লিভিংস্টোনকে এলবিডাব্লিউ করেন ১০ রানেই। ২১তম ওভারেই ১১৭ রানে ইংল্যান্ড হারিয়ে ফেলে অর্ধেক উইকেট। দুই তরুণ ব্রুক ও স্যাম কারানের জন্য ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় পরীক্ষা ছিল, দুই স্পিনার রশিদ-নাবির স্পিনও তাদের সামনে বিশালাকারের পরীক্ষা। স্পিনারদের জন্য দিল্লির পিচে মোটামুটি সহায়তা থাকায় আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন তারা। কিছুক্ষণ টিকে থেকে নাবির বলে পরাস্ত হয়ে শেষমেশ কারান চলে যান যখন, ইংল্যান্ড তখনও ১৩৮ রানে।

রশিদ তার স্পেল শেষ করেন ৭ ওভারে ২৩ রান দিয়ে। মুজিব আসেন তার ম্যাজিক নিয়ে। আসা-যাওয়ার মিছিলে বাকিরা ব্যস্ত থাকলেও ব্রুকের গায়ে যেন চাপ লাগেনি। ফিফটি পেরিয়ে গিয়েছিলেন স্বচ্ছন্দে খেলে। কিন্তু মুজিব এসে ওকসকেও দ্রুত ফিরিয়ে দিলে ইংল্যান্ড ১৬০ রানেই হারিয়ে ফেলে ৭ উইকেট। সেখান থেকে ব্রুককে অবিশ্বাস্য কিছুই করতে হতো। ৬৬ রানে তাকে ফিরিয়ে মুজিব নিজেদের ঐতিহাসিক জয়ের রাস্তা পরিষ্কার করে দেন। রশিদ, উড, টপলি মিলে আফগানিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় শুধু বিলম্বিতই করেছেন।

এর আগে দিল্লিতে টস জিতে বোলিং নিয়ে ইংল্যান্ডের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। ওকস ছন্দে ছিলেন না। রহমানুউল্লাহ গুরবাজ ইংলিশ বোলারদের উপর চড়াও হয়েছিলেন ভালোমতন। নিয়মিত বাউন্ডারি বের করে ৬.৩ ওভারেই পঞ্চাশ পেরিয়ে যায় আফগানিস্তান। এক প্রান্তে রিস টপলি যদিও ইকোনমিক্যাল বোলিং করে গেছেন। তার ৫ ওভারের স্পেলে রান এসেছে পাঁচের কম ইকোনমিতে। তবে অপর প্রান্তে ওকসের পর স্যাম কারানও এসে রান বিলিয়েছেন, দুজনে মিলে ৫ ওভারেই দিয়ে ফেলেন ৫৭ রান। পাওয়ারপ্লেতেই তাই আফগানিস্তান দশ ওভারে এনে ফেলে ৭৯ রান, বিশ্বকাপে যা তাদের সর্বোচ্চ।

গুরবাজ বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে আগ্রাসী ভঙ্গিতেই খেলে যাচ্ছিলেন। ৩৩ বলে পেয়ে যান ফিফটি। ১৪তম ওভারে দলীয় একশ রানও ছাড়িয়ে যান তারা। ইব্রাহিম জাদরান পাওয়ারপ্লের পর রান বের করতে পারছিলেন না, শেষমেশ আদিল রশিদকে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ২৮ রানেই। রহমত শাহকে এরপর দুর্দান্ত এক ফ্লাইটেড ডেলিভারীতে স্টাম্পিংয়ে শিকার করেন রশিদ। ৩ রানে রহমত ফিরতে না ফিরতেই আরেকটি উইকেট খুইয়ে বসে আফগানরা। সেটি আবার গুরবাজেরই! তাও রানআউটে। শহিদি-গুরবাজ ঝুঁকি নিয়ে রান নিতে গেলে থেমে যায় গুরবাজের বড়কিছুর সম্ভাবনা। ছন্দে থাকা গুরবাজকে থেমে যেতে হয় ৫৩ বলে ৮০ রান করে। ১১ রানে ৩ উইকেট হারানো আফগানিস্তানকে উদ্ধারের কাজ বর্তায় শহিদি-ওমরজাই জুটির উপর। তবে ওমরজাই তার ইনিংস ১৯ রানের বড় করতে পারেননি। শহিদিও আউট হয়ে যান ৩৬ বলে ১৪ রানে।

মার্ক উড এসে মোহাম্মদ নাবিকেও ফিরিয়ে দেন ৯ রানেই। কোন জুটিই ত্রিশ রানের বড় হচ্ছিল না। একপাশে ইকরাম আলী খিল যদিও খেলে যাচ্ছিলেন দেখেশুনে, তার সঙ্গ দিয়ে ২৩ বলে ২২ রানের ইনিংস খেলেন রশিদ। রশিদ-খিলের ৪৩ রানের জুটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর মুজিব তার ঝলক দেখান। ২১৬ রানে শেষ দশ ওভারে প্রবেশ করে প্রথম পাঁচ ওভারে আফগানরা আনতে পারে মোটে ২১ রান। এরপর স্যাম কারানের এলোমেলো ওভারে দুটি চারের সাথে একটি ছয় মারেন মুজিব। ১৬ বলে ২৮ রানের ক্যামিও খেলে উডের বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান মুজিব। ইকরাম ৬১ বলে ধীরগতির ফিফটি পূর্ণ করে শেষে ঝড় তুলতে পারেননি। নাজিবুল্লাহ জাদরানের জায়গায় সুযোগ পাওয়া ইকরামের সে ইনিংসেই যদিও আফগানরা শেষমেশ ২৮৪ রানের পুঁজি গড়তে পেরেছিল। এরপর তাদের স্পিনজালে আটকেই গেছে ইংল্যান্ড।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

11h ago