আগ্রাসী ফিফটি হাঁকিয়ে লিটনের বিদায়
রানের খোঁজে থাকা ওপেনার লিটন দাস ভাঙলেন ব্যর্থতার বৃত্ত। তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে ফিফটি তুলে নিলেও শুরুতে অন্যপ্রান্তে উইকেট পড়ল টপাটপ। এরপর প্রতিরোধ লড়াইয়ে তার সঙ্গী হলেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। তবে সেঞ্চুরির সুবাস জাগিয়ে থামতে হলো লিটনকে। ফলে রান তাড়ায় নামা বাংলাদেশের বিপদ আরও বাড়ল।
মঙ্গলবার ভারত বিশ্বকাপের ম্যাচে ধর্মশালায় মুখোমুখি হয়েছে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশ। এই প্রতিবেদন লেখার সময়, লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে থাকা টাইগারদের সংগ্রহ ২২ ওভারে ৫ উইকেটে ১২৬ রান। ক্রিজে আছেন মুশফিক ৪৪ বলে ৩৫ রানে। কিছুক্ষণ আগে নামা তাওহিদ হৃদয় খেলছেন ৩ বলে ২ রানে।
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৩৮ বলে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন ডানহাতি লিটন। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১১তম ফিফটি, বিশ্বকাপের মঞ্চে দ্বিতীয়। দৃঢ়তা দেখানো মুশফিকের সঙ্গে তার জুটির রান পঞ্চাশ ছাড়ায় ৫৮ বলে। দুই তারকার কল্যাণে ১১ থেকে ২০- এই ১০ ওভারে কোনো উইকেট পড়েনি বাংলাদেশের।
২১তম ওভারের শেষ বলে থামতে হয় লিটনকে। আক্রমণে ফেরা ক্রিস ওকসের অফ কাটারে পরাস্ত হন তিনি। ক্যাচ চলে যায় উইকেটের পেছনে থাকা জস বাটলারের গ্লাভসে। ৬৬ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় লিটনের রান ৭৬। তার বিদায়ে ভাঙে মুশফিকের সঙ্গে তার ৭৫ বলে ৭২ রানের জুটি।
পাওয়ার প্লেতে নেই বাংলাদেশ ৪ উইকেট
বাংলাদেশের দরকার ছিল মজবুত ভিত, ভালো একটি উদ্বোধনী জুটি। কিন্তু সম্ভাব্য সবচেয়ে বাজে শুরুই হয় টাইগারদের। দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে তানজিদ হাসান তামিম ক্যাচ দেন স্লিপে। পরের বলেই ছন্দে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন।
প্রথম ওভারে ডানহাতি পেসার ক্রিস ওকসকে টানা তিনটি মারেন লিটন। তবে এই আনন্দের ব্যাপ্তি স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। পরের ওভারেই বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেন একাদশে ফেরা বাঁহাতি পেসার রিস টপলি।
জায়গায় দাঁড়িয়ে ঠিকমতো খেলতে ব্যর্থ হন আরেক ওপেনার তানজিদ। বল তার ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ে জনি বেয়ারস্টোর হাতে। ২ বলে তার রান ১। পরের বলেই বড় শিকারের উল্লাসে মাতে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ড্রাইভ করার চেষ্টায় লিয়াম লিভিংস্টোনের তালুবন্দি হন শান্ত। গোল্ডেন ডাকের তিক্ত স্বাদ জোটে তার।
১৪ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর প্রয়োজন ছিল প্রতিরোধ গড়ার। কিন্তু সপ্তম ওভারে সাকিব আল হাসান বোল্ড হন টপলির অসাধারণ একটি ডেলিভারিতে। অফ স্টাম্পে পিচ করে সোজা যাওয়া বল বাংলাদেশ অধিনায়কের ব্যাট এড়িয়ে ভেঙে দেয় স্টাম্প। ৯ বলে ১ রান করেন সাকিব।
বিপদ আরও বাড়িয়ে যান মেহেদী হাসান মিরাজ। ওকসের বলে ইংলিশ দলনেতা ও উইকেটরক্ষক জস বাটলারের গ্লাভসে ক্যাচ দেন তিনি। আগের ম্যাচে তিনে খেলা মিরাজ এদিন পাঁচে নেমে ৭ বলে ৮ রান করেন। ফলে ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
রানের পাহাড়ে ইংল্যান্ড
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেটে ৩৬৪ রানের বিরাট পুঁজি পায় ইংল্যান্ড। এতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা বাংলাদেশ পেয়েছে রেকর্ড গড়ার চ্যালেঞ্জ।
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৩২২ রান তাড়া করে জেতার কীর্তি আছে বাংলাদেশের, গত বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড আয়ারল্যান্ডের দখলে। ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২৮ রান তাড়া করে জিতেছিল তাড়া।
হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা ইংল্যান্ডের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটার খেলেন দুর্দান্ত ইনিংস। এর সঙ্গে যোগ হয় বাংলাদেশের হতাশাজনক বোলিং ও ফিল্ডিং। শেষদিকে অবশ্য বোলাররা ঘুরে দাঁড়ান। শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৬৬ রান তুলতে ইংলিশরা হারায় ৬ উইকেট। নইলে তাদের সংগ্রহ চারশ ছাড়িয়ে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা ছিল।
আগ্রাসী সেঞ্চুরি হাঁকানো ডাভিড মালান ওপেনিংয়ে বেয়ারস্টোর সঙ্গে ১১৫ ও দ্বিতীয় উইকেটে জো রুটের সঙ্গে ১৫১ রানের জুটি গড়েন। মালান ১০৭ বলে ১৬ চার ও ৫ ছক্কায় ১৪০ রান করেন। রুট ৬৮ বলে খেলেন ৮২ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস। তার ব্যাট থেকে আসে ৮ চার ও ১ ছক্কা। বেয়ারস্টো ৮ চারে ৫৯ বলে করেন ৫২ রান।
একাদশে ঢোকা শেখ মেহেদী বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন। তবে ৮ ওভারে তিনি দেন ৭১ রান। ১০ ওভারে ৭৫ রানের বিনিময়ে শরিফুল ইসলামের শিকার ৩ উইকেট। বাংলাদেশের ব্যবহার করা ছয় বোলারের মধ্যে ওভারপ্রতি ছয়ের কম রান দেন কেবল সাকিব। ১০ ওভারে ৫২ রান দিয়ে তিনি পান ১ উইকেট।
Comments