বিতর্ক ছাপিয়ে উড়তে চায় বাংলাদেশ
বড় সিরিজ হিসেবে যতটা উত্তাপ ছড়ানোর কথা, মাঠের খেলা নিয়ে যতটা আলাপ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তার অনেকটাই লোপাট অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্কে। সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের সম্পর্কের আলোচনা রেশ থাকল আগের দিন পর্যন্ত। বাংলাদেশ দল অবশ্য সকল মনোযোগ নিয়েছে খেলায়। সেখানে ইংল্যান্ডকে প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজ হারানোর লক্ষ্য নিয়ে একাগ্র তামিম ইকবালরা।
ইংল্যান্ড দল বাংলাদেশে অনুশীলনে নামার প্রথম দিনই একটি গণমাধ্যমে দেওয়া বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাক্ষাতকার কেড়ে নেয় সব নজর। সাকিব-তামিম দ্বন্দ্বে অস্বাস্থ্যকর ড্রেসিংরুমের ইস্যু হয়ে যায় বড়।
পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে তামিম ইকবালকে উত্তর দিতে হয় এই সম্পর্কিত অনেক প্রশ্নের, চাপা পড়ে যায় সিরিজ নিয়ে তার ভাবনার কথা। তারপর দিনও বোর্ড প্রধান আবার নিজের ব্যাখ্যা জানাতে গিয়ে সরিয়ে দেন মনোযোগ।
মঙ্গলবার সিরিজের আগে দলের শেষ অনুশীলন সেরে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে অবশ্য মনে করালেন, এসব আলাপের এখন আর সময় নেই। এবার ফিরতে হবে খেলায়। বাংলাদেশ দলকেও আসলে মাঠে প্রমাণ করতে হবে, আঁচ লাগেনি নেতিবাচক কথায়। দলের ভেতর যে গ্রুপিংয়ের কথা এসেছে, ড্রেসিংরুমে যেমন অস্বস্তির পরিবেশ বলা হয়েছে, পারফরম্যানে সেসবের আসলে নেই কোন প্রভাব।
এমনিতে এই সিরিজটা হাথুরুসিংহের ফেরার সিরিজ হিসেবেও আলোচিত হতে পারত বেশি। সাড়ে পাঁচ বছর পর বাংলাদেশের ক্রিকেটে ফেরা লঙ্কান কোচই থাকার কথা মূল ফোকাসে। সাকিব-তামিম ইস্যুর মধ্যে তার ফেরাও কিছুটা চাপা পড়ল। ফিরে অবশ্য তিনি এরমধ্যেই ছাপ রাখতে শুরু করেছেন। পুলের ক্রিকেটারদের নিয়ে সভা করেছেন, সিনিয়রদের সঙ্গে আলাপ করেছেন, আগামীর নেতৃত্ব তৈরির জায়গাতেও হাত দিয়েছেন। এসবের সঙ্গে চলেছে কঠোর প্রস্তুতিও।
সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাবনা জানাতে এসে কুঁকড়ে যেতে চাননি, জানিয়েছেন তিন বিভাগেই আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে চান তারা, 'আমার আগের দফার দায়িত্বে আমরা আগ্রাসী ক্রিকেট খেলেছি। আপনি যদি বলেন, বাংলাদেশ আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে না, আমি সেটি বিশ্বাস করি না। আমরা আগ্রাসী ক্রিকেট খেলি।'
'আপনি শুধু ব্যাটসম্যানদের অ্যাকশন দেখেন। আগ্রাসী ক্রিকেট বলতে আগ্রাসী ফিল্ডিং সাজানোও বোঝায়। তো আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার অনেক উপায় আছে। শুধু বল মাঠের বাইরে পাঠানোই আগ্রাসী ক্রিকেট নয়। মাঠে আমরা ওই ধরণ আনার চেষ্টা করছি। হোক ব্যাটিং, বোলিং বা ফিল্ডিং; আমরা এভাবেই পারফর্ম করতে যাচ্ছি।'
খেলার ফল নিয়ে কেউই নিশ্চয়তা দিতে পারে না। তবে আগ্রাসী ক্রিকেটের বার্তা দেওয়ায় বাংলাদেশ দলের অ্যাপ্রোচ থাকবে নজরে। বুধবার (১ মার্চ) দুপুর ১২টা থেকে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তামিমদের প্রতিটি ধাপে কৌতূহলী অজস্র চোখ থাকবে ব্যস্ত।
এই সিরিজ দিয়ে দায়িত্বে ফেরার আপাতত দল নিয়ে কোন নাড়াচাড়া করবেন না কোচ। প্রথম দুই ম্যাচে আগের সব ধারাবাহিকতা থাকবে, এটা নিশ্চিত করে দিয়েছেন। তার কথার পর একাদশ নিয়ে তেমন কোন আর জটিলতার জায়গা নেই।
বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং অর্ডার এমনিতে অনুমিতই। সেরাদের সবাই থাকছেন। বোলিং আক্রমণে সাকিব ও মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে একজন বাড়তি স্পিনার খেলানো হয় কিনা দেখার বিষয়। বাড়তি স্পিনার না নিলে মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদের সঙ্গে একাদশে থাকতে পারেন হাসান মাহমুদ।
ইংল্যান্ড- বাংলাদেশ একটা জায়গায় সমান হিসেব নিকেশের সামনে দাঁড়িয়ে। ওয়ানডে সুপার লিগের সিরিজ হলেও দুই দলই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে ফেলায় পয়েন্টের ভাবনা নেই। মূল ভাবনা বিশ্বকাপ নিয়ে। চলতি বছর ভারতে হতে যাওয়া আসরে আদর্শ সমন্বয় খুঁজে পাওয়া, খেলার ধরণ ঠিক করার অনেক কিছু বাজিয়ে দেখতে চাইবেন তারা।
ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার জানিয়ে গেছেন, এখানে তারা চান কঠিন পরীক্ষা। উইকেট হোক চ্যালেঞ্জিং। কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেদের বাজিয়ে দেখার ভাবনা বিশ্বকাপ ঘিরেই।
২০১৫ বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে দুর্বার পথ চলা শুরু বাংলাদেশের। এরপর থেকে ১৩ সিরিজের ১২টিতেই এসেছে জয়। যে একটি জেতা যায়নি, সেটিই আবার ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তামিমদের সঙ্গে তাই আছে আক্ষেপ ঘুচানোর মিশন, নতুন প্রাপ্তির সম্ভাবনাও।
সেই কাজটা যে কত কঠিন প্রতিপক্ষের বোলিং ও ব্যাটিং আক্রমণ ইঙ্গিত দিচ্ছে। সম্ভাব্য সেরা পেস আক্রমণ নিয়ে এসেছে সফরকারীরা। দুই তিনজন ছাড়া ব্যাটাররাও প্রায় সবাই আছেন। জোফরা আর্চার, মার্ক উডদের পেস সামলানোর পর আদিল রশিদের লেগ স্পিনের ধাঁধাও মেলাতে হবে লিটন দাসদের। জস বাটলার, দাবিদ মালান, ফিল সল্টরা তো বটেই, অলরাউন্ডারদের দল ইংল্যান্ডের নয় নম্বর ব্যাটারও দিতে পারেন কঠিন সময়। সিরিজ জিততে তামিমদের তাই খেলতে হবে তীব্রতা নিয়ে, শরীরী ভাষায় দেখাতে হবে ঝাঁজ।
বুধবার শুরুর পর শুক্রবার মিরপুরেই হবে দ্বিতীয় ওয়ানডে। ৬ মার্চ চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হবে তৃতীয় ম্যাচ।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: তামিম ইকবাল, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম/হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান।
Comments