হাইলাইটস দেখে লিটনের মনে হয়, ‘কী ব্যাটিং করি!’
যার ব্যাটিং দেখা বহু মানুষের কাছে চোখ ও মনের শান্তি। যার ব্যাটিংকে ধারাভাষ্যকাররা নান্দনিক কোন চিত্রকর্মের সঙ্গে তুলনায় মাতেন প্রায়ই। সেই লিটন দাসের নিজের ব্যাটিংই নাকি নিজের অতটা ভালো লাগে না। হাইলাইটস দেখে তার মনে নয় কী আর এমন ব্যাটিং করেন!
লিটনের সেরা দিনে তার চরম শত্রুরও টিভি পর্দা থেকে চোখ সরানো কঠিন। ছন্দময় সুরের ঢেউয়ে মোহাবিষ্ট করা সব মুহূর্ত উপহার দিতে পারেন তিনি। মনে করা হয় বাংলাদেশের ইতিহাসেরই সবচেয়ে দৃষ্টি সুখকর ব্যাটার তিনি। বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটেও তার মতন মোহনীয় শটের বাহার খুব কম ব্যাটারেরই আছে।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে লিটন ফের ছড়ালেন দ্যুতি। আগের দিন ২২ বলে ৪০ করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে জিতিয়ে হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। এবার ৪২ বলে ৭০ করে দলকে আরেক জয় এনে দেওয়ার নায়ক তিনি।
সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে চোখ ধাঁধানো শটের পসরা মেলে ধরেন। ৭ চার, ৪ ছক্কার মধ্যে পুল, কাভার ড্রাইভ, ফ্লিকের বাহার ছিল।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এলে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, সবাই এত প্রশংসায় ভাসান। নিজের খেলার হাইলাইটস দেখে কেমন অনুভূতি হয় তার? এতে অবাক করা উত্তর দিলেন সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার, 'দেখি (হাইলাইটস) কিন্তু দেখে মনে হয় কী ব্যাটিং করি? আমার কাছে মনে হয় এরকম কিছু (না)...। একেকজনের ভিউ একেকরকম থাকে। আমার মনে হয় আরও ভালো করার জায়গা আছে।'
ক্যারিবিয়ান ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ একবার লিটনের ব্যাটিংকে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসার চিত্রকর্মের সঙ্গে তুলনা বলেছিলেন, 'অ্যান্ড লিটন দাস ইজ পেইন্টিং আ মোনালিসা হিয়ার!' । সেটা নিয়ে প্রতিক্রিয়া, 'শুনছিলাম মনে হয়...মনে নাই। হ্যাঁ শুনছিলাম।'
এদিন মাশরাফি মর্তুজাকে দুটো মোহনীয় কাভার ড্রাইভে বল পাঠান বাউন্ডারিতে। শরীরের পজিশন থেকে ব্যাটের টাচ ও প্লেসমেন্ট ছিল দেখার মতো। তার তূনে আছে পুল, সুইপ, ফ্লিকের মতো দারুণ সব শট। এসবের মধ্যে কোনটা প্রিয়? উত্তরে লিটন জানান নিজের সবচেয়ে প্রিয় শটটা তিনি খেলতেই পারেন না, 'আমার কাছে স্ট্রেট ড্রাইভটা প্রিয় শট কিন্তু আমি খেলতে পারি না (হাসি)। সত্য কথা, মানে আমার কাছে স্ট্রেট ড্রাইভ সব সময় খুব ভালো লাগে। আমি অনেক সময় অবাক হয়ে যাই যে আমি এই শটটা মারছি।'
এবার বিপিএলে প্রথম দুই ম্যাচে খুব একটা ভালো করতে পারেননি। দলও হেরেছিল। পরের ম্যাচগুলোতে তাকে পাওয়া যাচ্ছে চেনা রূপে। কুমিল্লার বড় ভরসা জানালেন বরাবরের মতো আগ্রাসী ক্রিকেট খেলাই তার নীতি, 'আমার যতগুলো পঞ্চাশের ইনিংস দলকে জেতাতে সাহায্য করেছে, খেলার মোমেন্টাম বদল করেছে। সবগুলো কম বলে। খুব একটা বেশি বল নিয়ে কখনই আমি ইনিংস খেলিনি ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে। আমার চরিত্রটাই এমন, আগ্রাসী খেলতেই পছন্দ করি। কখনই এমন না যে ৪০ বলে ৪০ করি। ৪০ বল খেললে ৬০-৭০ হয়ে যায়। সব সময় আগ্রাসী ক্রিকেটই খেলতে চাই।'
Comments