'এটা ফুটবলের নিয়মের চেয়ে বড়, জীবন ও মরণের ব্যাপার'

ছবি: টুইটার

গোলের পর জার্সি উঠিয়ে মাথার পেছনে নিয়ে যান মোহাম্মেদ কুদুস। এমন উদযাপনে ভাঙা পড়ে নিয়ম। তবে বিস্ময় জাগান ডাচ রেফারি পল ফন বোকেল। তিনি বিরত থাকেন কুদুসকে হলুদ কার্ড দেখানো থেকে। কেন? উদযাপনে অকালপ্রয়াত ক্রিস্টিয়ান আতসুকে স্মরণ করেছিলেন কুদুস। তার জার্সির নিচে থাকা সাদা রঙের গেঞ্জিতে লেখা ছিল, 'শান্তিতে বিশ্রাম নাও আতসু।'

গত শনিবার আতসুর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়। কয়েক দিন আগের ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কের আন্তাকিয়ার একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে পাওয়া যায় তার মৃতদেহ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩১ বছর। তুরস্কের ক্লাব হাতাইস্পোরের হয়ে খেলতেন তিনি। ঘানার এই উইঙ্গার আগে প্রতিনিধিত্ব করেছেন পোর্তো, চেলসি ও নিউক্যাসল ইউনাইটেডের মতো দলের।

২২ বছর বয়সী মিডফিল্ডার কুদুস আতসুর স্বদেশি। তিনি খেলেন ডাচ ক্লাব আয়াক্স আমস্টারডামে। গত বছর কাতার বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করে নজর কাড়েন। আতসুকে দেখে অনেক কিছু শিখেছেন কুদুস, প্রায়ই নিতেন জাতীয় দলের পূর্বসূরির পরামর্শ। অর্থাৎ তাদের মধ্যে ছিল হৃদ্যতার সম্পর্ক। তাই আতসুর মতো কাছের একজন মানুষের এমন করুণ মৃত্যু ভীষণভাবে ছুঁয়ে গেছে কুদুসকে।

গত রোববার ডাচ শীর্ষ লিগে নিজেদের মাঠে স্পার্তা রতার্দামকে ৪-০ গোলে হারায় আয়াক্স। ম্যাচের ৮৪তম মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে গোল করেন কুদুস। এরপর আতসুকে স্মরণ করে জার্সি উঠিয়ে উদযাপন করেন। সেসময় তাকে হলুদ কার্ড না দেখানোয় রেফারি ফন বোকেলকে ম্যাচের পর ধন্যবাদ জানান কুদুস। আমেরিকান গণমাধ্যম ইএসপিএনকে তিনি বলেন, 'এটা ফুটবলের নিয়মের চেয়ে বড়, এটা জীবন ও মরণের ব্যাপার। রেফারি বলেছিলেন যে এটার (জার্সি উঠিয়ে উদযাপন) অনুমোদন নেই, কিন্তু তিনি পরিস্থিতিটা বুঝেছিলেন। সেজন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ এবং আমি তাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করি।'

গোল না করলেও ম্যাচশেষে 'শান্তিতে বিশ্রাম নাও আতসু' লেখা ওই গেঞ্জি সবাইকে দেখানোর পরিকল্পনা ছিল কুদুসের, 'এটা (ফ্রি-কিক থেকে পাওয়া গোলটি) ক্রিস্টিয়ানের জন্য। সবাই জানে যে তুরস্কে কী ঘটেছে। আমি এমনটা করেছি কারণ, তিনি আমার অনেক প্রিয়। যাদের পরিবার আক্রান্ত হয়েছে, তাদের সবার জন্য এটা স্বাভাবিক। আমি তাকে দেখে অনেক কিছু শিখেছি, তিনি নিয়মিত অনেক উপদেশ দিতেন আমাকে। আমি আজ (রোববার) যা কিছু করেছি সবই তার জন্য। যদি আমি গোল না করতাম, তাহলে ম্যাচের পর (ভেতরে থাকা) গেঞ্জিটা দেখাতাম।'

গত ৬ ফেব্রুয়ারি ৭.৮ ও ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক ও সিরিয়া। এতে কয়েক হাজার ভবন ধসে পড়ে। এখন পর্যন্ত ৪৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন আতসু। একবার তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধারের খবর পাওয়া গিয়েছিল। পরে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। অবশেষে ভূমিকম্পের প্রায় দুই সপ্তাহ পর পাওয়া যায় তার মৃতদেহ।

Comments

The Daily Star  | English
Reforms vs election

Reforms vs election: A distracting debate

Those who place the election above reforms undervalue the vital need for the latter.

11h ago